ধাপায় প্লাস্টিকের স্তূপ। ফাইল চিত্র
প্রতি দিন গড়ে ৪২৬ টন। অর্থাৎ মাসে ১২,৭৮০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ধাপায় জড়ো হয় বলে কেন্দ্রীয় দূষণ নিযন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে। এর জেরে অদূর ভবিষ্যতে ওই এলাকার জলস্তর নেমে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। তাঁদের ব্যাখ্যা, ওই এলাকায় মাটির উপরে প্লাস্টিকের আস্তরণ তৈরি হয়েছে। সেই আস্তরণ বৃষ্টির জলকে মাটির নীচে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। ধারাবাহিক ভাবে এই ঘটনা ঘটতে থাকায় এলাকার জলস্তর নামার আশঙ্কা বাড়ছে।
আইআইটি, রুরকির ‘পলিমার অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের শিক্ষক অভিজিৎ মাইতি বলেন, ‘‘ধাপায় যে ভাবে প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক জমা হচ্ছে, তাতে সেখানে ভবিষ্যতে জলস্তর নেমে যেতে পারে। কারণ, প্লাস্টিক অভেদ্য। তা ভেদ করে জল প্রবেশ করতে পারবে না মাটিতে। বৃষ্টির জল কোনও জায়গায় দীর্ঘ সময় ঢুকতে না পারলে স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে জলস্তর নেমে যেতে পারে।’’ একই আশঙ্কা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পলিমার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ বিভাগের শিক্ষক সমিত কুমার রায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘শুধু ধাপাই নয়, যেখানেই প্লাস্টিকের ব্যাগ স্তূপীকৃত হয়ে জমা হয়, সেখানেই জলস্তর নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শুধুমাত্র নিকাশি নালা বন্ধ করার ক্ষেত্রেই নয়, জলস্তর নামার ক্ষেত্রেও প্লাস্টিকের বড় ভূমিকা রয়েছে।’’ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন যে, কোনও এলাকার জলস্তর নামবে কি না, তা নির্ভর করছে প্লাস্টিকের বর্জ্য কতটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তার উপরে। সে কারণে ধাপাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা বেশি।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক শুভাশিস দাসের কথায়, ‘‘প্লাস্টিকের কারণে উন্মুক্ত জলস্তর নেমে গেলে এলাকায় চাষবাসের জলের সমস্যা দেখা দেবে। যে সমস্ত গাছের শিকড় ওই স্তর পর্যন্ত গেলে জল পেত, জলস্তর নেমে যাওয়ায় তারা তা পাবে না। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার গাছও মারা যেতে পারে।’’
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, শহরে রোজ যত জঞ্জাল উৎপন্ন হয়, তার ১০ শতাংশই প্লাস্টিক বর্জ্য। ধাপায় বর্জ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমছে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ এবং দুধের পাউচ। প্লাস্টিকের কী-কী বর্জ্য সেখানে জমা হয়, তারও ভাগ করা হয়েছে পর্ষদের তরফে। দেখা যাচ্ছে যে, ওই বর্জ্যে পানীয় জলের বোতল, নরম পানীয়ের বোতল, ফিল্ম, পাইপ, তার, পাত, কাপ, গ্লাস, চামচ, ট্রে, ক্যাসেট বক্স, সিডি কভার, হেলমেট, এমনকি জুতোর সোলও রয়েছে।
কলকাতা পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, একটি বড় লরি সর্বাধিক ৭ টনের জঞ্জাল বহন করতে পারে। সে দিক থেকে দেখলে ধাপায় শুধু প্লাস্টিক-বর্জ্য সরাতে এমন ৬০টি লরি রোজ কাজে লাগাতে হবে! এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায় যখন সেই জঞ্জালে আগুন ধরানো হয়। প্লাস্টিক পুড়ে বায়ুর দূষণ মারাত্মক ভাবে বেড়ে যায়!’’
ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিডিয়াম রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টিং-এর বিজ্ঞানী, উপল সাহা বলেন, ‘‘প্লাস্টিক পোড়ালে শুধু কার্বন নিঃসরণ হয় তাই নয়, সালফার-ডাই-অক্সাইড, ডাইঅক্সিন-সহ ক্ষতিকর রাসায়নিকও নির্গত হয়। যা চোখ, শ্বাসযন্ত্র, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। প্লাস্টিক-বর্জ্যের ধোঁয়া ক্রমাগত ফুসফুসে ঢুকতে থাকলে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy