যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি। প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যু ঘটনার রিপোর্টে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক গাফিলতির কথা উল্লেখ করেছে তারা। মঙ্গলবারই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির (ইসি) বৈঠক। তার আগে ইউজিসির এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এল। সোমবার রাতে রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয় তাঁদের মধ্যে। যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ইউজিসির রিপোর্ট এবং মঙ্গলবারের কর্মসমিতির বৈঠকের বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে বলে জানান বুদ্ধদেব।
ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছিলেন ইউজিসি-র প্রতিনিধিরা। সেই প্রতিনিধিদের পরিদর্শনের ভিত্তিতেই রিপোর্ট দিয়েছে ইউজিসি। রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা খামতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। র্যাগিং রোধে যে সব পদক্ষেপের কথা বলা আছে ইউজিসি-র নির্দেশিকায়, সেগুলি মানা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে রিপোর্টে। প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য আলাদা হস্টেলের ব্যবস্থা নেই— এই প্রসঙ্গটিও উত্থাপন করা হয়েছে। রিপোর্টে এ-ও বলা হয়েছে যে, চুক্তির ভিত্তিতে কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁরাই সুপারিন্টেন্ডেন্ট হিসাবে কাজ করছেন। হস্টেলে পড়ুয়াদের নিয়ন্ত্রণ করার কোনও ক্ষমতাই তাঁদের হাতে নেই। র্যাগিং রোধে নজরদারির অভাবও রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ইউজিসি। হস্টেলে কখনওই ‘সারপ্রাইজ় রেড’ করেনি ওই দল। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও ওয়ার্ডেন নেই— এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। ইউজিসির তরফে রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি এবং অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের অনেক সদস্যই নানা বিষয়ে সরব হয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা হস্টেলে থাকছেন, এটা জানা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। এই রিপোর্ট গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে ইউজিসি। কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, সে নিয়েও জানাতে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে।
সোমবার রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, “ইউজিসি রিপোর্টে আমাদের বেশ কিছু খামতি ধরা পড়েছে সেই খামতিগুলি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হবে। রাজ্যপালও দ্রুত সেই সব বিষয় মিটিয়ে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন।” বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু বলেছেন, ‘‘ইউজিসির যে নির্দেশিকা রয়েছে, তা শুধু যাদবপুর নয়, রাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়তো মানা সম্ভব হয়নি। অত সংখ্যক হস্টেল নেই, সুপার নেই, স্থায়ী পদ নেই। পরিকাঠামো গত সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করব।’’
র্যাগিং রোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে গাফিলতির কথা রিপোর্টে উল্লেখ করেছে ইউজিসি। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার কর্মসমিতির বৈঠকে র্যাগিং নিয়ে আলোকপাত করা হচ্ছে না। অন্য দিকে, বৈঠকে অভ্যন্তরীণ কমিটির রিপোর্ট নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। কর্মসমিতির বৈঠক চলাকালীন বিক্ষোভ দেখাতে পারেন পড়ুয়াদের একাংশ।
গত ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের তিন তলার বারান্দা থেকে এক ছাত্র নীচে পড়ে যান বলে অভিযোগ। পরের দিন ভোরে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়। র্যাগিংয়ের জেরে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় প্রাক্তনী এবং পড়ুয়া মিলিয়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy