প্রতীকী ছবি
স্মরণাতীত কাল থেকে সমাজের বৃহত্তর অংশের থেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে তাঁরা বহু দূরে, প্রান্তবাসী। অতিমারিতে সেই দূরত্ব এত বেড়েছে যে, সারা রাজ্যে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ প্রতিষেধক পেলেও টিকার সেই তালিকায় কুষ্ঠরোগী এবং তাঁদের সুস্থ-সবল পরিজনবর্গের নাম থাকছে না বলে অভিযোগ।
অগস্টেও পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ভাবে ‘অ্যাক্টিভ কেস সার্ভেল্যান্স’-এ ১১০০ নতুন কুষ্ঠরোগীর সন্ধান মিলেছে। এই মুহূর্তে ওষুধ খাচ্ছেন, এমন কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাই জানাচ্ছেন, কুষ্ঠরোগীর আসল সংখ্যাটা অনেক বেশি এবং সেটা আসলে কত, তা জানতেই গত অগস্ট থেকে চলছে বিশেষ সমীক্ষা।
সারা বাংলায় কমবেশি ৩৫টি কুষ্ঠ-কলোনিতে থাকেন ৫-৬ হাজার মানুষ। তাঁদের মধ্যে কুষ্ঠরোগী হাজার দেড়েক। বাকিরা তাঁদের আত্মীয়স্বজন এবং তাঁরা ওই রোগে আক্রান্ত নন। তবু সামাজিক ছুতমার্গের জেরে তাঁরাও কার্যত সমাজের বাইরে।
দুর্গাপুর থেকে কিছু দূরে সাগরভাঙা টাউন। তার থেকেও প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে টিলা-জঙ্গলের মাঝখানে একটি কুষ্ঠ কলোনি— ‘নমে সাগরভাঙা’। সেখানে ৮৫টি পরিবারে সদস্য ১৯৮ জন। তাঁদের মধ্যে মাত্র ২৪ জন কুষ্ঠরোগী। ১৮-৪৪ বছর বয়সি কুষ্ঠরোগী রয়েছেন ন’জন আর শারীরিক ভাবে সুস্থ ৭০ জন। তাঁদের মধ্যে মাত্র তিন জন করোনার টিকার প্রথম ডোজ় পেয়েছেন। ৪৫-এর বেশি বয়সিদের কেউ এখনও টিকা পাননি।
কার্তিক কালিন্দী নামে ওই কলোনির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কলোনিতে সব হদ্দ গরিব। শিক্ষা নেই, অর্থ নেই, খাবার নেই, শরীরে পুষ্টি নেই। এবং বেশির ভাগের ফোনও নেই। টিকার জন্য নাম নথিভুক্ত করব কী করে? কাছাকাছি মিউনিসিপ্যালিটি অফিস যেতে হলেও তো হাঁটতে হবে ১০ কিলোমিটার। কোনও যানবাহন নেই। বর্ষায় কাদারাস্তায় সাইকেলও চলে না। মিউনিসিপ্যালিটি বা কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা আমাদের হয়ে বলেনও না। সবাই ঘেন্না করেন।’’
দেশের সব নাগরিককে দ্রুত করোনার টিকাকরণের আওতায় আনতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। অথচ কুষ্ঠ কলোনিগুলির অধিকাংশ মানুষ তার বাইরে থেকে গিয়েছেন। অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে টিকাকরণের হার এক শতাংশেরও কম।
ভারত সরকারের জাতীয় কুষ্ঠ নিবারণী কর্মসূচির পশ্চিমবঙ্গীয় উপদেষ্টা প্রসূন মিত্র বলেন, ‘‘বিষয়টি উদ্বেগজনক। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে এই বিষয়ে একাধিক বার কথা হয়েছে। তাঁরাও ভাবনাচিন্তা করছেন। বিভিন্ন কলোনি থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, তাঁরা টিকা পাননি।’’ এই অবস্থা কেন? প্রসূনবাবুর ব্যাখ্যা, ওই কলোনিগুলির অধিকাংশই লোকালয় থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, প্রত্যন্ত এলাকায়। সেখান থেকে যানবাহন তেমন মেলে না। যাতায়াতের টাকাও থাকে না অনেকের হাতে। সমাজের অবহেলায় সিঁটিয়ে থাকেন বাসিন্দারা। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে তাঁরা কুণ্ঠা বোধ করেন। সব মিলিয়ে টিকাকরণ শিবিরে তাই আর পৌঁছনো হয় না ওঁদের।
পশ্চিমবঙ্গের কুষ্ঠ কলোনিগুলির বাসিন্দা কত জন, তাঁদের মধ্যে ক’জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, কেউ মারা গিয়েছেন কি না— এই সব তথ্যও স্বাস্থ্য দফতরের কাছে নেই। রাজ্যে কুষ্ঠ চিকিৎসা কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘সমস্যার কথা জানি। সমাধানের কাজও শুরু হয়েছে। এই সব পরিসংখ্যান চলতি মাসের শেষেই আমাদের হাতে আসবে।’’
তিনি জানান, সব জেলায় লেপ্রসি প্রোগ্রাম অফিসার ও মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের জানানো হয়েছে, টিকা শিবিরগুলিতে আলাদা ভাবে একটি দিন নির্দিষ্ট করে নিকটবর্তী কুষ্ঠ কলোনির বাসিন্দাদের টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। বাঁকুড়ায় ইতিমধ্যে তা শুরু হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy