Advertisement
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

পাড়াতেই খাবার খোঁজে অভিভাবকহীন কার্তিক-গণেশ

দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ব্লকের ব্রজবল্লভপুরের আদিবাসী পাড়ার অভিভাবকহীন দুই ভাইয়ের সারাটা দিন এখন এক মুঠো খাবারের খোঁজেই কেটে যাচ্ছে। খাবার না পেলে হাটে-বাজারে রাস্তার ধারে মুখ বুজে বসে থাকছে।

অনাহারে রুগ্ন বংশীহারির দুই ভাই কার্তিক ও গণেশ। দক্ষিণ দিনাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

অনাহারে রুগ্ন বংশীহারির দুই ভাই কার্তিক ও গণেশ। দক্ষিণ দিনাজপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৫৯
Share: Save:

কয়েক দিন ধরে আর বাড়িতে খেতে পাচ্ছে না কার্তিক ও গণেশ। আসলে, দুই ভাইকে বাড়িতে খেতে দেওয়ার কেউ নেই। তাই সকাল হতেই খাওয়ার জন্য অসহায় মুখে এ-পাড়া ও-পাড়া করে বেড়াচ্ছে আট ও দশ বছরের দুই নাবালক। সহৃদয় কোনও প্রতিবেশী কাছে ডেকে কিছু খাবার দিলে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে অনাহারক্লিষ্ট দু’টি মুখ।

দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি ব্লকের ব্রজবল্লভপুরের আদিবাসী পাড়ার অভিভাবকহীন দুই ভাইয়ের সারাটা দিন এখন এক মুঠো খাবারের খোঁজেই কেটে যাচ্ছে। খাবার না পেলে হাটে-বাজারে রাস্তার ধারে মুখ বুজে বসে থাকছে। বাড়িতে কেউ নেই। এক প্রতিবেশী জানালেন, ওরা তিন ভাই। বড়ভাই ১২ বছরের রামকে কয়েক দিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। খাবারের জন্য হয়তো কোথাও চলে গিয়েছে। তবে দাদাকে নিয়ে কার্তিক-গণেশের কোনও ভাবনা নেই। অনুভূতিহীন মুখে ওরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই প্রতিবেশী জানালেন, ওদের বাবা বুধু সোরেন ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। তবে বহুদিন গ্রামে আসেননি। ছোট ছেলে গণেশের যখন তিন মাস বয়স, তখন ওদের মা শান্তি স্বামী-সন্তানদের ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান।

তারপর থেকে তিন ভাই ঠাকুরমার কাছেই থাকত। দিন দশেক হল ঠাকুর মা মারা যেতেই কার্যত অনাথ হয়ে পড়ে ওরা।

দুই ভাইয়েরই হাড় জিরজিরে চেহারা। পরনে বলতে ছেঁড়া প্যান্ট। ঠাকুরমা মারা যাওয়ার পর ওই কুঁড়ে ঘরে খাবার দেওয়ার কেউ নেই ওদের। তাই ঘর ছেড়ে কারও দোকানের বারান্দায়, খড়ের গাদায় কিংবা রাস্তার ধারে কোনও শেডের নীচে রাত কাটাচ্ছে। প্রতিবেশী এক মহিলা ববিতা মণ্ডল জানালেন, তিনি এবং আরও কয়েক জন যতটা সম্ভব বাচ্চাগুলিকে দেখছেন। ডেকে খেতে দিচ্ছেন অনেকেই। কিন্ত ওদের স্থায়ী ব্যবস্থা না হলে অনাহারে বাচ্চা দু’টি অসুস্থ হয়ে পড়বে বলে ওঁদের আশঙ্কা। কথায় কথায় ক্লিষ্ট কণ্ঠে ববিতার মন্তব্য, ‘‘আর কয়েক দিন পর দুর্গাপুজো। আর দেখুন, তার আগে কার্তিক-গণেশের কী দুর্দশা।’’

গ্রামের অনেকেই ওদের দেখছেন। অনেকে সাহায্যও করছেন। তবে এখনও দুই নাবালকের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থায় স্থানীয় পঞ্চায়েত এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ অনেকের। এ ব্যাপারে বংশীহারির বিডিও সুদেষ্ণা পালকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে দুই নাবালক ভাইকে সরকারি হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। নিখোঁজ বড় ভাইয়েরও খোঁজ নেওয়া হবে বলে বিডিও আশ্বাস দেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Two Helpless Brothers South Dinajpu Bansihari Searching For Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy