Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Coal Mine

Coal Mine: ‘কয়লা আছে, তাই আমলারা আসছেন!’

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, হিংলো পঞ্চায়েত এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল নেই।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
পাঁচামি (বীরভূম) শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৪৪
Share: Save:

এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল নেই। পানীয় জলের সঙ্কট দীর্ঘদিনের। রাস্তার অবস্থা শোচনীয়। সরকারি আবাস যোজনার আওতায় না-আসায় পাকা ছাদ নেই বহু মানুষের। রয়েছে আরও সমস্যা। বীরভূমের মহম্মদবাজার ব্লকের যে তল্লাটে প্রস্তাবিত কয়লা খনি গড়ে ওঠার কথা, সেখানকার বাসিন্দাদের বড় অংশের প্রশ্ন— খনি হলেই কি রাতারাতি বদলে যাবে ভাগ্য? তা হলে এত দিন ‘অনুন্নয়ন’-এর ছবিটা তেমন বদলাল না কেন!

বৃহস্পতিবার মহম্মদবাজারের হিংলো গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা এলাকায় পৌঁছে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় ‘অনুন্নয়ন’ প্রসঙ্গে একাধিকবার উঠে এল। হরিণশিঙা গ্রামে বাসবাস প্রায় ৩০০ পরিবারের। তাদের মধ্য ৮০ শতাংশ জনজাতি অধ্যুষিত। একই ছবি দেওয়ানগঞ্জে। সেখানেও চারটি আদিবাসী অধ্যুষিত পাড়া ও একটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়া মিলিয়ে বসবাস করেন হাজার দুয়েক মানুষ।

গ্রামবাসীদের অভিযোগ, হিংলো পঞ্চায়েত এলাকায় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল নেই। একটি মাধ্যমিক স্কুলে রয়েছে সেরেন্ডায়। যেখানে পড়াশোনা করতে হলে হলে ৬-৮ কিমি দূরত্ব যেতে হয় হরিণশিঙা ও দেওয়ানগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের পড়ুয়াদের। নতুবা সমান দূরত্বে ডেউচায় যেতে হয়। ফলে উচ্চশিক্ষায় ইতি পড়ে বহু পড়ুয়ার। বিশেষত মেয়েদের। তাদের বেশির ভাগই নবম শ্রেণির আগে স্কুলছুট হওয়ায় সরকারের কন্যাশ্রী বা পরবর্তীতে রূপশ্রী প্রকল্প থেকে বঞ্চিত। অতিমারি পরিস্থিতিতে গত দু’বছরে সেই সঙ্কট আরও বেড়েছে।

প্রস্তাবিত খনি এলাকায় বসবসকারী মানুষের (বিশেষত আদিবাসীদের) স্বার্থ ও অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখতে ৯ সদস্যের কমিটি তৈরি হয়েছে। সেই কমিটির অন্যতম সদস্য তথা এলাকার বাসিন্দা শ্যামল মুর্মু ও সোমচাঁদ হেমব্রমও মানছেন, এখানে অনুন্নয়ন রয়েছে। সোমচাঁদের মেয়ে লতিকা একাদশ শ্রেণিতে পড়ে সিউড়ি শহরের স্কুলে। হরিণশিঙা থেকে কাছের স্কুলের দূরত্ব যেহেতু কম বেশি ৮ কিলোমিটার। তাই ঘরভাড়া নিয়ে লতিকাকে সিউড়ির স্কুলে ভর্তি করেছেন। শ্যামলের মেয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে সারেন্ডায়। এতটা দূরত্ব ওই কিশোরী স্কুলে যাবে স্কুটি চালিয়ে। দু’জনেই বলছেন, ‘‘আমরা যেটা পেরেছি, সেটা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। এলাকায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল না-থাকা সমস্যা তো বটেই।’’

দেওয়ানগঞ্জের মুদিপাড়ার আদিবাসী যুবক যতন মুদির কথায়, ‘‘মাটির নীচে কয়লা রয়েছে। তাই এখন সরকারি আমলারা গ্রামে আসছেন। সরকার প্যাকেজ ঘোষণা করছে। কিন্তু, গ্রাম থেকে ডেউচা যাওয়ার তিন কিলোমিটার পথ বেহাল (যে রাস্তায় পাথরের গাড়িও চলাচল করে না)। পানীয় জলের এত অভাব। সে-দিকটা কেন কেউ এত দিন দেখেনি?’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেরই অভিযোগ, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প থেকে এলাকার বহু মানুষ বঞ্চিত আছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা ভাল নয়। মহিলা স্বশক্তিকরণের বিষয়টিও উপেক্ষিত। খনি গড়ার কাজ জোর পেতেই ইদানীং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নিখরচার স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন হচ্ছেন ওই অঞ্চলে।

শুক্রবারই যেমন একটি স্বাস্থ্য শিবির হয়েছে সারেন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এ দিন সেই শিবির ঘুরে দেখেন বীরভূমের জেলাশাসক বিধানচন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশিত পথে এগোচ্ছে প্রশাসন। পানীয় জল, রাস্তাঘাট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ যা যা সমস্যা আছে, সেগুলি মিটিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা ও বহুবিধ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সে-সব বাস্তবায়িত হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coal Mine Bureaucrats
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE