একটা সময়ে শুধুই বোমা-বারুদের গন্ধ নাকে আসত। মাওবাদী কার্যকলাপে যখন-তখন তেতে উঠত গ্রাম। এখন সে সব অতীত। আগের চেয়ে অনেক শান্ত নদিয়ার তেহট্টের সীমান্তবর্তী গ্রাম ফাজিলনগর। রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে সেখানে। তৈরি হয়েছে পাকা নর্দমা। আলো বসেছে সব রাস্তাতেই। ফলে উন্নত হয়েছে গ্রামের অর্থনীতিও। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে মহিলারাও সেখানে স্বনির্ভর।
উন্নয়নের ছোঁয়া চোখে পড়ার মতো জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর পঞ্চায়েতের পাঁচকাটা কলোনিতেও। বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার সুবাদে সেখানেও গ্রামের সমস্ত রাস্তাই পাকা। কেন্দ্র এবং রাজ্যের আবাস যোজনার দৌলতে কাঁচা বাড়ির সংখ্যাও অনেকটা কমেছে গ্রামে। গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, একটা সময়ে গ্রামে রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল-সহ কোনও কিছুরই বন্দোবস্ত ছিল না। গত কয়েক বছরে বিস্তর কাজ হয়েছে গ্রামে। শহরের সঙ্গে গ্রামকে জুড়তে ঢালাই রাস্তা, পানীয় জলের পাইপ লাইন, বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা, পুকুরের সংস্কার হয়েছে। যার ফলে উন্নত হয়েছে জীবনযাত্রার মানও।
গ্রামজীবনের উন্নয়নে সক্রিয় ছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। চালু করেছিলেন ‘পিএম টু ডিএম’। যাতে কেন্দ্রের টাকা সরাসরি গ্রামে পৌঁছতে পারে। সেই উদ্যোগকে ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী’ বলে দাগিয়ে দিয়ে তার বিরোধিতা করেছিল বঙ্গের তৎকালীন শাসকদল সিপিএম। তার পর রাজনীতির জল বহু দূর গড়িয়েছে। কেন্দ্র এবং রাজ্যে সরকার বদলেছে। এখন অবশ্য সব পক্ষই মনে করে, দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন ভীষণ ভাবেই জরুরি। তাই কেন্দ্র থেকে এখন সরাসরি পঞ্চায়েতে টাকা আসে। রাজ্যও নিজের মতো করে অর্থ বরাদ্দ করে। যাতে দ্রুত কার্যকর করা যায় উন্নয়নের রূপরেখা।

পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা (প্রতীকী চিত্র)
ভোট এলে মেঠো ভাষণে গ্রামের উন্নয়নের কথা বলে গলা চিরে ফেললেও, কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকারের কাছে গ্রাম এখনও বহু ক্ষেত্রে ‘দুয়োরানি’। গ্রামের উন্নয়ন মানে তাদের কাছে বড় জোর ইট-কাঠ-পাথরের খানিকটা পরিকাঠামোগত উন্নয়ন। রাজনীতির ফাঁসে সেই কাজও ঠিক মতো হয় না। এর অন্যতম উদাহরণ হল মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী গ্রাম।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ‘দেশের সেরা পর্যটন গ্রাম’ হিসেবে কিরীটেশ্বরীকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। জেলার পৌরাণিক স্থান হিসাবে কিরীটেশ্বরী মন্দির সর্বজনস্বীকৃত। জেলার একমাত্র সতীপীঠ হিসাবেও খ্যাত সেখানকার মন্দির। তা সত্ত্বেও স্থানীয়দের অভিযোগ, আজও দেশের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসাবেই শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের খাতায়কলমেই সীমিত রয়ে গিয়েছে কিরীটেশ্বরী। গ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে, কোনও ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত করার মতো পরিকল্পনা তাঁদের চোখে পড়েনি। গ্রামের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম বলেন, “এক বছর হতে চলল, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নজরে আসেনি। গ্রাম ও মন্দিরকে কেন্দ্র করে যা কিছু উন্নয়ন হচ্ছে, সবটাই রাজ্য সরকারের উদ্যোগে।’’ প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনের জেরে কেন্দ্রের বরাদ্দ অর্থ এসে পৌঁছয়নি। ফলে সেই ভাবে উন্নয়নও করা যায়নি।
২০১৪ সালে দিল্লির মসনদে বসার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সব সাংসদকে অনুরোধ করেছিলেন নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রে একটি করে গ্রাম দত্তক নিতে। সেটিকে সাজিয়েগুছিয়ে আদর্শ গ্রাম বানিয়ে তোলার অনুরোধ করেছিলেন মোদী। এ দিকে, তাঁর দলেরই সাংসদ জলপাইগুড়ির জয়ন্ত রায়ের দত্তক নেওয়া চেংমারি গ্রামের অবস্থা তথৈবচ! হতশ্রী দশা রাস্তার। দু’দিকের ধার ভাঙা। পিচ উঠে গিয়েছে। গর্ত হয়ে গিয়েছে পাথর বেরিয়ে। চতুর্দিক খানাখন্দে ভরা। এতে তিতিবিরক্ত সাধারণ মানুষ।
তবে কাজ হয়েওছে অনেক জায়গায়। যেমন ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির আমলাশোল। বাম আমলে অনাহারে মৃত্যুতে শিরোনামে উঠে আসা ওই গ্রামে যে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে, তা এককথায় মেনে নিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত মুড়ার কথায়, ‘‘এক দশকে এলাকার রাস্তাঘাটের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ৫০টিরও বেশি পুকুর হয়েছে। এর ফলে পাহাড়ি এলাকায় সেচের সুবিধা হয়েছে।’’

গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন (প্রতীকী চিত্র)
উন্নয়ন হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের কিসমৎ নাইকুণ্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের সরবেড়িয়া গ্রামেও। গত এক দশকে ওই গ্রামের সমস্ত কাঁচা রাস্তা কংক্রিটের হয়েছে। বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে প্রতিটি বাড়িতে। স্থানীয় বাসিন্দা অলককুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘গত এক দশকে আমূল বদলেছে পরিস্থিতি। এখন গ্রামের জীবনযাপনের মান অনেক উন্নত হয়েছে। পানীয় জল, বিদ্যুৎ, রাস্তা, জল নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন— অনেক কাজই হয়েছে।’’ পঞ্চায়েত প্রধান দেবপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দলমত নির্বিশেষে এখানে উন্নয়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের সমস্ত জনমুখী প্রকল্পের সফল রূপায়ণেই এলাকার ঢালাও উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তারই সুফল এলাকার মানুষ পাচ্ছেন।’’
মুর্শিদাবাদ জেলায় ১০-১৫ বছর আগেও বহু গ্রামে রাস্তা ছিল না। এখন অনেক ক্ষেত্রেই পিচ বা ঢালাইয়ের রাস্তা হয়েছে। একই ছবি বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া-সহ আরও বিভিন্ন জেলায়। নদিয়ার করিমপুরের টোটোচালক বিমল ঘোষ বলেন, ‘‘গ্রামে ঢালাই রাস্তা হওয়ায় টোটো চালিয়ে আগের চেয়ে বেশি রোজগার করি।’’ বীরভূমের ইলামবাজারের বাসিন্দা দুলাল ভুঁইয়া, ফাল্গুনী দাসেরাও বলেন, ‘‘আগে বর্ষায় কাদা পেরিয়ে জিনিস বিক্রি করতে যেতে খুব কষ্ট হত। এখন সমস্যা নেই।’’
যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের হাত ধরে গ্রামের সর্বাঙ্গীন ও পরিকাঠামোগত বিকাশ হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে থেকে আল্ট্রাটেক সিমেন্ট পরিবার বেছে নেবে ‘আল্ট্রাটেক যশস্বী প্রধান’। আল্ট্রাটেক সিমেন্ট দেশ জুড়ে এই বিকাশ ও নির্মাণকার্যে সহযোগিতা করে চলেছে। নিজেদের এই অভিজ্ঞতা, গুণমান এবং বিশ্বস্ততাকে পাথেয় করে পশ্চিমবঙ্গেও সকল গ্রাম প্রধানদের সার্বিক উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই সংস্থা। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন আনন্দবাজার অনলাইনে।