দেহ আঁকড়ে কান্না। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দাই তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। সকাল থেকে রাত খটাখট শব্দে তাঁতযন্ত্র চলে তাঁদের ঘরে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে অবশ্য সবই নিঝুম। গ্রামের সবার প্রিয় হাসিখুশি ছেলেটার শেষবারের মতো ঘরে ফেরার অপেক্ষায় ভিড় জমিয়েছিলেন তাঁরা। বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ কফিনবন্দি সুরজিৎ সরকারের দেহ আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গ্রাম।
বুধবার ছত্তীসগঢ়ের নারায়ণপুর জেলার কাদেনারে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের ক্যাম্পে সহকর্মীর গুলিতে মৃত্যু হয় পাঁচ জনের। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন সুরজিৎ। এ দিন কফিনে জাতীয় পতাকায় মোড়া ছেলের দেহ দেখেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বাবা পীযূষ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল না। তার পরেও মরতে হল ছেলেটাকে।’’
সপ্তাহ তিনেক আগে রাস উৎসবে বাড়ি এসেও বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছিলেন সুরজিৎ। এ দিন সেই স্মৃতিচারণেই ব্যস্ত ছিলেন প্রতিবেশী, বন্ধুরা। তাঁরা জানান, বারবার বলছিল ‘চৈত্র মাসে বাড়ি এসে বিয়ের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে যাব, এখনই আড্ডা মেরে নিই’। সুদীপ্ত ঘোষ, রামপ্রসাদ ঘোষেরা বলেন, ‘‘মেনে নিতে পারছি না ঘটনাটা।’’
এ দিন কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে গ্রামে আসে দেহ। বাড়ির আশপাশে ততক্ষণে থিকথিকে মাথা। সুরজিতকে এক বার দেখার আশায় আশপাশের বাড়ির ছাদেও লোক ভর্তি। অনেকের হাতেই ছিল ‘জয় হিন্দ’, ‘বন্দে মাতরম’, ‘সুরজিৎ অমর রহে’, ‘তুমি যেখানে থেকো ভাল থেকো’ লেখা নানা প্ল্যাকার্ড। সন্ধ্যায় দেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সময়েও ছেলেকে ছাড়তে রাজি হচ্ছিলেন না মা পার্বতী সরকার। বারবার বলছিলেন, ‘‘আমার সব শেষ হয়ে গেল।’’ দুপুর থেকেই সরকার পরিবারের পাশে ছিলেন রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘‘এত মানুষের ভিড়ই বলে দিচ্ছে কতটা জনপ্রিয় ছিল সুরজিৎ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy