শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নতুন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের তরফে পশ্চিমবঙ্গে ভোট-পরবর্তী ‘সন্ত্রাস’ দেখতে আসায় তাঁর ভূমিকা আগামী দিনে কী ভাবে ছাপ ফেলতে পারে? বুধবার, শপথগ্রহণের পরে সেই প্রশ্নেরও মুখোমুখি হলেন পশ্চিমবঙ্গের নতুন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। রাজ্যের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক ‘অভিভাবক’-এর সপ্রতিভ জবাব, ‘‘আমার সেই রিপোর্ট নিছকই পেশাদার (প্রফেশনাল) ছিল, মোটেও রাজনৈতিক (পলিটিক্যাল) নয়।’’ প্রসঙ্গত, ওই রিপোর্টে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ওঠা হিংসার নানা ধরনের অভিযোগকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছিল।
রাজভবনে প্রথম দিন কেরল ব্যাচের প্রাক্তন আইএএস অফিসার বোস ছিলেন খোলামেলা, আন্তরিক মেজাজে। তবে অনেকেরই চোখে পড়েছে, সৌজন্যের একফোঁটা ঘাটতি ছাড়াই দুঁদে আমলাসুলভ ভঙ্গির মাপা তাৎপর্যবাহী শব্দচয়নে রাজ্যপালের স্বাচ্ছন্দ্য। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁর পূর্বসূরি জগদীপ ধনখড়ের (অধুনা দেশের উপরাষ্ট্রপতি) সঙ্গে নবান্নের ‘তিক্ত’ সম্পর্কের কথাও ওঠে। তাতে প্রবাদবাক্য আওড়ান বোস, ‘‘হোয়েন উইন্টার কামস ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড (শীত এলে বসন্ত কী আর দূরে থাকে)!’’ এর পরেই বলেন, ‘‘মতভেদ গণতন্ত্রের অঙ্গ। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গণতন্ত্রের দুর্বলতা নয়, শক্তি। দৃষ্টিভঙ্গির ভারসাম্যেই আমরা এগিয়ে চলি। বাংলার এমন মহৎ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বাংলা পারবেই যে কোনও বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটাতে।’’
বাবা বাসুদেবন নায়ারের সুভাষচন্দ্র-প্রীতিতেই নতুন রাজ্যপালের নামও ‘বোস’। শপথগ্রহণের পরেই স্ত্রী লক্ষ্মী বোসের সঙ্গে রেড রোডের সুভাষ-মূর্তিতে তিনি মাল্যদান করেন। আনন্দ বোস বলছিলেন, ‘‘কেরলে ঘরে-ঘরে রবীন্দ্রনাথের কাবুলিওয়ালা প্রিয়! আর স্টেট ব্যাঙ্কের শ্যামবাজার শাখায় কলকাতা আমার প্রথম চাকরির শহর, আমার লেখা প্রথম গল্প ‘চৌরঙ্গির ফুলগুলি’-রও পটভূমি।’’
তবে রাজ্যে সাম্প্রতিক কালের নানা দুর্নীতির অভিযোগ, মন্ত্রী, নেতাদের কারাবাস প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি এই প্রশ্নটা শুনতেই পেলাম না।’’ লস অ্যাঞ্জেলেসের বিখ্যাত অ্যাক্টিং স্কুলের ছাত্র পুত্র বাসুদেব বোসের চোখে তাঁর বাবার ক্ষুরধার রসবোধে ভরপুর ‘ওয়ানলাইনার’-গুলো অতুলনীয়। রাজ্যপালের পাঁচ ভাই, তিন বোনের পরিবারের অনেকেই এ দিন পারিবারিক গৌরব মুহূর্তটিতে রাজভবনে ছিলেন।
হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের কাছে শপথবাক্য পাঠের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী, সাংসদদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন। এ রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর সঙ্গেও নতুন রাজ্যপালের কথা হয়। নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে বোস কথা বলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর সঙ্গে। বসার জন্য নির্দিষ্ট আসন পছন্দ না-হওয়ায় টুইট করে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসেননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সক্রিয় না নিয়ন্ত্রিত— কেমন রাজ্যপাল হিসাবে আনন্দ বোসকে দেখবে বাংলা? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমায় সবার ধরাছোঁয়ার মধ্যে মানুষের কাছের (অ্যাকসেসিবল) রাজ্যপাল হিসেবে দেখবেন। আমার কাছে সব থেকে অগ্রাধিকার পাবে মানুষ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মধ্যে আমি কাজ করব।’’ জরুরি বৈঠকের জন্য রাজ্যপাল বোস আজ, বৃহস্পতিবারই দিল্লি যেতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy