নোট বাতিলের বিরোধিতায় সারা দেশে যাঁরা এগিয়ে, তাঁদের মধ্যেও এগিয়ে আছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য এবং শিক্ষাসচিবেরা এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বিত্তীয় সাক্ষরতা অভিযান’ নিয়ে মানবসম্পদ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের ভিডিও-সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না। আজ, বৃহস্পতিবার ওই সম্মেলন হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওই সম্মেলনে রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানদের যোগ না-দেওয়ার সঙ্গে নোট-রাজনীতির যোগ আছে কি না, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বুধবার সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন। সম্মেলনে উপাচার্য ও শিক্ষাসচিবদের যোগ না-দেওয়ার ব্যাপারে তিনি শুধু বলেন, ‘‘উপাচার্যদের কাজ সুষ্ঠু ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো। কোথাও পরীক্ষা চলছে, কোথাও বা ‘নাক’ (ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল) পরিদর্শন করছে, কোথাও আবার ছাত্র সংসদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে। তাই বোধ হয় ওঁরা ভিডিও কনফারেন্সে সময় দিতে পারবেন না।’’ শিক্ষামন্ত্রীর কথায় এটা স্পষ্ট যে, রাজ্য সরকার চাইছে না, উপাচার্য বা শিক্ষাসচিবেরা ওই ভিডিও-সম্মেলনে যান।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, পাঁচশো ও হাজার টাকার পুরনো নোট বাতিলের ঘটনায় কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত যেখানে পৌঁছেছে, তাতে এটা অবধারিতই ছিল। মুখ্যমন্ত্রী নোট-নাকচ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করবেন, আবার মোদীরই মানবসম্পদ মন্ত্রীর বিত্তীয় সাক্ষরতা অভিযানের সম্মেলনে রাজ্যের উপাচার্যেরা বা শিক্ষাসচিবেরা যোগ দেবেন— এই পরস্পরবিরোধী কাজ চলতে পারে না।
১২ ডিসেম্বর, সোমবার থেকে টানা এক মাস দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা নগদে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেই কর্মসূচির আগে, ৮ ডিসেম্বর মানবসম্পদ মন্ত্রীর ভিডিও-সম্মেলনে সকাল ১০টায় দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষাসচিবদের যোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, উপাচার্য, সচিবেরা ওই ভিডিও-সম্মেলনে যোগ দেবেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা নগদে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণের ব্যাপারে ইউজিসি-র নির্দেশে বলা হয়েছে, এই কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য হল, প্রতিটি ক্যাম্পাসকে সম্পূর্ণ নগদহীন করে তোলা। ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে যাবতীয় লেনদেনই নগদহীন করার পিছনে উপাচার্যদের যে বড় ভূমিকা রয়েছে, সেটাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে ইউজিসি-র ওই নির্দেশে। বলা হয়েছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানেরা তাঁদের পড়ুয়াদের নগদহীন আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতন করবেন। পরে তাঁরা এই বিষয়ে বৃহত্তর প্রচারকাজে যোগ দেবেন। বিষয়গুলি ছাত্রছাত্রীদের বোঝানোর জন্য এই বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।
শিক্ষা শিবিরের একাংশের মতে, উপাচার্য ও শিক্ষাসচিবেরা ওই সম্মেলনে যাচ্ছেন না শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশেই। এবং খোদ মন্ত্রীর এমন নির্দেশের পরে রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় এই কর্মসূচি গ্রহণে আদৌ আগ্রহ দেখাবে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
কী বলছেন উপাচার্যেরা?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ জানান, নাক-এর প্রতিনিধিরা তাঁর প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আসছেন। তাঁরা এখন সেই সফর নিয়েই ব্যস্ত। নাক-প্রতিনিধিরা ঘুরে যাওয়ার পরে তাঁরা হয়তো এই কর্মসূচির বিষয়টি ভেবে দেখবেন। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানিয়ে দিয়েছেন, এই বিষয়ে ইউজিসি-র কোনও নির্দেশ এখনও হাতে পাননি তিনি। পেলে সরকারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন। বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরীর বক্তব্য, বৃহস্পতিবার তাঁর পূর্বনির্ধারিত কাজ আছে। তাই এমনিতেও তাঁর পক্ষে ভিডিও-সম্মেলনে উপস্থিত থাকা সম্ভব ছিল না। আর ১২ ডিসেম্বরের কর্মসূচির বিষয়ে কোনও নির্দেশ তিনি এখনও হাতে পাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy