(বাঁ দিকে) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আবার চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০ সেপ্টেম্বর রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির কথা জানিয়ে এবং ডিভিসির উপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে মোদীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন মমতা। কেন্দ্রীয় জল শক্তি মন্ত্রকের তরফে সেই চিঠির জবাব দেওয়া হয়েছিল। জল শক্তি মন্ত্রী সিআর পাতিল দাবি করেছিলেন, রাজ্যের সম্মতি নিয়ে ডিভিসি জল ছাড়ে মাইথন এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে। সেই চিঠির জবাবে মোদীকে মমতা জানালেন, কেন্দ্রের বক্তব্য ঠিক নয়। অনেক সময়েই রাজ্যের সম্মতি ছাড়া জল ছাড়া হয়, দাবি তাঁর। এর প্রতিবাদে ডিভিসির কমিটি থেকে রাজ্যের প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মমতা।
চিঠিতে মোদীর উদ্দেশে মমতা লিখেছেন, ‘‘জল শক্তি মন্ত্রকের চিঠির প্রেক্ষিতে আমি এই চিঠি লিখছি। আপনার মন্ত্রী দাবি করেছেন, দামোদর ভ্যালি জলাধার নিয়ন্ত্রণ কমিটির মাধ্যমে মাইথন এবং পাঞ্চেত বাঁধ পরিচালিত হয়, যেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিও রয়েছেন। আমি তা মানি না। কেন্দ্রীয় জল কমিশন এবং জল শক্তি মন্ত্রকই এ ক্ষেত্রে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে থাকে। কখনও কখনও রাজ্যকে না জানিয়েই জল ছাড়া হয়। রাজ্যের অনুরোধও শোনা হয় না। শুধু তা-ই নয়, এ বার মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার নোটিসে ডিভিসি জল ছেড়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের জন্য ওই সময় পর্যাপ্ত ছিল না।’’
মমতা জানিয়েছেন, ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ডিভিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। তিনি জল না ছাড়ার অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুরোধ শোনা হয়নি। রাজ্য সরকার আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া অনুমোদনই করেনি। রাজ্যের তরফে জলের পরিমাণ কমিয়ে প্রথমে ২.৩ লক্ষ কিউসেক এবং পরে দু’লক্ষ কিউসেক করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুরোধ শোনা হয়নি। ডিভিসি উত্তর দিতে দেরিও করেছিল। যার ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।
মমতা বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে, আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার প্রয়োজন ছিল না। তা না হলে দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আকার ধারণ করত না। তাই আমার মনে হয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যে বলেছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সব রকম চেষ্টা করা হয়েছিল, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। জলাধার নিয়ন্ত্রণকারীরা ঠিক মতো কাজ করতে পারেননি। তা ছাড়া, মাইথন এবং পাঞ্চেতে সংস্কারের কাজ চলছে বলে আমি শুনেছি। সেগুলিও শেষ হয়নি। আমি ডিভিসির কমিটি থেকে আমার প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।’’
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নদীতে উপযুক্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প প্রয়োগ করা প্রয়োজন, মনে করেন মমতা। তিনি জানিয়েছেন, অবিলম্বে সে সব প্রকল্পের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তার সব খরচ রাজ্য সরকারের উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। ইতিমধ্যে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান (১২৩৮.৯৫ কোটি টাকা) এবং উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার (৪৯৬.৭০ কোটি টাকা) জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
মুর্শিদাবাদে ভূমিধস নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অর্থ বরাদ্দ এখনও বাকি আছে, মোদীকে চিঠিতে মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। তাঁর মতে, দক্ষিণবঙ্গে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োজন। কেন্দ্রের বরাদ্দ এ ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত। যা থেকে মনে হয়, বন্যা নিয়ন্ত্রণ আদৌ কেন্দ্রের অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। ফলে আগের চিঠির দাবিগুলি বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আরও এক বার অনুরোধ করেছেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy