Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
সমবায় ব্যাঙ্কে দুর্নীতি-তদন্ত
Scam

জমা পড়ার পরেই ঘুরপথে গায়েব হয় ঋণের টাকা

মাস কয়েক আগে ব্যাঙ্ক-জালিয়াতির অভিযোগ সামনে আসে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুপ্রকাশ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:২৫
Share: Save:

ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কে নানা অনিয়ম ক্রমশ সামনে আসছে গোয়েন্দাদের। পুলিশ জানতে পেরেছে, জালিয়াতিতে যুক্ত করা হয়েছিল কয়েক জন ঠিকাদারকেও। তাঁদের ঋণ দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে। ওই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান, বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের ভাইপো সঞ্জিত (পাপ্পু) সিংহের নামও জড়িয়েছে এই লেনদেনে।

মাস কয়েক আগে ব্যাঙ্ক-জালিয়াতির অভিযোগ সামনে আসে। ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগে অভিযোগ করেন, পদের প্রভাব খাটিয়ে অর্জুন ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছেন। তৃণমূলে থাকাকালীন বিধায়কের পাশাপাশি ভাটপাড়ার পুরপ্রধানও ছিলেন অর্জুন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পুরপ্রধানের পদ যায় তাঁর। তবে এখনও ওই সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তিনি।

ঠিকাদারদের সামনে রেখে কী ভাবে উধাও হয়েছিল টাকা?

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ব্যাঙ্ক ঠিক করেছিল, ভাটপাড়া পুরসভার যে-সব ঠিকাদার কাজের বরাত পাবেন, তাঁদের ঋণ দেওয়া হবে। শর্ত ছিল, যে কাজের ভিত্তিতে ঋণ, তার ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ জমা করতে হবে ব্যাঙ্কে। কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখে দফায় দফায় ঋণ দেওয়া হবে। বিলের টাকা পুরসভা ওই ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই মেটাবে, যাতে ঋণের টাকা ব্যাঙ্ক কেটে নিতে পারে।

এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, তদন্তে দেখা গিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী দফায় দফায় না-দিয়ে ব্যাঙ্ক ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫৪ লক্ষ টাকা এক বারেই কয়েক জন ঠিকাদারকে দিয়ে দেওয়া হয়। সেই জন্য যে ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ জমা দেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্কে, সেগুলি ছিল ভুয়ো। তেমন কোনও প্রকল্প আদৌ হওয়ার কথাই ছিল না।

পুলিশ জানায়, এই পদ্ধতিতেই ২০১৬-’১৭ সালে ওই ব্যাঙ্ক থেকে কয়েকটি সংস্থাকে প্রায় ৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। সেই সংস্থাগুলির কোনওটির মালিকানা এবং কয়েকটির অংশীদারিত্ব ছিল পাপ্পুর নামে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ২৫ জন ঠিকাদারকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কয়েক জনের অ্যাকাউন্ট থেকে ঋণের টাকা সেই দিনই পাপ্পুর সংস্থার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। সেই টাকায় পরবর্তী কয়েক মাসে পাপ্পুর ওই সংস্থার ব্যাঙ্কঋণ শোধ হয়। অর্থাৎ, ব্যাঙ্কের টাকা ঘুরপথে পাপ্পুর অ্যাকাউন্টে এনে, তাতেই ঋণ শোধ হয়েছে। কিন্তু যে ঠিকাদারদের ব্যাঙ্ক ঋণ দিল, সেই টাকা আদৌ শোধ হয়নি। ওই ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে টাকা বাকি পড়ার জন্য কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

এই ঘটনায় পাপ্পুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একাধিক বার গোয়েন্দা দফতরে ডাকা হলেও তিনি হাজির হননি বলে জানিয়েছে পুলিশ। ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা কর্তা অজয় ঠাকুর জানান, আপাতত তিনি ‘ফেরার।’ তবে দু’জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ।

গোটা বিষয় নিয়ে অর্জুনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজনৈতিক লড়াইয়ে এঁটে উঠতে না-পেরে পুলিশকে দিয়ে ভুয়ো মামলা সাজিয়ে আমাকে হেনস্থা করছে তৃণমূল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Scam Bhatpara Cooperative Bank Arjun Singh CID
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE