ফেলে আসা দিন। ছবিটি বই থেকে প্রাপ্ত।
একবার বৃষ্টিতে ভেঙে পড়েছে শ্যামলী বাড়ি। মাটির বাড়ি টিকছে না বলে সময় ও শ্রমের অপচয় আটকাতে শান্তিনিকেতনে মাটির নির্মাণ নিষিদ্ধ করল বিশ্বভারতী। হঠাৎ রবীন্দ্রনাথ খবর পেলেন, নিষেধ উড়িয়ে নন্দলাল তাঁর ছাত্রদের নিয়ে কলাভবন চত্বরে মাটির বাড়ি করছেন! নালিশের সত্য-অসত্য যাচাইয়ে গিয়ে ভুল ভাঙল কবির! নন্দলালকে বললেন, ‘‘এ আশ্রমের বিশেষ সম্পদ।’’ সেই বাড়ি নিয়েই, কবির পঁচাত্তরতম প্রয়াণ দিবসে আজ শান্তিনিকেতনে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করছে বিশ্বভারতী। বইটি সম্পাদনা করেছেন কলাভবনের শিল্পকলা ইতিহাসের অধ্যাপক সঞ্জয়কুমার মল্লিক।
শান্তিনিকেতনের স্থাপত্যচর্চা নিয়ে বই নতুন নয়, তবে আশ্রমের কোনও একটি বাড়ি নিয়ে এমন ছবিতে সাজানো বই এই প্রথম। সম্পাদকের কথায়, ‘‘তিরিশের দশকে নির্মিত বাড়িটি নিয়ে এখনও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কৌতূহল। এখনও ওই হস্টেলে থাকার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলে।’’ প্রাক্তনীদের স্মৃতি, পুরনো দিনের কথা, সালতামামি আর আর্কাইভ থেকে পাওয়া অজস্র দুষ্প্রাপ্য ছবি নিয়ে প্রায় একশো নব্বই পাতার বইটির সম্পাদনার কাজের অভিজ্ঞতা থেকে সঞ্জয় বলেন, ‘‘কালোবাড়ি নিয়ে ২০১৩ সাল নাগাদ একটি পুস্তিকার পরিকল্পনা হয়। সে কাজ আর এগোয়নি। পরে নতুন করে এই বইয়ের পরিকল্পনা হল। এই বাড়ি এখনও ছাত্রাবাস। আশ্চর্য এর নির্মাণ, যার সঙ্গে কেবল ‘চৈত্য’ ও ‘শ্যামলী’ বাড়ির তুলনা চলে।’’ শান্তিনিকেতনের স্থাপত্য চর্চায় এই বই নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই তাঁর বিশ্বাস।
বইটিতে আছে পাঁচটি পর্বে সাজানো ছবির অ্যালবাম। রবীন্দ্রভবন আর্কাইভ থেকে পাওয়া সাবেক কালের কালোবাড়ির ছবি, দক্ষিণ দিকের দেওয়ালের রিলিফ স্কাল্পচারের ছবি, ভিতরের দেওয়াল ও বারান্দার ছবি, দক্ষিণ দিকের দেওয়ালের রিলিফ স্কাল্পচারের ছবি, বনকাঠি গ্রামের ধাতুর তৈরি ‘রথ’-এর গায়ের ছবি ও কালোবাড়ির দেওয়ালে তার অনুকরণে ভাস্কর্যের ছবি বইটিতে পাশাপাশি জায়গা পেয়েছে। ছবি তুলেছেন অর্ণব ঘোষাল। কালোবাড়ি নিয়ে লেখা রয়েছে শিল্পকলা ইতিহাসবিদ আর শিবকুমার প্রমুখের। লেখা আছে পারভেজ কবীর ও পারুল কিরি রায়েরও। পারুলের লেখাটি কবির শ্যামলী বাড়ি, চৈত্য ও কালোবাড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে।
‘‘এমন করে বিশ্বভারতীর বাড়ি-ঘরের স্থাপত্যের অনুপুঙ্খ ইতিহাস নিয়ে এর আগে আলোচনা হয়নি। সে দিক থেকে বইটি প্রকাশ করার চেষ্টা করা হয়েছে,’’ বলছেন বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগের উপ-পরিচালক আশিস পাঠক।
শ্রীনিকেতন যাওয়ার পথে কলাভবন ঢোকার রাস্তায় কালোবাড়ির ছাত্রাবাস নিয়ে স্মৃতিকথা লিখেছেন কলাভবনের প্রাক্তনী নির্মলেন্দু দাস। তাঁর লেখায় সাবেক কালের আশ্রমের ছবি এসে দাঁড়ায় চোখের সামনে। ‘‘কালো দেওয়াল আমাদের চোখের সামনে চিত্রমালার প্রেক্ষাপট তুলে ধরত। দূর থেকে লং শটে দেখা যেত ময়ূর, ভারুতের নারী, ইজিপশিয়ান নারী, ফুল-ফল সম্বলিত একাধিক তালগাছ, খেজুর গাছ, বাঁদর, উট— ইতিহাস ও বর্তমান রূপায়িত এক দেওয়ালে, এক সঙ্গে।’’ কালোবাড়ির বারান্দায় আলো-ছায়ার খেলা তাঁর লেখায়।
সাবেক কালের ‘কালোবাড়ি’র কথা লিখছেন পুলক দত্ত। কলাভবনের ‘নন্দন’ গ্যালারির কিউরেটর তথা রবীন্দ্রচিত্র বিশেষজ্ঞ সুশোভন অধিকারী লিখেছেন ‘কালোবাড়ির সময়-পট।’ তাঁর লেখায় বারবার এসেছে কলাভবনের ছাত্র শিশিরকুমার ঘোষের স্মৃতিকথা ‘আমার পাওয়া শান্তিনিকেতন’ বইটির কথা। কেমন করে আলকাতরা ও মাটি দিয়ে কালোবাড়ি করলেন নন্দলাল, রামকিঙ্কর এবং কলাভবনের ছাত্রেরা সে কথা। হস্টেলটি নির্মাণে ভুবনডাঙার গৌর মিস্ত্রির হাতের ছোঁওয়াও যে ছিল, সেই অংশটিরও উল্লেখ করেছেন সুশোভনবাবু। শেষ বয়সে রামকিঙ্করকে নিয়ে এসে কালোবাড়ির সামনে দাঁড় করিয়ে ‘কোনটা কোন শিল্পীর কাজ’-জেনে নেওয়ার স্মৃতিভারাতুর জায়গাটি সুশোভনবাবুর লেখায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি অবশ্য বলছেন, ‘‘চিঠিপত্রের টুকরো আর শ্রুতি ও স্মৃতিকে নির্ভর করে এ শুধু জোড়াতালির কোলাজ।’’
বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগের পরিচালক রামকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বার আমাদের তিনটি বই প্রকাশিত হচ্ছে, যার একটি ‘কালোবাড়ি’। অন্য দুটি বই ‘রবীন্দ্র সপ্তাহ ভাষণ’ ও বিশ্ববিদ্যা-সংগ্রহ গ্রন্থমালার ‘শিল্প’ সংকলন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy