প্রয়াত সিপিআই নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত। —ফাইল চিত্র
প্রয়াত প্রাক্তন সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ৮৩ বছর বয়সে জীবনাবসান হল প্রবীণ এই রাজনীতিকের। আজ সকাল ছ’টা নাগাদ কলকাতার চেতলার বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছেন।
গুরুদাস দাশগুপ্তর প্রয়াণে শোকাহত রাজনৈতিক মহল। শোকবার্তা জানিয়ে টুইট করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তিনি লিখেছেন, ‘সিপিআই নেতা এবং শ্রমিক আন্দোলনের নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তর সংসদে বলিষ্ঠ উপস্থিতি ছিল। তাঁর মৃত্যুত বাংলা তথা গোটা দেশের অপূরণীয় ক্ষতি।’ টুইটে শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লিখেছেন, ‘‘নিজের রাজনৈতিক ভাবধারা ও আদর্শে গুরুদাস দাশগুপ্ত নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। সংসদে ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।’’ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের টুইট, ‘১৯৮৯-৯১ সালে আমি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদ থাকার সময় গুরুদাস দাশগুপ্তর সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ হয়েছিল। উনি সব সময়ই নিজের বক্তব্য খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলতেন। বিরাট খতি।’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, ‘‘সাংসদ এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতা হিসেবে ওঁর অবদান মনে রাখবে দেশ।’’
সিপিআই রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় শোকবার্তায় বলেছেন, ‘‘গুরুদাসদা আমাদের দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। ১৯৫২ সালে দলের সদস্যপদ পান। ১৯৫৪ সালেই গণসংগঠনের নেতৃত্বে পৌঁছে যান। ছাত্র আন্দোলন, যুব আন্দোলন করে উঠে এসেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী কালে শ্রমিক আন্দোলনে গোটা দেশকে তিনি পথ দেখিয়েছেন। এখন দেশে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দেখা যায়, তার অন্যতম জনক ছিলেন গুরুদাস দাশগুপ্ত। সুবক্তা সাংসদও ছিলেন। পরিণত বয়সেই তিনি মারা গেলেন। কিন্তু যে সময়টায় তিনি চলে গেলেন, সেই সময়ে এই দেশটার খুব প্রয়োজন ছিল তাঁকে। গুরুদাসদার চলে যাওয়া আমাদের পার্টির পক্ষে এবং গোটা দেশের বামপন্থী আন্দোলনের পক্ষে খুব বড় ক্ষতি।’’
সংবাদিক সম্মেলনে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু জানান, ‘‘আজ গুরুদাস দাশগুপ্তর মরদেহ রেখে দেওয়া হবে। আগামিকাল সিপিআই অফিস থেকেই শুরু হবে শেষযাত্রা। তিনি বলেন, ‘‘অল্প বয়সে ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। মেয়ে সহ পরিবার-পরিজনদের জানাই সমবেদনা।’’
শোকবার্তায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র লিখেছেন, ‘‘ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের অবিসংবাদী নেতা গুরুদাস দাশগুপ্তের মৃত্যুতে আমি গভীর মর্মাহত। তাঁর মৃত্যুতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের অপূরনীয় ক্ষতি হল। প্রয়াত গুরুদাস দাশগুপ্তের রাজনৈতিক সততা, আগামী প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ হয়ে থাকবে।’’ শোকজ্ঞাপন করে টুইট করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল সহ প্রায় সব দলের রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ সিপিএম-এর তরফেও শোকবার্তা জানিয়ে টুইট করা হয়েছে। রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়, দিলীপ ঘোষ এবং মুকুল রায় গুরুদাস দাশগুপ্তর চেতলার বাড়িতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন।
Sad to hear of the passing of Shri Gurudas Dasgupta, senior CPI leader, trade unionist and a veteran parliamentarian who had a forceful presence in the House. A big loss for public life in Bengal and India. Condolences to his family, colleagues and well-wishers #PresidentKovind
— President of India (@rashtrapatibhvn) October 31, 2019
এ বছরের অগস্টে অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। চেতলার বাড়িতে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় ইএম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। তখন জানা গিয়েছিল মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর। এছাড়াও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যাও ছিল। কিডনির সমস্যাতেও ভুগছিলেন তিনি।
২০০১ সালে সিপিআই-এর শ্রমিক সংগঠন এআইটিআইসির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন গুরুদাস দাশগুপ্ত. টানা ১৭ বছর এআইটিইউসির শীর্ষ পদে থাকার পর অব্যাহতি নেন তিনি। স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে তিনি সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
সংসদীয় রাজনীতিতে গুরুদাস দাশগুপ্তর প্রবেশ ১৯৮৫ সালে। ওই বছরই রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। এর পর ২০০৪ সালে পাঁশকুড়া থেকে জিতে লোকসভার সাংসদ হন। পরের বার লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে তিনি পাঁচ বারের সাংসদ ছিলেন।
Shri Gurudas Dasgupta Ji was one of the most committed and articulate proponents of his ideology. He was a strong voice in Parliament, whose interventions were keenly heard across the political spectrum. Saddened by his passing away. May his soul rest in peace.
— Narendra Modi (@narendramodi) October 31, 2019
আরও পড়ুন: বাহালপুর পৌঁছল পাঁচ শ্রমিকের কফিনবন্দি দেহ, কান্নায় ভেঙে পড়ল গ্রাম
আরও পড়ুন: এক সুরে কেন্দ্রকে দুষলেন মমতা, কংগ্রেস ও বাম
গুরুদাস দাশগুপ্তের জন্ম ১৯৩৬ সালে, বাংলাদেশের বরিশালে। বাবার নাম ছিল দুর্গাপ্রসন্ন দাশগুপ্ত এবং মায়ের নাম ছিল নীহার দেবী। ১৯৬৫ সালে জয়শ্রী দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy