Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Jagdeep Dhankhar

হঠাৎ রাজধানীতে সন্তোষ-সাক্ষাৎ, আবার বিতর্কে রাজ্যপাল ধনখড়

যে কারও সঙ্গেই বৈঠক বা সাক্ষাৎ হলে ছবি টুইট করতে পারঙ্গম তিনি। কিন্তু সন্তোষের সঙ্গে কোনও ছবি রাজ্যপালের টুইটার হ্যান্ডলে দেখা যায়নি।

বাড়ি বয়ে গিয়ে বিজেপি নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ রাজ্যপালের। —ফাইল চিত্র।

বাড়ি বয়ে গিয়ে বিজেপি নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ রাজ্যপালের। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ২১:০৯
Share: Save:

দিল্লিযাত্রার ঘোষিত কর্মসূচি ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ। সে সাক্ষাৎ হয়েছে বটে। কিন্তু রাজধানীতে একটি ‘ সৌজন্য সাক্ষাৎ’-এর সৌজন্যে আবার বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। শনিবার দিল্লি পৌঁছে প্রথমেই অমিতের বাড়িতে গিয়েছিলেন ধনখড়। কিন্তু তখন অমিতের সাক্ষাৎ পাননি তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে ধনখড় সটান হাজির হন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষের বাড়িতে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে আবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাড়িতে যান বাংলার রাজ্যপাল। সেই সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে তুলোধনা করেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপি-র অন্যতম শীর্ষ পদাধিকারীর বাড়িতে তাঁর সফর নিয়ে। একটি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে তিনি তা করতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলাও শুরু হয়ে গিয়েছে। কারণ, রাজ্যপালের পদটি ‘অরাজনৈতিক’।

এমনিতেই পশ্চিমবাংলার নানা ব্যাপারে মন্তব্য করে থাকেন ধনখড়। রাজনৈতিক গোলযোগ হলে সরাসরি ক্ষমা চাইতে বলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকেও! যার সূত্রে তাঁর চূড়ান্ত বিরোধিতা করতে শুরু করেছে তৃণমূল। শাসক শিবির থেকে অহরহ বলা হচ্ছে, ধনখড় সরাসরি বিজেপি-র হয়ে কাজ করছেন। বস্তুত, মূলত সেই কারণেই ধনখড়কে রাজ্যপালের পদ থেকে সরানোর আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিও লিখেছে তারা। সেই আবহেই খনখড় দিল্লিতে বাড়ি বয়ে গিয়ে সন্তোষের সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যপালের মতো একটি ‘অরাজনৈতিক’ পদে থেকে কোনও রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতার সঙ্গে কী ভাবে দেখা করেন তিনি! রাজ্যপাল অবশ্য যথারীতি ওই সাক্ষাৎকারকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলেই বর্ণনা করেছেন। যে কারও সঙ্গেই বৈঠক বা সাক্ষাৎ হলে অত্যন্ত দ্রুততায় ছবি টুইট করতে পারঙ্গম (সে সাক্ষাৎ যদি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অসুস্থ, অশক্ত এবং রোগশয্যায় শায়িত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে হয়, তা হলেও)। ফলে রাজ্যপাল যথারীতি অমিতের সঙ্গে বৈঠকের ছবিও টুইট করেছেন। কিন্তু সন্তোষের সঙ্গে বৈঠকের কোনও ছবি তাঁর টুইটার হ্যান্ডলে দেখা যায়নি।

ঘটনাচক্রে, ৭২ ঘন্টা আগেই রাজভবনে আচমকা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় একঘন্টা রাজভবনে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যে খানিকটা সময় তাঁদের একান্তে কথা হয়েছিল বলেও খবর। কিন্তু উভয় তরফ ওই সাক্ষাৎকেও ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলেই অভিহিত করেছিল। তার পরেই ধনখড়ের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক জল্পনা তৈরি হয়েছিল। রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছিলেন, তিনি কোনও ‘বার্তা’ নিয়ে যাচ্ছেন। যদিও রাজভবন এবং নবান্ন— উভয় সূত্রেই সেই সম্ভাবনা বা জল্পনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এসবই ‘অলীক কল্পনাপ্রসূত’।

আরও পড়ুন: নিজের ঢাকে নিজেই কাঠি, ‘অবাঙালিত্ব’ মুছতে কৈলাসের ঢাক কা নিনাদ​

অমিতের সঙ্গে সাক্ষাতের শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল জানান, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নানা উদ্বেগজনক ঘটনা সম্পর্কে শাহকে অবগত করেছেন। তিনি একেবারেই কোনও রাজনৈতিক দল-ঘেঁষা নন। কোন দল কী করছে, তা নিয়ে আগ্রহও নেই তাঁর। বরং রাজ্যের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা এবং রাজ্যবাসীর নানাবিধ সমস্যা নিয়েই উদ্বিগ্ন তিনি। দিল্লিতে বসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একহাত নিয়ে ধনখড় বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা বিপদের মুখে। আল কায়দা ক্রমশই সেখানে জাল বিস্তার করছে। বোমা বাঁধা, বেআইনি কাজকর্মের ঘটনা বেড়েই চলেছে। আমি জানতে চাই, রাজ্য প্রশাসন কী করছে।’’ রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ডিজিপি-র অবস্থান ঠিক কী, তা আর কারও জানতে বাকি নেই। তাই আমি বলি, বাংলার পুলিশ রাজনীতিকদের দলদাসে পরিণত হয়েছে।’’ রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘নির্বাচনী হিংসা এবং ভোটাধিকার লঙ্ঘনের জন্যই পশ্চিমবঙ্গ পরিচিত। যত শীঘ্র সম্ভব সেই ভাবমূর্তি শোধরাতে হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘২০২১ পশ্চিমবঙ্গের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। এ বছর বিধানসভা নির্বাচন সেখানে। নিজেদের ভাবমূর্তি শোধরানোর এটাই একটা বড় সুযোগ। কারণ, এ যাবত নির্বাচন মানেই হিংসা, ভোটাধিকারের সঙ্গে আপস এবং আমলা এবং পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকা। তার জন্যই পরিচিত পশ্চিমবঙ্গ।’’

আরও পড়ুন: আসানসোলে পুর প্রশাসক পদে অমরনাথ, সাহায্যের আশ্বাস জিতেন্দ্রর​

২০১৯ সালে বাংলার দায়িত্বে আসার পর থেকেই নানা বিষয়ে মমতার সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন রাজ্যপাল ধনখড়। বার বার অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এমনকি, ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্য সরকার তাঁকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করে না বলেও অভিযোগ করেছেন। যদিও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের মতো সাংবিধানিক পদাধিকারীর মতামত নেওয়া ‘বাধ্যতামূলক’ নয় বলে পাল্টা দাবি করেছে রাজ্য সরকার। বরং তাদের অভিযোগ, রাজ্যপাল নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে প্রশাসনিক কাজে নাক গলাচ্ছেন। গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে রাজ্যপালের দহরম মহরমের কথা মাথায় রেখে রাজভবন ক্রমশ বিজেপি-র পার্টি অফিসে পরিণত হচ্ছে বলেও কটাক্ষ উড়ে এসেছিল শাসক শিবির থেকে। সন্তোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সেই বিতর্কেই আরও উস্কে দিলেন ধনখড়। পাশাপাশি আরও যা বললেন, কাকতালীয় ভাবেই, তার সঙ্গে আশ্চর্য মিল পাওয়া গিয়েছে বিজেপি-র রাজনৈতিক লাইনের। যখন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতাদের বাংলায় ‘বহিরাগত’ বলে যে ভাবে রাজনৈতিক আক্রমণ করছে তৃণমূল, তার প্রতিবাদ করে ধনখড় বলেছেন, ‘‘ভারতমাতার সন্তানদের বহিরাগত বলে কটাক্ষ করা হচ্ছে! পশ্চিমবঙ্গে প্রতিনিয়ত সাংবিধানিক নীতিনিয়ম লঙ্ঘিত হতে দেখে আমি অত্যন্ত আহত। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নন বলেই মা ভারতীর সন্তানদের সেখানে বহিরাগত বলা হচ্ছে। আমার সবাই ভারতমাতার সন্তান। ঐক্যে বিশ্বাসী আমরা। এই ভূখণ্ডে বসবাসকারী কাউকে কোনও রাজ্যে বহিরাগত বলা যাবে না।’’

ধনখড়-সন্তোষ ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নিয়ে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শনিবার বলেন, ‘‘আসলে উনি তো নিজে একজন রাজনৈতিক নেতা। ওঁর আচরণ যখন বিজেপি নেতাদের মতো, তখন উনি গিয়ে বিজেপি-র নেতাদের সঙ্গেই দেখা করবেন। সেটাই তো স্বাভাবিক! বি এল সন্তোষের কাছে গিয়ে শলাপরামর্শ করবেন। অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে রিপোর্ট দেবেন নাকি কোনও নির্দেশ নেবেন, তা নিয়েও আমাদের মনে সন্দেহ আছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jagdeep Dhankhar BL Santhosh Amit Shah TMC BJP Mamata Banerjee West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy