অপেক্ষায় নিখোঁজদের পরিজনেরা। শ্যামনগর কালীবাড়ি ঘাটে শনিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
বানের ধাক্কায় ভুটভুটি হেলে গঙ্গায় এক কলেজ ছাত্র-সহ দু’জনের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ঘিরে শনিবার তপ্ত হল ভদ্রেশ্বরের তেলেনিপাড়া এবং উল্টো দিকের শ্যামনগর ফেরিঘাট। বছর পনেরোর একটি ছেলেকে দিয়ে ভুটভুটি চালানোর জন্যই দুর্ঘটনা, এই অভিযোগে শ্যামনগর ফেরিঘাটে তিন কর্মীকে মারধর করে টিকিট কাউন্টারের আসবাব ভাঙচুর করে গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়। যাত্রী-প্রতীক্ষালয়ের আলোপাখা ভাঙা হয়। একটি ভুটভুটির তেল ফেলে দেওয়া হয় গঙ্গায়। পুলিশ গিয়ে লাঠি চালিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। তেলেনিপাড়া ঘাটের বেহাল দশার জন্য বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো মানুষ। এই গোলমালের জেরে দু’পারের মধ্যে ভুটভুটি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দননগরের গোন্দলপাড়ায় স্পোকেন ইংলিশের টিউশন নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ তেলেনিপাড়া ঘাট থেকে ভুটভুটিতে ওঠে শ্যামনগরের অকল্যান্ড জুটমিল সংলগ্ন কুলিলাইনের বাসিন্দা, বছর এগারোর তেজস্বিনী এবং তার প্রতিবেশী, বছর কুড়ির কলেজ ছাত্র টোটাওয়েটার কিরণকুমার। সেই সময়ে ভুটভুটিতে আরও ক’জন ছিলেন। ভুটভুটিটি ছাড়ার মুহূর্তে গঙ্গায় বান আসে। সেই ধাক্কায় ভুটভুটির এক দিক হেলে যেতেই সকলে জলে পড়ে যান। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন অবশ্য উঠে পড়েন। ঘাটে থাকা লোকজন ঝাঁপ দিয়ে তেজস্বিনীকে উদ্ধার করলেও কিরণকুমার বা আর এক যুবকের নাগাল পাননি। এর পরে তল্লাশিতে নামেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও। কিন্তু রাত পর্যন্ত দু’জনের খোঁজ মেলেনি। তলিয়ে যাওয়া যুবকের পরিচয়ও জানা যায়নি। তেজস্বিনীকে চন্দননগর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে তেজস্বিনী বলে, “সপ্তাহে দু’দিন করে আমি আর কিরণকুমার চন্দননগরে টিউশন নিতে আসি। এ দিন আমরা এবং এক যুবক ভুটভুটির সামনের দিকে বসেছিলাম। বাকিরা ছিলেন পিছনে। বানের ধাক্কায় ভুটভুটি এমন ভাবে হেলে গেল যে আমরা পড়ে গেলাম।”
তেলেনিপাড়া এবং শ্যামনগর দু’পাড়েই ঘাটের বেহাল অবস্থা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। দুই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো যাত্রী পারাপার করেন। এ দিনের দুর্ঘটনার জেরে ফের সেই ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসে। শ্যামনগর ঘাটে এসে জড়ো হন ওই কুলিলাইনের শ’খানেক মানুষ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ছোট ছেলেদের দিয়ে ভুটভুটি চালানো হচ্ছে। বানের সময়ে কী ভাবে ভুটভুটি চালাতে হয়, সে ব্যাপারে তাদের অভিজ্ঞতা থাকে না। আগে ফেরিঘাটে জোয়ার-ভাটা বা বানের সময় লেখা থাকত। কিন্তু ইদানীং সেই রেওয়াজও উঠে গিয়েছে। তেলেনিপাড়া ঘাটেও কয়েকশো মানুষ ঘাট সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। ভুটভুটি চলাচল বন্ধ করে দেন। তাঁদের অভিযোগ, ঘাট থেকে ভুটভুটিতে ওঠার সময়ে সরু সাঁকো পেরিয়ে যেতে হয়। তার জন্য মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু ঘাট কর্তৃপক্ষ এ দিকে নজর দেন না।
হুগলি জেলা পরিষদের থেকে ‘লিজ’ নিয়ে শ্যামনগরের এক বাসিন্দাই তেলেনিপাড়ার দু’জনের সঙ্গে অংশীদারিত্বে দু’টি ঘাটের ফেরি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন। দুর্ঘটনার পর থেকে তাঁরা পলাতক বলে পুলিশ জানায়। চন্দননগরের মহকুমাশাসক পীযুষ গোস্বামী জানিয়েছেন, ভদ্রেশ্বর পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করে শীঘ্রই তেলেনিপাড়া ঘাট সংস্কারের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy