প্রতীকী ছবি।
গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে এখনও পর্যন্ত যত বিজেপি কর্মী রাজনৈতিক হিংসায় প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের এক জন করে সদস্যের কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরির জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন রাজ্য নেতৃত্ব। আবেদন করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক মন্ত্রীর কাছেও। কিন্তু সেই অনুরোধ কেউ রাখেননি। এই নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে।
বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, গত পঞ্চায়েত ভোট থেকে এখনও পর্যন্ত ১৭৩ জন দলীয় কর্মী রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বলি হয়েছেন। রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেই নিহত কর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়াননি বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে দলের জেলা এবং মণ্ডল স্তর থেকে। দলের কর্মীদের ক্ষোভের আঁচ বিভিন্ন সময়ে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমেও। বিধানসভা ভোটের পরে যে সব বিজেপি কর্মী রাজনৈতিক হিংসায় নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারগুলিকে অবশ্য কয়েক মাস আগে দলের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, সেটুকুই যথেষ্ট বলে মনে করছেন না রাজ্য নেতৃত্ব। বিজেপির একটি সূত্রের বক্তব্য, দলের ওই নিহতদের পরিবারপিছু এক জনকে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও না কোনও দফতরে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য বহু বার আর্জি জানানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং মন্ত্রীদের কাছে। কিন্তু কারও চাকরি হয়নি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যকে বলে দেওয়া হয়েছে, এই ভাবে সুপারিশের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারে কোনও চাকরি হবে না। কারণ নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত করে তুলেছেন। কিছু দিন আগে ইজ়েডসিসি-তে বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্বীকার করেছিলেন, যাঁরা দলের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে চাকরি দেওয়া যায়নি। এই প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির এক নেতার মন্তব্য, “যাঁর বাড়ির কেউ আমাদের দল করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন, তাঁদের এই সব নীতির দোহাই দিয়ে কী লাভ? তাঁদের অনেকের পরিবারে রোজগার করার আর কোনও লোক নেই। বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। যাঁদের প্রাণের বিনিময়ে আজ আমরা রাজ্যে একমাত্র এবং প্রধান বিরোধী দল হয়েছি, তাঁরা কী পেলেন?”
বস্তুত, বিধানসভা ভোটে ২০০ আসন জয়ের হুঙ্কার দিয়ে শেষ পর্যন্ত ৭৭ আসনে খেলা শেষ করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কৌশলকেই দায়ী বলে মনে করেন রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের অভিমত, ভোটের আগে শেষ মুহূর্তে তৃণমূল-সহ অন্য দল থেকে নেতা, জনপ্রতিনিধি ও চলচ্চিত্র জগৎ থেকে তারকাদের যোগদান করানো এবং তাঁদের অনেককেই প্রার্থী করায় ভরাডুবি হয়েছে। এই গুরুত্বটা দলের পুরনো কর্মীদের প্রাপ্য ছিল। কারণ, তাঁরা মারের মুখে দাঁড়িয়ে বিজেপি করেছেন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ওই কর্মীরাই দলকে ১৮টি আসন জিতিয়েছেন। অথচ, তাঁদের জুটেছে বঞ্চনা। দলের ‘শহিদ’দের পরিবারের লোকেদের চাকরি না দেওয়াকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ‘অমানবিকতা’ বলে মনে করছেন রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ। রাজ্যে তৃণমূল বা অন্য দলের কেউ দুর্ঘটনা বা সন্ত্রাসের শিকার হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পরিবারের এক জনকে চাকরি দেন, এই উদাহরণও দলের অন্দরে তুলে ধরেছেন বিজেপির রাজ্য নেতাদের অনেকে।
প্রকাশ্যে অবশ্য বিজেপির কোনও নেতা এ বিষয়ে কিছু বলছেন না। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “দল সাধ্যমতো শহিদদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। শহিদদের পরিবারগুলি যাতে স্বনির্ভর থাকতে পারে, তার চেষ্টাও চলছে। এর বেশি কিছু জনসমক্ষে আনা সম্ভব নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy