উদ্ধার: রবিবারও গ্রামে মিলেছে বোমা। বাসন্তীতে। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মৃত্যু ঘটছে একের পর এক। গত এক মাসে বাসন্তী ব্লকে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। বোমা-গুলির আঘাতে জখম হয়েছেন বেশ কয়েক জন। লাগাতার বোমা-গুলির লড়াইয়ের জেরে শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে এলাকায়। তিতিবিরক্ত মানুষ জন। তাঁরা চাইছেন, যে কোনও উপায়ে শান্তি ফিরুক। দলের উপর মহলের শাসন না থাকার ফলেই যুব তৃণমূল ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে বাসন্তীতে গোলমাল থামছে না বলে অনেকের মত।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাসন্তীর লেবুখালি এলাকায় যুব তৃণমূল ও তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণ হারান তৃণমূল কর্মী সাইফুদ্দিন সর্দার। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ওই দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে খুন হন যুব তৃণমূল কর্মী রহিম শেখ। গুলি ও ধারাল অস্ত্রের আঘাতে জখম হন আরও তিন জন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাসন্তীর চড়াবিদ্যা এলাকায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে খুন হয়েছিলেন এক শিশু-সহ দু’জন। তারও আগে বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ অঞ্চলে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে একের পর এক বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
দলের কোন্দল সামলাতে আগে কমিটি তৈরি হয়েছিল। জয়নগরের সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল ছিলেন সেই কমিটিতে। তিনি বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। এখন আর আমি কমিটির দায়িত্বে নেই। বাসন্তীতে যা হচ্ছে, তা নিয়ে আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে দলই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’’
কী কারণে বাসন্তীতে লাগাতার সংঘর্ষ বাধছে?
কয়েক জন তৃণমূল কর্মী জানালেন, নদীর চর দখল করে এলাকায় গজিয়ে উঠেছে প্রচুর মেছোভেড়ি। এই সমস্ত বেআইনি মেছোভেড়ির দখলদারি নিয়েই তৃণমূল ও যুব তৃণমূলের মধ্যে আকচাআকচি। ভেড়ির দখল রাখতে হলে এলাকাতেও দখলদারি থাকা দরকার। যে জন্য ভরসা পেশিশক্তিই।
দলের এক স্থানীয় কর্মীর কথায়, ‘‘ব্লক এলাকার অধিকাংশ পঞ্চায়েত কার দখলে থাকবে— তা নিয়েও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষ হচ্ছে। তৃণমূলের যে গোষ্ঠীর হাতে পঞ্চায়েতের কর্তৃত্ব থাকবে, তারাই উন্নয়নের টাকার তদারকি করতে পারবে।’’ তিনি আরও জানান, আগে বাসন্তী ব্লক এলাকা গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্করের কথা মতো চলত। তাঁরই অনুগামী মন্টু গাজি ছিলেন বাসন্তী ব্লক তৃণমূল সভাপতি। পরে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি সওকত মোল্লা বাসন্তী ব্লকের যুব তৃণমূলের সভাপতি করেন আমান লস্করকে।
আমানের নেতৃত্বে পরবর্তী সময়ে যুব তৃণমূল বাসন্তী ব্লক এলাকায় সংগঠিত হতে থাকে। ধীরে ধীরে যুব তৃণমূলের দাপটে কোণঠাসা হতে থাকেন প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি মন্টু ও তাঁর অনুগামীরা।
লাগাতার দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের পরে জেলা নেতৃত্ব ব্লক তৃণমূল সভাপতি পদ থেকে মন্টুকে সরিয়ে দেয়। আমানকেও ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বেশ কিছু দিন দুই শিবির চুপচাপ থাকার পরে পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে ফের গন্ডগোল মাথা চাড়া দেয়। পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সেই কমিটির মাথায় বসানো হয় সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলকে। পরবর্তী সময়ে ওই কমিটির কার্যকারিতা বন্ধ হয়ে যায়। ফের গোলমাল শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসন্তীর এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘বাসন্তী ব্লক এলাকায় যেন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। মাঝেমধ্যেই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বোম-গুলির লড়াই বেধে যায়। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারি না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আসলে তৃণমূলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব বাসন্তীতে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গন্ডগোল জিইয়ে রেখেছেন। না হলে দুই গোষ্ঠীর কাছ থেকে তোলাবাজি বন্ধ হয়ে যাবে।’’
যুব তৃণমূল নেতা আমান বলেন, ‘‘ওদের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। এলাকার কোনও উন্নয়ন না করে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করেছে। সাধারণ মানুষ ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে দেখে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে এলাকা দখল করতে চাইছে মন্টু ও তাঁর লোকজন।’’
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল নেতা মন্টু বলেন, ‘‘সিপিএম, আরএসপি থেকে আমাদের দলে আসা কিছু লোকজন এলাকায় নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। ওরা বাইরে থেকে বোমা, বন্দুক নিয়ে এসে তৃণমূল কর্মীদের উপরে আক্রমণ করছে।’’
তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতা শক্তি মণ্ডল বলেন, ‘‘দল যখন বড় হয়, তখন নিজেদের মধ্যে কিছুটা ঠোকাঠুকি হয়। বাসন্তীর বিষয়ের উপরে দল নজর রেখেছে। যথা সময়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি মেনে নেওয়া হবে না। প্রশাসনকে পরিষ্কার ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, প্রকৃত অপরাধী যে-ই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’’
কিন্তু তাতে কাজের কাজ কতটা হবে, এলাকায় শান্তি আদৌ ফিরবে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত নন গ্রামের সাধারণ মানুষ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy