তিনি কি তবে এ বার বেশি করে জাতীয় রাজনীতিতে অংশ নিতে চান? লকেটের জবাব, ‘‘আমার কোনও চাওয়া নেই। দলই শেষ কথা। নেতৃত্ব ঠিক করবে আগামী দিনে আমি জাতীয় স্তরে, রাজ্যে না কি কোনও বুথের দায়িত্বে থাকব। আমার কাছে সবটাই সমান। উত্তরাখণ্ডে তো আমি নিজের ইচ্ছায় যাইনি। দলের নির্দেশ গিয়েছি। আবার কোথাও যেতে বললে আবার যাব।’’
উত্তরাখণ্ডে প্রচারের দিনে। ফাইল চিত্র।
উত্তরাখণ্ডে ক্ষমতায় ফিরছে বিজেপি। সকাল থেকে এমন ‘ট্রেন্ড’ দেখার পর থেকেই খুশি লকেট চট্টোপাধ্যায়। কারণ, বিজেপি-র উত্তরাখণ্ড জয়ে তাঁরও অবদান রয়েছে। নির্বাচন ঘোষণার আগে থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে তিনি চলে যান প্রায় অচেনা রাজ্য উত্তরাখণ্ডে। গোটা প্রচারপর্ব মিটিয়ে ফিরেছিলেন বাংলায়।
বৃহস্পতিবার বিজেপি-র উত্তরাখণ্ড জয়ের পরে লকেট আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘ভাল তো লাগবেই। আমার কাছে দলের নির্দেশই শেষ কথা। নেতৃত্ব যা বলেছেন, অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। তার ফল ভাল হয়েছে দেখলে আনন্দ তো হবেই। কয়েক মাসে নিজের শহর হয়ে ওঠা দেহরাদূনে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।’’
বৃহস্পতিবার বিকেলেই নয়াদিল্লি রওনা দিচ্ছেন লকেট। প্রথমে দিল্লি। তার পরে গন্তব্য উত্তরাখণ্ড। শুক্রবারই দেরাদুনে। যোগ দেবেন বিজয় উৎসবে। এখনও পর্যন্ত যা পরিকল্পনা, তাতে হাজির থাকবেন নতুন সরকারের শপথগ্রহণেও।
রাজ্য বিজেপি-র নতুন কমিটিতে পুরনোরা অনেকে বাদ পড়লেও সাধারণ সম্পাদক পদ ধরে রাখতে পেরেছেন লকেট। হুগলির বিজেপি সাংসদ গত বিধানসভা নির্বাচনে চুঁচুড়া আসন থেকে পরাজিত হলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে গুরুত্ব পেয়েছিলেন। এই রাজ্যের নেতানেত্রীদের মধ্যে একমাত্র লকেটকেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়েছিলেন জেপি নড্ডা, অমিত শাহরা। লকেট হয়েছিলেন উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের সহ-পর্যবেক্ষক। উত্তরাখণ্ডের মাটি কামড়ে পড়েও ছিলেন। মাঝে লোকসভার অধিবেশন থাকলে দিল্লি আসা ছাড়া উত্তরাখণ্ডের মাটি ছাড়েননি। সেই উত্তরাখণ্ডে বিজেপি কাঙ্খিত জয় পাওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই আপ্লুত লকেট। জানালেন, বিকেলের ট্রেনেই দিল্লি যাবেন।
রাজ্যের পুরভোটের প্রচারে অংশ না নিয়ে তিনি উত্তরাখণ্ডে সময় কাটিয়েছেন। তার পরেও পুরভোটে বাংলায় বিজেপি-র ভরাডুবি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার তাঁর রয়েছে কি? এমন অভিযোগ রয়েছে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরেই। গত শনিবার দলের সাংগঠনিক বৈঠকে ‘আত্মবিশ্লেষণ’-এর দাবি তোলায় প্রকাশ্যেই অনেকে তাঁর সমালোচনা করেছেন। উত্তরাখণ্ডে ভাল ফলের পরে এ বার তাঁদের জবাব দেওয়ার ‘অস্ত্র’ হাতে পেলেন কি? লকেট বলছেন, ‘‘ভুল বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অনেকেই তাতে অংশ নিয়েছিলেন। আশা করি সবাই এখন বুঝবেন লকেট কেন উত্তরাখণ্ডে পড়েছিল।’’
রাজ্য বিজেপি নেতারা এ নিয়ে মুখ খুলতে না চাইলেও রাজ্য বিজেপি-তে ‘লকেট অনুগামী’ হিসেবে পরিচিত এবং অধুনা বরখাস্ত নেতা রীতেশ তিওয়ারি মনে করছেন বিজেপি-র জাতীয় রাজনীতিতে বাংলার ‘নতুন মুখ’ হতে চলেছেন লকেট। এখন উত্তরপ্রদেশে রয়েছেন রীতেশ। সেখান থেকেই তিনি বলেন, ‘‘লকেট’দির মধ্যে যে নেতৃত্বের শক্তি রয়েছে, ভিন্ন পরিবেশে গিয়েও যে তিনি ভাল কাজ করতে পারেন, সেটা উত্তরাখণ্ডের ফল দেখিয়ে দিল। আশা করি আগামী দিনে রাজ্য-রাজনীতির পাশাপাশি জাতীয় ক্ষেত্রেও লকেট’দির গুরুত্ব বাড়বে। আর তিনি সাফল্যও পাবেন।’’ বস্তুত, বাংলার অন্য যে নেতারা রাজ্যে লকেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখতে চান তাঁরাও উল্লসিত।
লকেটও কি এ বার আরও বেশি করে জাতীয় রাজনীতিতে অংশ নিতে চান? বিজেপি সাংসদের জবাব, ‘‘আমার কোনও চাওয়া নেই। দলই শেষ কথা। নেতৃত্বই ঠিক করবেন আগামী দিনে আমি জাতীয় স্তরে, রাজ্যে না কি কোনও বুথের দায়িত্বে থাকব। আমার কাছে সবটাই সমান। উত্তরাখণ্ডে তো আমি নিজের ইচ্ছায় যাইনি। দলের নির্দেশ গিয়েছি। ফের কোথাও যেতে বললে আবার যাব।’’
কেমন ছিল উত্তরাখণ্ডে দায়িত্ব সামলানোর দিনগুলো? লকেট বললেন, ‘‘খুবই চ্যালেঞ্জিং। দেহরাদূন, আলমোড়া, রূদ্রপুর, রানিখেত, কৌশানি, হৃষিকেশ— কোথায় যাইনি! কোনও কোনও জায়গায় অতীতে বেড়াতে গিয়েছি। কিন্তু কাজ করা তো বেড়ানো নয়। সোজা সফর ছিল না। প্রথমেই চিন্তা ছিল, ওখানকার মানুষ আমায় গ্রহণ করবেন তো! কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সবাইকে আপন করে নিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্পা সিংহ ভামী থেকে রাজ্য সভাপতি মদন কৌশিক সকলেই খুব সাহায্য করেছেন।’’ উত্তরাখণ্ডের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াও সহজ ছিল না বলে জানালেন লকেট। তাঁর কথায়, ‘‘একদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমায় বলেছিলেন, বাংলার থেকে এখানে ঠান্ডা কিন্তু বেশি। সাবধানে থাকবেন লকেট’জি।’’
উত্তরাখণ্ডে কাজ করার জন্য সেখানকার ভাষাও আয়ত্ত করতে হয়েছিলে দক্ষিণেশ্বরের মেয়ে লকেটকে। যিনি এখন বলছেন, ‘‘আমি ওখানকার ভাষাটাও যতটা সম্ভব শিখেছি। সেটা না হলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব হত না। হিন্দির সঙ্গে বাংলা মিশিয়ে কথা বলতাম। আর ওখানকার অনেক নেতা, কর্মী আমার থেকে বাংলা শিখতেন।’’
দেবভূমিকে তিনি যেমন ভালবেসে ফেলেছেন, তেমনই ভালবাসাও যে পেয়েছেন, তা-ও বললেন লকেট। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট মিটে যাওয়ার পরে চলে আসার সময় সবার কী মন খারাপ! যেন বাড়ির মেয়ে চলে যাচ্ছে। আমি বলেছিলাম, আমরা তো একটাই পরিবার। আবার আসব। ব্যাগ গোছানো হয়ে গিয়েছে। সত্যিই যাচ্ছি।’’
গত কিছুদিন দেখা গিয়েছে রাজ্য বিজেপি-র ‘বিক্ষুব্ধ’-দের নেত্রী হয়ে উঠেছেন তিনি। জয়প্রকাশ মজুমদার তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আগের দুপুরেও তাঁর সঙ্গৈ বৈঠক করেছেন। তিনি কি রাজ্যে ‘বিদ্রোহী সত্তা’ বজায় রাখবেন? লকেট বলেন, ‘‘সবার আগে ‘বিক্ষুব্ধ’ শব্দটা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বাড়িতে কেউ অন্য মত প্রকাশ করলে কি আমরা তাঁকে ‘বিক্ষুব্ধ’ বলি? এই ধারনা মন থেকে সরাতে হবে। সবাইকে বুঝিয়েসুজিয়ে, সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে। যা করলে দলের ভাল হয়, আমি সেটাই করে যাব। কিন্তু সেই কাজটা জাতীয় ক্ষেত্রে, রাজ্যে না বুথে সেটা ঠিক করবে দল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy