সাহিদা বেগম ওরফে ট্যাঙ্কি
একদা যে ছিল শিকার, পরে সে-ই হয়ে গেল শিকারি!
এক সময় তাকে পাচার করা হয়েছিল, তখন সে কিশোরী। পরে সে হল পাচার চক্রের অন্যতম চক্রী। সে আর কেউ নয়, হাওড়ার সাঁকরাইলের মানিকপুরের বাসিন্দা সাহিদা বেগম। এলাকায় ট্যাঙ্কি নামে পরিচিত।
বয়স মেরেকেটে ২২। ফর্সা, ছিপছিপে সুন্দর চেহারা। শিকারিতে পরিণত হওয়ার পরে তার কাজ ছিল, গরিব ঘরের নাবালিকাদের সঙ্গে আলাপ করা। ভাব জমিয়ে বিয়ের নাম করে ওই নাবালিকাদের ফুঁসলিয়ে আনা। তারপরে তাদের পাচার করে দেওয়া। যে ভাবে গত ১৬ জুলাই সাঁকরাইলের এক কিশোরীকে ফুঁসলিয়ে মথুরায় নিয়ে গিয়েছিল।
১৩ বছরের ওই কিশোরীর বাবা ২০ জুলাই সাঁকরাইল থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এই ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ ট্যাঙ্কির কথা জানতে পারে। ১৬ অগস্ট ট্যাঙ্কিকে গ্রেফতার করা হয়। আপাতত সে পুলিশ হেফাজতে। এই ঘটনায় পুলিশ ট্যাঙ্কি ছাড়া আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে চার জন মহিলা ও দু’জন পুরুষ। তাদের বাড়ি সাঁকরাইলেরই রাজগঞ্জে।
এই ছ’জনের মধ্যে রয়েছে মেহফিজা বিবি নামে এক মহিলাও। তদন্তে পুলিশ জেনেছে মেহফিজাই আসলে এই চক্রটির নাটের গুরু। বড় ঘরে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে নাবালিকাদের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করত। এ ছাড়াও সে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে। বেসরকারি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থার হয়ে গ্রামের গরিব মহিলাদের ঋণ দেওয়ার কাজ করত। ঋণদানের কাজে তাকে সাহায্য করত কাশ্মীরা বেগম, সায়েরুন আনসারি, নুরজাহান বেগম, আব্দুল গফফুর কুরেশি এবং শেখ নাসিরের মতো মহিলা- পুরুষেরা। কিন্তু এটা আসলে আড়াল! সকলে নাবালিকা পাচারের কাজ করত। তবে মেহফিজার সাগরেদদের মধ্যে সেরা অস্ত্র ছিল ট্যাঙ্কিই।
কী করে সেরা অস্ত্র হল ট্যাঙ্কি?
মেহফিজা বছর পাঁচেক আগে তাকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গিয়ে উত্তরপ্রদেশে বিক্রি করে দিয়েছিল। সেখান থেকে পালিয়ে আসে সে। কিন্তু পুলিশকে সে এই ঘটনার কথা কিছু জানায়নি লোকলজ্জার ভয়ে। ফের সে পড়ে মেহফিজার খপ্পরে। আর যাতে সে পালাতে না পারে, তাই রণকৌশল বদল করে মেহফিজা। তত দিনে ট্যাঙ্কি সাবালিকা। চলনে-বলনে, চেহারা-কেতায় সে সপ্রতিভ। মেহফিজা তাকে বলে, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ্যে পুরুষদের অনুপাতে মেয়েদের সংখ্যা অনেক কম। যদি সেখানকার পুরুষদের সে ‘বিয়ে’ করে, তা হলে যে টাকা মিলবে, তার ভাগ তাকেও দেওয়া হবে। আর সুযোগ পেলে সে পালিয়েও আসতে পারবে।
পুলিশ জানিয়েছে, মেহফিজার পরামর্শ মতো টাকার বিনিময়ে ‘বিয়ে’ করা, আর কয়েকদিন সংসার করে ফের পালিয়ে আসাটাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছিল ট্যাঙ্কি। মোট তিন বার এই ভাবে বিয়ে করে উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানায় চলে গিয়েছিল ট্যাঙ্কি। বর জোগাড়ের দায়িত্ব ছিল মেহফিজার। এই সব করে যে টাকা পাওয়া যেত, তা ভাগাভাগি হত মেহফিজা ও ট্যাঙ্কির মধ্যে। মাস তিনেক হল সে নিজে আর বিয়ের খেলায় মাতেনি। বদলে মেহফিজার হয়ে নাবালিকার সন্ধান করতে শুরু করল ট্যাঙ্কি।
সে ভাবেই তার যোগাযোগ হয় সাঁকরাইলের ওই কিশোরীর সঙ্গে। ওই কিশোরীর বাবা ধুলাগড়ির হাটে মজুরের কাজ করেন। তার মা বাবার সঙ্গে থাকেন না। সেই সুযোগটাই নিয়েছিল ট্যাঙ্কি। সে থাকত ওই কিশোরীর বাড়ির পাশেই। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ট্যাঙ্কি বোঝায়, ‘তার বিয়ে দেওয়া হবে। সুখে থাকবে। তবে বাবাকে কিছু বলা চলবে না। ট্যাঙ্কির টোপ গিলতে দেরি হয়নি ওই নাবালিকার।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy