বাঙালির কৃষ্ণ ভাবনায় বদল চায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বাঙালির কৃষ্ণপ্রেম মানে ‘গহন কুসুমকুঞ্জ-মাঝে মৃদুল মধুর বংশি বাজে...’। ভগবানের চেয়ে সন্তান হয়ে গোপাল ঠাকুর রূপে জন্মাষ্টমীতে বাঙালির ঘরে ঘরে পুজো পান কৃষ্ণ। ক্যালেন্ডারে ঝোলে রাধার সঙ্গে যুগল রূপ। কিন্তু বিশ্ব হিন্দু পরিষদ চায়, এ বার কৃষ্ণকে চেনার চোখ ও মন বদলাক বাঙালি। ‘ঝুলন লীলা’র কৃষ্ণ নয়, ‘সম্ভবামি যুগে যুগে’-র শ্রীকৃষ্ণকে চেনাতে চায় পরিষদ। বাঙালির কাছে ‘রক্ষক’ কৃষ্ণের পরিচয় তুলে ধরার উদ্যোগ শুক্রবার জন্মাষ্টমী তিথি থেকেই শুরু হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রতি বছরই দেশ জুড়ে কৃষ্ণের জন্মতিথি পালন করে পরিষদ। এই রাজ্যেও সভা, শোভাযাত্রা-সহ নানা অনুষ্ঠান হয়। এ বারও অনেক কিছু করার বিষয়ে উদ্যোগী পরিষদ। সংগঠনের পক্ষে জানানো হয়েছে, বাংলার সর্বত্র কৃষ্ণ মন্দিরে বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও পরিষদের উদ্যোগে ছোটদের নিয়ে ‘কৃষ্ণ সাজো’ প্রদর্শনী হবে জেলায় জেলায়। অনেক জায়গায় শোভাযাত্রারাও আয়োজন হবে। তবে সর্বত্রই ব্যবহার করা হবে ‘সুদর্শন চক্রধারী’ কৃষ্ণের ছবি। বাঙালির মনে কৃষ্ণের যে ছবি, তার বদল আনতে বাড়ি বাড়ি ‘রক্ষক’ কৃষ্ণের ছবি বিলিও করতে চায় পরিষদ।
এমন উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে পরিষদের সর্বভারতীয় সহ-সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘কৃষ্ণ আমাদের উপাস্য। তাঁর জন্মতিথিতেই সাধুসন্তদের সিদ্ধান্তে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সূচনা হয়েছিল। কারণ, কৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল সাধু মানুষদের রক্ষা করার জন্য। বলা হয়, ‘পরিত্রাণায় সাধুনাম’। সেই কৃষ্ণের সাধনা করি আমরা। আজকের সময়ে সমাজের সৎ মানুষদের রক্ষা করার জন্য সেই কৃষ্ণের আরাধনাই প্রয়োজন। আমরা সেই কথাটাই বলতে চাই।’’
আশির দশকে বাঙালির মনে রামের ছবিও বদলানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিল পরিষদ-সহ সঙ্ঘ পরিবার। বাঙালির কাছে ‘রাজা’ রামের চেয়ে অকালবোধনের দুর্গাসাধক রাম বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু সেই সময় অযোধ্যায় রামজন্মভূমি আন্দোলন শুরুর সময় থেকেই গোটা দেশে রামকে ‘পুরুষোত্তম’ আখ্যা দিয়ে প্রচারে নামে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। ‘রামলালা’-র মন্দির বানানোর আন্দোলনেও ‘বীর’ রূপেই রামকে তুলে ধরতে চেয়েছিল সঙ্ঘ পরিবার। এ বার কৃষ্ণ জন্মভূমি আন্দোলনে জোর দেওয়ার পরিকল্পনার থেকেই কি বাঙালির মনে কৃষ্ণভাবে বদল আনতে চাওয়া? এমন প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন শচীন্দ্রনাথ। তিনি বলেন, ‘‘এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বাঙালির মনে যে কৃষ্ণ রয়েছেন তিনিও সত্য। আবার মহাভারতে যে কৃষ্ণ শুভশক্তির পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনিও সত্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাবনার বদল ঘটাতে হয়। আজ সজ্জন মানুষদের যে দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলতে হয় তাতে ভগবান কৃষ্ণের রক্ষক রূপের আরাধনা দরকার। এমন কথা বলেছিলেন স্বয়ং স্বামী প্রণবানন্দজি। তাই ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে সুদর্শনচক্রধারী কৃষ্ণের পুজো হয়।’’
মধ্যযুগে বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ থেকে আধুনিক সাহিত্য, সর্বত্রই বাঙালি তো কৃষ্ণের প্রেমকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। জন্মাষ্টমীতে ঘরে ঘরে গোপাল ঠাকুর নাড়ু, তালের বড়া, মালপোয়ায় পুজো পান। সেই বাঙালির মনে যে কৃষ্ণের রূপ রয়েছে তা বদলে ফেলা যে সহজ নয়, সেটাও মেনেছেন শচীন্দ্রনাথ। জানিয়েছেন, ‘‘এক দিনে সব কিছু হয়ে যায় না। তবে পরিষদ হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy