Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Sandeshkhali

ভরা বসন্তেই জলসঙ্কট তীব্র হচ্ছে সন্দেশখালিতে

সন্দেশখালি পঞ্চায়েত এলাকার ৮ নম্বর কাছারিপাড়া ও ঘোলাপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জলের ট্যাপকল বসিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। একটিতেও জল পড়ছে না।

Representative Image

—প্রতীকী ছবি।

নবেন্দু ঘোষ 
সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩৫
Share: Save:

গরম পড়লেই গোটা এলাকা যেন চাতক পাখি। জল চেয়ে বসে থাকেন সবাই। কিন্তু মেলে কই?

এমনই অবস্থা সন্দেশখালির অধিকাংশ এলাকার। অথচ গ্রামে গ্রামে ঘুরলে চোখে পড়বে নলকূপ। তাকে ঘিরে সিমেন্টে বাঁধানো চত্বর। তবু গরম পড়লে জলের জন্য হাহাকার এখানে অনেক দিনের। এলাকার মানুষজন বলছেন, যে সব বিষয়ে ক্ষোভ রয়েছে এখানে, জল তার অন্যতম। যদিও প্রশাসনের তরফে ক’দিন ধরে নতুন করে পানীয় জলের নলকূপ বসানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। এ বার পরিস্থিতি ততটা খারাপ হবে না বলেই আশ্বাস দিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা।

কিন্তু নলকূপ কি নেই এলাকায়? আছে। বিভিন্ন পাড়ায় গেলেই গ্রামবাসীরা অভিযোগ তোলেন, সেই কলে জল নেই। সামান্য গরম পড়লেই নলকূপ অকেজো হওয়াটাও নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্য দিকে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে অনেক বাড়িতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জলের সংযোগ দেওয়া হলেও তাতে জল আসে না বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে গ্রামবাসীদের একাংশ জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। যাঁদের আর্থিক ক্ষমতা নেই, তাঁরা অনেক পথ পেরিয়ে দূরের কল থেকে জল আনছেন। গ্রামে গ্রামে নলকূপ বসানোর কাজ চললেও গরমে ক’টি সচল থাকবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন গ্রামবাসীদের অনেকে। কারও কারও মনে হচ্ছে, আন্দোলনের জেরেই এ বার তড়িঘড়ি নলকূপ বসাতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। এই তৎপরতা বিগত বছরগুলিতে দেখা যায়নি বলে তাঁদের দাবি।

জলসঙ্কটের কথা মেনে নিয়ে সন্দেশখালি ২-এর বিডিও অরুণকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘বিভিন্ন পাড়ায় পানীয় জলের কষ্ট কমাতে নলকূপ বসানো চলছে।’’ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের হাসনাবাদ জ়োনের সহকারী বাস্তুকার অনীশরঞ্জন ঘোষ বলেন, ‘‘এই ব্লকের অনেক বাড়িতে নলবাহিত জল পৌঁছে গিয়েছে। যে সব জায়গায় এখনও যায়নি, ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পে সেই সব জায়গায় জল পৌঁছে দিতে পরিকাঠামো তৈরি চলছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’’

সন্দেশখালি পঞ্চায়েত এলাকার ৮ নম্বর কাছারিপাড়া ও ঘোলাপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জলের ট্যাপকল বসিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। একটিতেও জল পড়ছে না। গ্রামের একটি সরকারি নলকূপ দেখিয়ে স্থানীয়েরা জানান, এক মাস ধরে এই কলে জল উঠছে না। শিবানী বেরা নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন ভিন রাজ্যে। পানীয় জল এখন কিনে খেতে হচ্ছে। বাড়িতে ট্যাপকল বসিয়ে দিয়ে গিয়েছে এক বছর হল। কোনও দিন জল পড়ে না।’’

৮ নম্বর কাছারি পাড়ার বাসিন্দা তন্ময় প্রামাণিক জানান, এক বার বাড়িতে কেনা জল ফুরিয়ে যাওয়ায় পুকুরের জল খেতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু সেই জল ফুটিয়ে খেয়েও তিনি এবং বাবা-মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে, ওই পঞ্চায়েতের সর্বত্র জলসঙ্কট এত তীব্র নয়। কিছু বাড়িতে পানীয় জল যাচ্ছে। প্রয়োজনে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন অন্য এলাকার বাসিন্দারা।

বেড়মজুর ১ পঞ্চায়েতের কাছারিপাড়া বেড়মজুর, হাটখোলা, গাজিখালি এবং বেড়মজুর ২ পঞ্চায়েতের ধামাখালি, ধুলিয়া, ঝুপখালি ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বাড়িতে পানীয় জলের কল বসানো হলেও জল আসে না। এই সব এলাকায় ইতিমধ্যেই একাধিক সরকারি নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে বলে গ্রামবাসীরা জানান। দিনমজুর ২ পঞ্চায়েতের রামপুর বাগদিপাড়ার বাসিন্দা শুকলাল বিবি বলেন, ‘‘পাড়ায় পানীয় জলের যে ট্যাপকল বসানো হয়েছে, সেখানে দিনে একবার জল আসে ঘণ্টাখানেকের জন্য। তাতে খুব বেশি জল নেওয়া যায় না।’’

কোরাকাটি পঞ্চায়েতের তুষখালি মৌজার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এবং কোরাকাটি মৌজাতেও সমস্যা প্রায় একই। মণিপুর পঞ্চায়েতের আতাপুর তালতলা, পূর্ব আতাপুর গোপালের ঘাট, পশ্চিম আতাপুর দাসপাড়া, মণিপুর মিঠাখালি, জয়গোপালপুর বাজার থেকে আমতলি বাজার পর্যন্ত এলাকাতেও আজও জলসঙ্কট পুরোপুরি মিটল না।

এই পরিস্থিতির জন্য শাসকদলকেই বিঁধছে বিজেপি। তাদের কথায়, সন্দেশখালি পুরোটাই যেন নেই রাজ্য। তৃণমূল অবশ্য সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। (শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water crisis sandeshkhali
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy