নয়ডায় ‘রেকি’ বা মহড়া করতে যাওয়ার কথা ছিল সাদ্দামের। প্রতীকী ছবি।
এই দফায় মহম্মদ সাদ্দাম ওরফে সাদ্দাম মল্লিক এবং তার সঙ্গী সইদ আহমেদ ঠিক বাংলায় নয়, অন্য রাজ্যে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে দিল্লিতে নাশকতা ও হামলার চক্রান্ত করছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। বিদ্যাসাগর সেতুতে ধৃত ওই জঙ্গিদের জেরা করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ বা স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা জেনেছেন, দিল্লির নয়ডায় সাদ্দামের অফিসের ঠিক পাশেই ছিল তাদের নাশকতার নিশানা। এবং এ বার নয়ডায় ‘রেকি’ বা মহড়া করতে যাওয়ার কথা ছিল সাদ্দামের।
এসটিএফ সূত্রের খবর, আইএস বা ইসলামিক স্টেটকে এ দেশেও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে এবং প্রচারের আলোয় আনতে দিল্লি সংলগ্ন এলাকায় দুই ব্যক্তির উপরে হামলারও ছক করেছিল সাদ্দাম। তাঁদের মধ্যে এক জন নয়ডায় সাদ্দামের অফিসের কাছেই থাকেন। এই পরিকল্পনা সফল করতে অস্ত্র জোগাড় করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল সাদ্দাম। পুলিশের দাবি, এই কাজের জন্য সে সিমি-র প্রাক্তন নেতা আব্দুল রাকিব কুরেশি এবং অন্যান্য জঙ্গির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল সমানে।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ পরপর দু’দিন সাদ্দাম ও সইদকে জেরা করে রিপোর্ট পাঠিয়েছে দিল্লিতে।
নাশকতার মতো জঙ্গি কার্যকলাপ যেখানেই চালানো হোক, তার চক্রান্ত করার জন্য এবং দুষ্কর্ম করে লুকিয়ে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট দুষ্কৃতীরা একটা নিরুপদ্রব, নিরাপদ আস্তানা খোঁজে বলে অপরাধবিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ। সাদ্দাম-সইদকে জেরা করে সেই তত্ত্বেরই মান্যতা পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। জেরায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সাদ্দাম ও সইদ আহমেদ বাংলায় লুকিয়ে থেকে দিল্লি এবং অন্য রাজ্যে নাশকতার ছক কষছিল। সেই জন্য চলতি মাসেই সাদ্দামের নয়ডা যাওয়ার কথা ছিল বলে কলকাতা পুলিশের দাবি।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এতে মূলত দু’টি তথ্য ও তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ১) সাদ্দাম-সইদেরা মূলত ঝঞ্ঝাটহীন আস্তানা হিসেবেই বাংলাকে ব্যবহার করে আইএস বা ইসলামিক স্টেটের জন্য সদস্য নিয়োগের কাজে ব্যস্ত ছিল এবং ভিন্ রাজ্যে নাশকতার ষড়যন্ত্র করছিল। ২) ভৌগোলিক কারণে কলকাতা, তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল তথা পশ্চিমবঙ্গকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে জঙ্গিরা এখানে গা-ঢাকা দেয় এবং বঙ্গে সচরাচর নাশকতা ঘটিয়ে নিজেদের আশ্রয়স্থলকে বিপন্ন করে তোলে না বলে যে-তত্ত্ব ও অভিযোগ আছে, তা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, সাদ্দাম নয়ডায় একটি সংস্থায় চাকরি করত। হাওড়ার বাড়ি থেকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ করছিল সে। আর ভিতরে ভিতরে চলছিল নয়ডায় নাশকতার তোড়জোড়। মধ্যপ্রদেশ থেকে ধৃত কুরেশিকে বুধবার কলকাতায় এনে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। সরকারি আইনজীবী জানান, সাদ্দামদের পরিকাঠামোগত সাহায্য করা ছাড়াও জেহাদি কাজে উদ্বুদ্ধ করত কুরেশি। বিচারক ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত কুরেশিকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তদন্তকারীরা জানান, কুরেশি-সহ আইএসের বিভিন্ন জঙ্গির সঙ্গে টেলিগ্রাম এবং সিক্রেট চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখত সাদ্দাম। তার মধ্যে সিরিয়ার এক আইএস নেতাও আছে। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের এক মহিলার সঙ্গেও নিয়মিত কথা হত সাদ্দামের।
এক তদন্তকারী জানান, সাদ্দাম-সইদ হাওড়া-সহ বঙ্গের কয়েকটি জায়গায় যাতায়াত করত একসঙ্গে। এর থেকে পুলিশের সন্দেহ, এ রাজ্যে দুই থেকে তিন জন আইএস জঙ্গি সক্রিয় আছে। আইএসের বাংলা মডিউলের সেই সদস্যদের খোঁজ চলছে। গোপনে স্লিপার সেল তৈরির উদ্দেশ্যে তরুণদের মধ্যে জেহাদি মতাদর্শ প্রচারের কাজেও যুক্ত ছিল কুরেশি। সাদ্দাম-সইদদের নিয়ে বঙ্গে যে-জঙ্গি মডিউল তৈরি হয়েছিল, তাতে প্রযুক্তিগত সহায়তা জোগাত কুরেশি। সন্ত্রাসবাদে টাকা জোগানোর ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy