সুভাষ পাল ও তাঁর স্ত্রী শুক্লা পাল এবং ছায়া দাস।
দুর্গাপুজো থেকে সমবায় সমিতি পরিচালনা, গ্রামের নানা কাজে মাথা ছিলেন ‘মাস্টারমশাই’। যে কোনও প্রয়োজনে পাশে পাওয়া যেত তাঁকে, বলছেন গ্রামবাসী। উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে দণ্ড মহোৎসবে যোগ দিতে গিয়ে সেই ‘মাস্টারমশাই’ সুভাষ পাল (৭০) ও তাঁর স্ত্রী শুক্লা পালের (৬০) মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর নিমদহের যজ্ঞেশ্বরপুর গ্রাম। মৃত্যু হয়েছে ওই গ্রামের বাসিন্দা ছায়া দাসেরও (৭৪)।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাস ছয়েক আগেই পানিহাটির ইসকন মন্দিরের কাছে ফ্ল্যাট কেনেন বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁদের দুই মেয়েও কাছাকাছি থাকেন। তবে যজ্ঞেশ্বরপুরে নিয়মিত যাতায়াত ছিল দম্পতির। প্রাথমিক স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুভাষবাবু পূর্ব বর্ধমান প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালে পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যও হন। বর্তমানে স্থানীয় সমবায় সমিতির সভাপতিও ছিলেন। তাঁর এক জামাই দেবাশিস বণিক জানান, প্রতি বছর পানিহাটির ওই উৎসবে যোগ দিতেন তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘‘সকালে বলেছিলাম, গরমের মধ্যে ভিড়ে যেতে হবে না। ওঁরা বললেন, ‘একটু ঘুরে আসি’। তার পরে হিট স্ট্রোক হয়ে যায়।’’ তাঁদের অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল কি না, জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে সুভাষবাবুরা যজ্ঞেশ্বরপুরে এসেছিলেন। জামাইষষ্ঠীর দিন বিকেলে পানিহাটি ফেরেন। পানিহাটির উৎসবে যেতে বলেছিলেন গ্রামের অনেককে। এ দিন এলাকা থেকে জনা পনেরো পানিহাটিতে যান। দুপুরে টিভিতে দুঃসংবাদ দেখে উদ্বেগ ছড়ায় গ্রামে। সুভাষবাবুর মেজো ভাই রঞ্জিতকুমার পাল বলেন, ‘‘জামাইষষ্ঠীতে সবাই মিলে খুব আনন্দ করেছি। দাদা-বৌদি আর ফিরবে না, মানতে পারছি না!’’ তাঁদের বাড়ির কাছেই থাকতেন বিধবা ছায়া দাস। তাঁর দেখাশোনা করতেন প্রতিবেশী পিঙ্কি দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘দিদা সারা দিন আমার বাড়িতে থাকত। রাতে বাড়ি যেত। এ দিন ভোরে ট্রেন ধরে পানিহাটি গিয়েছিল।’’
সন্ধ্যায় পানিহাটি থেকে অনেকে গ্রামে ফেরেন। গৌরাঙ্গ দাস, কাজল দেবনাথ, সুদেবী দাসেরা বলেন, ‘‘সকাল ৯টা নাগাদ ব্যান্ডেল পৌঁছে ফোনে মাস্টারমশাইয়ের সঙ্গে কথা হয়। পানিহাটি গিয়ে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থার মাঝেই খবর পাই, মাস্টারমশাই নেই!’’ পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তিন জনের মৃত্যুতে গ্রাম শোকাচ্ছন্ন। পরিবারগুলি যাতে ক্ষতিপূরণ পায়, সে উদ্যোগ হচ্ছে।’’ ময়না-তদন্তের পরে রাতে তিন জনের দেহ গ্রামে আনা হবে বলে জানান পরিজন।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy