অজয় এডওয়ার্ড। ফাইল চিত্র।
মহাজোট ঘোষণা হয়েছে ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। তার মধ্যেই ‘ফাটল’ প্রকাশ্যে চলে এল। জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে বেরিয়ে একটি আসনে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী ঘোষণা করে দিল হামরো পার্টি। দলের প্রধান অজয় এডওয়ার্ড এ নিয়ে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করার পর থেকেই জল্পনা শুরু গিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের জন্য বাকি জোট শরিকেরা কটাক্ষ করতে শুরু করেছে হামরোকে। অজয়ের অবশ্য বক্তব্য, তাঁর দল জোটের সঙ্গেই রয়েছে।
পাহা়ড়ে বিজেপির উদ্যোগে এক ছাতার তলায় এসেছে বিমল গুরুঙের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টি-সহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল। সেই মহাজোটের নাম দেওয়া হয় ‘ইউনাইটেড (সংযুক্ত) গোর্খা মঞ্চ’। রবিবার দার্জিলিঙের জিমখানা ক্লাবে বৈঠকের পর জোটের ঘোষণা করা হয়। স্থির হয়, কোনও এলাকায় জোটের যে দলের প্রতিনিধির বেশি গুরুত্ব রয়েছে, দলমত নির্বিশেষে সেই ব্যক্তিই ওই এলাকা থেকে নির্বাচনে লড়বেন। পাশাপাশিই, বিজেপি ছাড়া বাকি কোনও দলের প্রার্থীরা নিজেদের চিহ্নে লড়বেন না। ল়ড়বেন সংযুক্ত গোর্খা মঞ্চের নাম-প্রতীকে। এর পর সোমবারই সিংমারি এলাকায় প্রার্থীর নাম করে দেয় হামরো। তা নিয়ে অজয়কে বিঁধতে শুরু করেছেন জোট সঙ্গীরা। গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফন্টের নেতা নীরজ জিম্বা বলেন, ‘‘অজয় এডওয়ার্ড বাচ্চা নয় ঠিকই। কিন্তু দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ। রাজনীতি নিয়ে এখনও তাঁর কোন সম্যক ধারণা নেই। এটা ভুল করেছে। এটার জন্য তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রার্থী বাতিল করতে হবে তাঁকে। বিমল গুরুং থেকে রাজু বিস্তা সকলেই এই বিষয়ে জানেন। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি।’’
পাল্টা হামরো প্রধান আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘যে এলাকা থেকে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে, সেটা সিংমারি এলাকা। ওই এলাকায় মহাজোটের অন্য কোনও দলের প্রার্থী নেই। আর এই মনোনয়ন একটা উদাহরণ হিসাবে ধরতে পারেন। কারণ মনোনয়ন জমা দিতে কী প্রয়োজন আর কী নয়, তা বিস্তারিত জানার জন্যই এটা করা হয়েছে। মহাজোটের বাকি দলগুলির চিন্তার কোন কারণ নেই। হামরো পার্টি ইউনাইটেড গোর্খা মঞ্চের সঙ্গেই রয়েছে। এটা একটা উদাহরণস্বরূপ মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়েছে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে।’’ অজয়ের আরও দাবি, সিংমারি এলাকায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অফিস রয়েছে। মোর্চা প্রধান বিমলের গুরুংয়ের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে মোর্চার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। এখনই এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য নয়।’’ অজয় যে জোট নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রার্থী দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইউনাইটেড গোর্খা মঞ্চের মুখপাত্র নোমন রাই। তিনি বলেন বলেন, ‘‘মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরেও প্রত্যাহারের সময় থাকে। সব দল মিলে বৈঠক করে যাঁদের প্রত্যাহার করতে বলবে, তাঁরা প্রত্যাহার করবে। তবে আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই অজয় প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। তবে প্রত্যাহারের সময়ও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।’’
দীর্ঘ ২ দশক পর পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোট হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সেই ঘোষণার পর থেকেই বিরোধী দলগুলির মধ্যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছিল। শুক্রবার বিকেলে অজয় এবং বিমলের মধ্যে বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকে জোটের কথাও বলা হয়। ২ দলের তরফে জানানো হয়, পাহাড়ে ‘দুর্নীতিমুক্ত’, ‘উন্নয়নমুখী’ কাজের জন্য জোট গড়া হচ্ছে। এর পর শনিবার সকাল থেকে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার বাড়িতেও পাহাড়ের ছোট ছোট আঞ্চলিক দলগুলির বৈঠক বসে। পরে রাতে সাংসদের বাড়িতে নৈশভোজে অজয় এবং বিমলও যোগ দেন। মিনিট কুড়ি পর সেখান থেকে বেরিয়ে যান অজয়। মোর্চা সূত্রে খবর, তার পরেও দীর্ঘ ক্ষণ রাজু এবং বিমলের মধ্যে বৈঠক চলে। এর পর রবিবারই পাহাড়ে মহাজোট আত্মপ্রকাশ করে।
মহাজোটে বিজেপি, মোর্চা, হামরো ছাড়াও রয়েছে জিএনএলএফ, সিপিআরএম, অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ। পাহাড়ের রাজনীতির বৃত্তে যাঁরা ঘোরাফেরা করেন, তাঁদের একাংশের দাবি, আসলে আসন্ন লোকসভা ভোটকে নজরে রেখেই জোট গড়তে উদ্যোগী হয়েছিল বিজেপি। পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে তার সলতে পাকানো। কিন্তু যাত্রার শুরুতেই হোঁচট খাওয়ায় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে জোটের অন্দরে। এ ব্যাপারে রাজুর সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy