উদয়নকে নিয়ে রওনা দিল রায়পুর পুলিশ। —অভিজিৎ সিংহ।
তদন্তকারীরাই মানছেন, ধড়িবাজিতে তার জুড়ি মেলা ভার। তিন খুনে অভিযুক্ত উদয়ন দাস যে নাটকবাজিতেও কম যায় না, বৃহস্পতিবার ফের তার সাক্ষী থাকল বাঁকুড়া আদালত। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) অরুণকুমার নন্দীর এজলাসে উদয়নের আইনজীবী হিসেবে মক্কেলের জামিনের আবেদন করছিলেন অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়। আগের দিনের মতোই নিজের আইনজীবীকে থামিয়ে দিয়ে সিজেএমের উদ্দেশে উদয়ন বলে, ‘‘আমি জামিনের জন্য আবেদন জানাচ্ছি না।’’
ভোপালের সাকেতনগরের এই যুবকের এই আচরণে অবশ্য অবাক হচ্ছেন না জেলার পুলিশকর্তারা। বুধবারও কোর্টরুমে এমনই নাটক করেছিল উদয়ন। সে দিনও জামিনের আর্জি জানানোর আগে আইনজীবী অরূপবাবু সবে বলতে শুরু করেছিলেন— ‘‘আকাঙ্ক্ষা শর্মা আত্মহত্যা করেছেন।’’ তাঁকে বাধা গিয়ে উদয়ন বলে ওঠে, ‘‘স্যার, আকাঙ্ক্ষা মোটেই আত্মহত্যা করেনি। আমি স্বেচ্ছায় ওকে খুন করেছি।’’
এক দিনের জেল হেফাজত কাটিয়ে বৃহস্পতিবার উদয়ন তৃতীয় বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গীতা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয়। এ দিনও উদয়নকে দেখার জন্য বাঁকুড়া আদালত চত্বরে ভিড় ছিল। তবে, পুলিশি বন্দোবস্তও ছিল। পরে সিজেএমের এজলাসে তাকে হাজির করানো হয়। আকাঙ্ক্ষাদের পরিবারের আইনজীবী অজিত আকুলি নিহত তরুণীর ছবি দেখিয়ে উদয়নের কাছে চান, তাঁকে সে চেনে কি না। উদয়ন কাঠগড়া থেকে বলে, ‘আকাঙ্ক্ষা’। এ বার অরূপবাবু উদয়নের কাছে জানতে চান, সে গোপন জবানবন্দি দিয়েছে কি না। উদয়ন হ্যাঁ বলতেই অরূপবাবু বিচারকের কাছে জামিনের আর্জি জানান। তখনই উদয়ন বলে, ‘‘না স্যার, আমি জামিনের আর্জি জানাতে চাই না।’’ ফের অপ্রস্তুত হন উদয়নের আইনজীবী।
উদয়নের বিরুদ্ধে রায়পুরে তার বাবা ও মাকে খুন করে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সেই মামলার জন্য উদয়নকে নিজেদের হেফাজতে নিতে রায়পুর পুলিশ বুধবারই বাঁকুড়া আদালতে আবেদন জানিয়েছিল। এ দিন বিচারক উদয়নকে পাঁচ দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে রায়পুরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। বিচারক উদয়নের কিছু বক্তব্য রয়েছে কিনা জানতে চান। তখন সে বলে, ‘‘আমি বুধবার যা বলেছিলাম, সেই কথাই এ দিনও বলছি।’’ বিচারক তাকে জানান, রায়পুরের পুলিশ তাকে নিয়ে যেতে এসেছে। এজলাসে তখন তখন উপস্থিত দীনদয়াল উপাধ্যায় নগর থানার ইন্সপেক্টর পৃথ্বী দুবে। তাঁর দিকে ইঙ্গিত করে উদয়ন বিচারককে বলে, ‘‘ওঁর সঙ্গে আগেও আমরা কথা হয়েছে।’’ কিছুটা থেমেই সে বলে ওঠে, ‘‘আমি আমার অপরাধ স্বীকার করে নিচ্ছি।’’
এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ কোর্ট ইন্সপেক্টরের দফতর থেকে উদয়নকে নিয়ে রায়পুরের উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy