মিছিলে পা। নিজস্ব চিত্র।
কখনও পরিবর্তন, কখনও অন্য কোনও যাত্রার নাম দিয়ে বাংলার পথে রথ নামিয়েছে বিজেপি। কিন্তু বাংলার রাজনীতির পুরনো অভিজ্ঞান পদযাত্রা যে এখনও বহাল, তার নমুনা ফের দেখা গেল রবিবার হুগলিতে। যখন পুরশুড়ার চিলাডাঙ্গি থেকে খানাকুলের বালিপুর অবধি প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার পথ দেড় ঘণ্টায় হেঁটে অতিক্রম করলেন বিমান বসু। বয়স যাঁর ৮১ চলছে!
পায়ে হেঁটে জনসংযোগের এই রাজনীতিই বাংলার আদি এবং অকৃত্রিম চেনা ছবি। গত কয়েক দশকে সেই ট্রেড মার্ক নিয়েই এগিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের কর্মসূচিতে রাস্তায় নেমে পড়তে তাঁর জুড়ি নেই। জেলা-সফরে হোক বা শহরে, হাঁটার কর্মসুচি রাখতে পারলে তিনি মানসিক ভাবে স্বচ্ছন্দ থাকেন। মাইলের পর মাইল হাঁটা তাঁর রাজনীতির বহু দিনের সঙ্গী। সম্প্রতি নেতাজির জন্মদিনেই শ্যামবাজার থেকে রেড রোড হেঁটে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাইরে যখন হাঁটার সুযোগ নেই, তখন চার দেওয়ালের মধ্যে আছে ট্রেড মিল। মমতা বলে থাকেন, ‘‘আমি হাঁটলে আমার মাথাও সঙ্গে হাঁটে। মস্তিষ্ক সচল থাকে। কাজ হয়ে যায় চটপট।’’
রাজনীতিতে সম্পূর্ণ দুই মেরুতে অবস্থানকারী হলেও পায়ে হেঁটে রাজনীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভ্যাসে মমতার পাশেই আছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিমানবাবু। তাঁর কাছেও হাঁটা সেই যৌবন কাল থেকে চলে আসা রেওয়াজ। বিমানবাবুর অবশ্য ট্রেড মিলের অভ্যাস নেই। তাঁর ভরসা রাস্তাই। কোচবিহার থেকে হেঁটে দক্ষিণবঙ্গে নেমেছেন এক কালে। এখন এই ৮১ বছরে পড়েও মঞ্চে উঠতে-নামতে কারও সাহায্য নিতে নারাজ। বিমানবাবুর সাফ কথা, ‘‘যখন হাঁটতে পারব না, যখন চলতে-ফিরতে কারও সাহায্য লাগবে, তখন আর বাইরে রাজনীতিই করব না!’’
এসএসকেএম হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান এক চিকিৎসকের মতে, হাঁটার অভ্যাস শরীরের পক্ষে ভাল। অনেকের কাছে শরীর ভাল রাখার উপায়ই হল হাঁটা। শরীর-চর্চার মতো করে যাঁরা এটা করে যেতে পারেন, নিজেদের তাঁরা চাঙ্গা রাখতে পারেন।
পথে ‘চাঙ্গা’ বিমানবাবুর ছবি এ দিন মোবাইলে তুলে রাখতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেখা গিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের কাউকে কাউকেও। ভিড় দেখে খুশি বিমানবাবুর মন্তব্য, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে, তৃণমূল এবং বিজেপির অপশাসনের প্রতিবাদে মানুষ গা ঝাড়া দিয়ে নেমেছেন। আমাদের আশা তৃণমূল-বিজেপিকে হারিয়ে একটা বিকল্প সরকার করতে পারব।’’
বাম ও কংগ্রেসের যৌথ মিছিল ছিল এ দিন পুরশুড়া থেকে খানাকুল। জোটে সঙ্গী হলেও পথে বিমানবাবুর সঙ্গী হতে কংগ্রেস নেতাদের অবশ্য বারেবারেই বিড়ম্নবায় পড়তে হয়। যেমন এ দিনও পুরশুড়ার মিছিলের শুরুতে ছিলেন বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান। কিন্তু হাঁটুর সমস্যার জন্য তিনি যে বেশি হাঁটতে পারবেন না, বিমানবাবুকে জানিয়ে পুরো পথে ছিলেন না তিনি। মান্নান বলেন, “আমার এখানে আসার কথা ছিল না। বিমানদা আসছেন শুনেই এসেছি।’’ কলকাতায় কয়েক দিন আগেই যৌথ মিছিলের প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বিমানবাবুকে বলেছিলেন, বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তো ‘ম্যারাথন ওয়াকে চ্যাম্পিয়ন’! তাঁর সঙ্গে হেঁটে পারা যায় না, কিছু ক্ষণ পরে গাড়িতে উঠে যেতে হয়। বিমানবাবু হেসেই আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁদের শারীরিক অসুবিধা তিনি বোঝেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বরং হাঁটার প্রতিযোগিতায় মান্নান-প্রদীপবাবুদের চেয়ে এগিয়ে। যে মিছিলে তিনি যোগ দেন, পুরোটাই হাঁটেন।
পদযাত্রার শেষে বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘গণতন্ত্র ও সংবিধান যেমন বিজেপির দ্বারা আক্রান্ত, তেমনি তৃণমূল দ্বারাও আক্রান্ত। এই কথাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্যই এই পদযাত্রা। দেশকে রক্ষা করতে হলে বিজেপিকে তাড়াতে হবে। আর রাজ্যকে যদি বাঁচাতে হয়, মানুষের অধিকারের লড়াইকে সুরক্ষিত করতে হয়, তা হলে তৃণমূল সরকারকে পরাস্ত করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy