উত্তম কুমারকে মাল্যদান করছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সত্যজিৎ রায় একবার বলেছিলেন, “উত্তম কুমারের মতো কেউ নেই। এবং আগামীদিনে তৈরি হবেও না। শুধুমাত্র বাংলাই নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতেও তিনি তুলনাহীন।” সত্যজিৎ রায়ের সেই কথাগুলি বর্তমান সময়েও ঠিক ততটাই প্রাসঙ্গিক। মৃত্যুর ৪২ বসন্ত পরেও প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে উত্তম কুমার যেভাবে রাজত্ব করছেন, তা সত্যিই সেই কথা প্রমাণ করে।
প্রতি বছরের মতো এই বছরও উত্তম কুমারের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে গত ২৪ জুলাই উত্তম মঞ্চে গানে, গল্পে, কবিতায় উত্তম স্মরণ সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের ডিজিটাল মিডিয়া পার্টনার ছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
মঞ্চে প্রদীপ জ্বেলে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলকাতা মিউনিপ্যাল কর্পোরেশনের সদস্য দেবাশিষ কুমার, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা। অনুষ্ঠানের সূচনা করেন উদ্যোক্তা কমিটির সদস্য অভিষেক রায়, সাধারণ সম্পাদক তন্ময় কর সহ অন্যান্য অতিথিরা।
অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিলেন অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল। উদ্যোক্তা কমিটির পক্ষ থেকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর অভিনয়ে আপামোর বাঙালির মন জয় করেছে। সমৃদ্ধ করেছে বাংলা ছবির জগতকে। শিল্পীর সেই শিল্পসত্ত্বাকে সম্মান জানাতেই এভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয় তাঁকে।
উদ্যোক্তা কমিটির পক্ষ থেকে কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল তাঁর অভিনয় জীবনে ৬০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন। রূপোলি পর্দা ছাড়াও, থিয়েটারে তাঁর অভিনয় নজর কেড়েছে। নৃত্যশিল্পী হিসেবে তিনি বিদেশের মাটিতে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই পুরস্কারের দাবিদার একমাত্র তিনিই।”
কিংবদন্তি অভিনেত্রীর হাতে পুরস্কার ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন পিয়ারলেস হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। পাশাপাশি, পিয়ারলেস হাসপাতালের তরফ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন স্বরুপ তাঁকে একটি স্বাস্থ্য কার্ডও প্রদান করা হয়।
একই মঞ্চে সম্মান জানানো হয় বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির তিন দিকপাল টেকনিশিয়ানকে — ইলেকট্রিশিয়ান খাদু পাত্র, প্রযোজনা সহকারী বিশ্বনাথ দাস এবং প্রোডাকশন ম্যানেজার তাপস দাস। বাংলা চলচ্চিত্র নির্মাণে তাঁদের অবদানকে কুর্ণিশ জানান উদ্যোক্তারা। যদিও স্বাস্থ্যজনিত কারণে খাদু পাত্র এদিন উপস্থিত থাকতে পারেনি। তাঁর পরিবারের এক সদস্য সেই পুরস্কার গ্রহণ করেন।
পিয়ারলেস হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবীন্দ্র পাই এবং রত্না ঘোষাল তাঁদের হাতে সম্মানপত্র ও একটি হেল্থ সাপোর্ট সার্টিফিকেট তুলে দেন। যার মাধ্যমে তাঁরা পিয়ারলেস হাসপাতাল থেকে কম খরচে চিকিৎসা করাতে পারবেন। একই সঙ্গে এও ঘোষণা করা হয় যে পিয়ারলেস হাসপাতাল আগামী দিনে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের আরও ৪৫ জন টেকনিশিয়ানের স্বাস্থ্যের দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
এর পরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রদ্ধার্ঘ জানানো হয় মহানায়ককে। বাংলা শিল্প ও বিনোদন জগতের কিংবদন্তীদের গলায় উঠে আসে উত্তম কুমারের সিনেমার একের পর এক গান। যে গান শুনে এক লহমায় নস্টালজিয়ার দেশে ফিরে গিয়েছিল গোটা দর্শক মহল।
চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত জগতের সঙ্গে যুক্ত মোট ২৭ জন শিল্পী এদিন গানে গানে স্মরণ করেন বাঙালির চিরকালীন প্রেম, মহানায়ক উত্তম কুমারকে। এঁদের মধ্যে ছিলেন সুতপা ভট্টাচার্য, জোজো, গুরজিৎ সিং, মনোময় ভট্টাচার্য, সিসিপিয়া বন্দ্য়োপাধ্যায়, গৌরব সরকার, চন্দ্রিকা ভট্টাচার্য, অরিত্র দাশগুপ্ত, সপ্তক ভট্টাচার্য, বাবুল সুপ্রিয়, মনোজ মুরালি নায়ার, সৈকত মিত্র, লোপামুদ্রা মিত্র, স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, সুজয় ভৌমিক, আরফিন রানা, মাধুরী দে, ত্রিজয় দে, দেবারতি দাশগুপ্ত, সুস্মিতা সেন, শ্রীকান্ত আচার্য, অনামিকা সাহা ও দেবলীনা কুমার।
এখানেই শেষ নয়। মহানায়ককে নিয়ে উদযাপন এখনও বাকি রয়েছে। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশ একই স্থানে অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর উত্তম কুমারের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ফের তাঁকে স্মরণ করবে আপামোর বাঙালি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy