প্রতীকী ছবি।
ষোলো বছরের মেয়েটি পরিষ্কার জানায় যে, সে স্বেচ্ছায় ছেলেটির সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। সে ছেলেটিকে ভালবাসে। কিন্তু মেয়েটির পরিবার সেই ইচ্ছাকে গুরুত্ব না-দিয়ে ছেলেটির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিল। যার জেরে ছেলেটির বিরুদ্ধে পকসো আইনে (দ্য প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট, ২০১২) মামলা শুরু হয়। আইনের চোখে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত হয় ছেলেটি।
কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এমন অজস্র ঘটনা নিয়মিত রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনে আসছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। যেখানে বয়ঃসন্ধিতে দাঁড়ানো কোনও মেয়ে স্বেচ্ছায় সম্পর্ক স্থাপন করলেও সংশ্লিষ্ট ছেলেটির বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রেই পকসো আইনে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। ফলে ছেলেটির গায়ে অপরাধী তকমা লাগছে। এই পরিস্থিতিতে পকসো আইনে ‘বয়ঃসন্ধির যৌনতা’ ধারাটিকে ‘ডি-ক্রিমিনালাইজ়’ বা অপরাধ-বিযুক্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে এ বিষয়ে একটি আন্তঃরাজ্য আলোচনা হওয়ার কথা। সেখানে রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের তরফে এই প্রস্তাবটি রাখা হবে। যেখানে কমিশন মনে করছে যে, এক জন ষোলো বছরের মেয়ে বা ছেলে প্রেম করছে বা পরস্পরকে চুমু খাচ্ছে মানেই তা অপরাধ নয়।
কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী জানান, ১৮ বছরের নীচে যে হেতু কারও ‘কনসেন্ট’ বা ‘সম্মতি’ আইনগত ভাবে গ্রাহ্য হয় না, তাই অনেক সময়ে মেয়েটি নিজের ইচ্ছায় সম্পর্কে জড়ানোর কথা বললেও তা অর্থহীন হয়ে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাস্তবকে অস্বীকার করা অনুচিত বলেই মনে করছেন তিনি। কারণ, বয়ঃসন্ধিতে দাঁড়িয়ে অনেকেই প্রেমে পড়ে, সম্পর্ক তৈরি হয়। সেখানে সেই সম্পর্ককে অপরাধের আওতায় আনার যুক্তি রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে ভেবে দেখা উচিত বলে মনে করছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন।
অনন্যাদেবীর কথায়, ‘‘একটি ঘটনায় পাঁচ বছরের বাচ্চাকে দশ জন ধর্ষণ করেছে, অন্য ঘটনায় ষোলো বছরের একটি মেয়ে স্বেচ্ছায় তার প্রেমিককে চুমু খেয়েছে, দুটোর গুরুত্ব বা অভিঘাত এক নয়। ফলে আন্তঃরাজ্য আলোচনায় আমাদের তরফে এটাই বলা হবে যে, বয়ঃসন্ধির যৌনতাকে অপরাধের আওতা থেকে বার করে আনা এবং পকসো আইন থেকে বিযুক্ত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ‘সম্মতি’ বা ‘এজ অব কনসেন্ট’-কে আমরা ষোলোয় নামিয়ে আনারও প্রস্তাব দেব।’’ যদিও একই সঙ্গে কমিশন জানিয়েছে, এ ব্যাপারে প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্কতা জরুরি। কোথাও যাতে কোনও ফাঁক না থাকে এবং সেই ফাঁক গলে এক জন অপরাধীও যাতে বেরোতে না পারে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া দরকার।
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, নির্ভয়া-কাণ্ডের আগে যৌন অপরাধ সম্পর্কিত আইনের ধারায় সম্মতির বয়স ষোলো বছরই ছিল। অর্থাৎ, ষোলো বছরের থেকে বড় কোনও মেয়ে যদি এটা বলত যে তার ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে, তা হলে সেটাকে ধর্ষণ বা যৌন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হত না। কিন্তু পকসো আইনে তা নয়। এক আইনজীবীর কথায়, ‘‘নির্ভয়া-কাণ্ডের পরে কিন্তু যাবতীয় যৌন অপরাধ সম্পর্কিত আইনেই সংশোধন করা হয়েছিল। তার যথেষ্ট কারণ ছিল। ফলে সেখানে কোনও পরিবর্তন বা প্রস্তাবের ক্ষেত্রে সব দিক দেখে পদক্ষেপ করা উচিত।’’ আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল জানান, শাস্তির মাত্রাভেদ হলেও পকসো আইনে ১৮ বছরের কম বা বেশি বয়সি কারও বিরুদ্ধেই যৌনতা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘ধরা যাক, অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোনও নাবালিকাকে নিয়ে কেউ পালিয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে শুধু পকসো আইনেই নয়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নাবালক বা প্রাপ্তবয়স্ক যা-ই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩ ধারায় মামলা হবে। কে অপরাধী আর কে নয়, এ ক্ষেত্রে তা নির্ণয়ে তদন্তের দিকটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আইনের পরিবর্তনের পাশাপাশি তাই সে দিকেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy