— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সেনাবাহিনীর আপত্তিতে বছর সাতেক আগে জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর মোমিনপুর স্টেশন নির্মাণ ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। যে কোনও মেট্রো প্রকল্পে যেখানে এক কিলোমিটারের মধ্যে স্টেশন থাকার কথা, সেখানে ওই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বাদ রেখেই মাঝেরহাটের পরে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে খিদিরপুরে পরবর্তী স্টেশন তৈরির কথা ভাবা হয়েছিল। মাঝে মোমিনপুর স্টেশন তৈরির জমি না মেলায় ওই প্রকল্পের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হতে বসেছিল। সেই সময়ে বডিগার্ড লাইন্সের জমিতে মোমিনপুর স্টেশন তৈরির প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছিলেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা। পরে অবশ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ডায়মন্ড হারবার রোড লাগোয়া জমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ায় সমস্যা মেটে।
জোকা থেকে মাঝেরহাট পর্যন্ত অংশের নির্মাণ সম্পূর্ণ। মোমিনপুর থেকে ওই মেট্রো সুড়ঙ্গপথে ঢুকবে। সুড়ঙ্গ নির্মাণের জন্য টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম)-সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি নামাতে ব্যবহার করা হবে সেন্ট টমাস স্কুলের জমি। মোমিনপুর স্টেশনের অনেকটা অংশও সেখানে পড়ছে। তুলনায় আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের মাত্র ১০৯২ বর্গমিটার জমি পাকাপাকি ভাবে মেট্রো প্রকল্পের জন্য লাগছে। ওই অংশে মেট্রোর একটি ভেন্টিলেশন শ্যাফট এবং যাতায়াতের পথ তৈরি হওয়ার কথা।
এ ছাড়া, পানীয় জলের লাইন, নিকাশির লাইন ও রাস্তা-সহ বেশ কিছু পরিকাঠামোগত বদলের জন্য সাময়িক ভাবে ১৭০২ বর্গমিটার জমির প্রয়োজন হবে। কী ভাবে ওই সব পরিকাঠামো সরিয়ে মেট্রোপথ নির্মাণ করা যাবে, তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসন এবং কলকাতা পুলিশের সঙ্গে মেট্রোর নির্মাণ সংস্থার ২০২০ সাল থেকে একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। পরে সিইএসসি, পূর্ত দফতর, কলকাতা পুরসভা, কেইআইআইপি এবং কলকাতা পুলিশ-সহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়। তাতে ঠিক হয়, বডিগার্ড লাইন্সের জমির ভিতরের সীমানা পাঁচিল সরাবে মেট্রো। এর পরে সশস্ত্র পুলিশের কাছে ওই বছরেরই মে মাসে কাজ শুরুর অনুমতি চাওয়া হয়। পুলিশ এবং মেট্রোর নির্মাণ সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের মধ্যে একাধিক আলোচনার পরে স্থির হয়, ওই অংশে সশস্ত্র পুলিশের ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ব্যারাক এবং একটি সুইপার ব্যারাক ভেঙে যথাক্রমে সাত এবং বারোতলা দু’টি বহুতল তৈরি করা হবে। তিন নম্বর ব্যারাক ভেঙে বহুতলের পরিসর বার করে কাজ শুরু করা হবে। আবাসন তৈরি হলে আবাসিকদের সেখানে সরিয়ে পরের কাজ হবে। এর পরে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্যারাক সরানোর অনুমতি চেয়ে নগরপাল রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে স্থির হয়, ওই পরিসরে পুরসভার কর্মীদের যে সমস্ত আবাসন রয়েছে, সেগুলি পুরসভাই পরে তৈরি করে দেবে। খরচ দেবে মেট্রোর নির্মাণকারী সংস্থা।
গত জুলাইয়ে মেট্রো পুরসভাকে ৩.৬৫ কোটি টাকা দেয়। মে মাসে পুর কর্তৃপক্ষকে নির্মাণ এলাকায় জলের পাইপলাইন সরাতে ৪৫ কোটি টাকা দেয় নির্মাণ সংস্থা। বডিগার্ড লাইন্সের নিকাশির লাইন সরাতে ধার্য ৩৫ কোটির মধ্যে আরও ১২ কোটি টাকা ওই সময়ে দেওয়া হয়। জল ও নিকাশির লাইন সরানো-সহ নানাবিধ কাজের জন্য পুরসভাকে এ পর্যন্ত ৬০.৬৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় প্রকল্পের কাজ থমকে গেলে তা নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে বলে মনে করছেন মেট্রোর আধিকারিকেরা।
এখন সার্বিক আলোচনার ভিত্তিতেই ওই প্রকল্পের শেষ অংশের কাজ শুরু করার তোড়জোড় চলছে। রাজ্যের স্বার্থেই বাকি পথটুকুর দ্রুত নির্মাণ হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন মেট্রোর আধিকারিকদের একাংশ। যে বডিগার্ড লাইন্সের জমি নিয়ে সম্প্রতি এত বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই জমি যে রাজ্য প্রশাসনের কর্তারাই এক সময়ে প্রকল্পের স্বার্থে দিতে চেয়েছিলেন, সেই সহায়তার মনোভাবের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ। নানা সমস্যার মধ্যেও প্রকল্পের জট কাটাতে রাজ্য প্রশাসনের সহায়তা মিলেছে। এ বারও সে ভাবেই জটিলতার অবসান চান মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy