নজরকাড়া: বাঁ দিক থেকে, তপতীদেবী ও সায়নী। নিজস্ব চিত্র।
দু’জনের লড়াইটাই জলের সঙ্গে। এক জন লড়েছেন প্রাণ বাঁচাতে। আর এক জন সাঁতারু হিসেবে বিশ্বের মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত হতে। দু’জনেরই ‘মনের জোর’কে কুর্নিশ জানাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের কর্তারা ওই দু’জনের লড়াইয়ের গল্প শুনিয়ে কন্যাশ্রীদের উদ্ধুব্ধ করতে চাইছেন। শিশু বয়স থেকে সাঁতার শেখার আগ্রহও বাড়াতে চাইছেন।
দু’জনের এক জন হলেন বছর কুড়ির কালনার সায়নী দাস। ঠান্ডা জলের ভয়ঙ্কর স্রোত আর জেলিফিশের সঙ্গে লড়াই করে সদ্য ইংলিশ চ্যানেল জিতে ফিরেছেন তিনি। আর এক জন, মেমারির কুচুট গ্রামের তপতী চৌধুরী। বছর বাষট্টির এই মহিলা সারা রাত দামোদর-মুণ্ডেশ্বরীর স্রোতের সঙ্গে লড়াই করে ফিরেছেন কালীবাজারের বাড়িতে।
জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “ওই দু’জনকেই মডেল করে পড়ুয়াদের উদ্ধুদ্ধ করা হবে। বর্ধমানের সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ওই বৃদ্ধাকে দিয়ে সাঁতার শেখার প্রয়োজনীয়তা বোঝানো হবে।” জেলা কন্যাশ্রী প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শারদ্বতী চৌধুরীও বলেন, “আমরা দশ জন মেয়ের পোস্টার করে অন্য কন্যাশ্রীদের ইচ্ছাশক্তি জাগানোর চেষ্টা করেছি। এখন আমাদের কাছে বাষট্টি বছরের মহিলার কাহিনি রয়েছে। তাঁর গল্প শুনিয়ে বলতে পারব, মনের জোর থাকলে ভয়ঙ্কর নদীও জয় করা যায়!”
সোমবার সংবাদপত্রে তপতীদেবীর ছবি-সহ প্রতিবেদন দেখে কালীবাজারের আমতলার দুর্গামন্দিরের পিছনে তাঁর ছেলের বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন পড়শি, আত্মীয়েরা। এসেছে একের পর এক ফোন। গোটা শহরে চর্চার বিষয় তপতীদেবীর বারো ঘন্টা জলে ভেসে থাকার কাহিনি। এ দিন তপতীদেবীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, রান্নাঘরে ছেলে-বৌমার জন্য মাছ ভাজছেন তিনি। বললেন “এমনিতে ঠিক আছি। তবে দুর্বল লাগছে।” তাঁকে দেখতে আসা সুচিতা রায়, ইতু নন্দীরা বলেন, “দেখে বোঝা যায় না এমন সাঙ্ঘাতিক সাহস আর মনের জোর রয়েছে ওঁর।” তপতীদেবীর পরিজনেরা বারেবারে পুরশুড়ার মারকুন্ডা ফেরিঘাটের মানুষজনকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। রবিবার সকালে মাঝিরা তপতীদেবীকে উদ্ধার করে ওই ঘাটেই তোলেন।
কালনার সায়নীও বলেন, “ওই বৃদ্ধার কাহিনি আমাকেও উদ্বুদ্ধ করবে।” আর তপতীদেবী এক গাল হেসে বললেন, “সাঁতার জানা সবার দরকার। এক বার শিখে ফেললে আর ভোলা যায় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy