স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ার জন্য কত জন সরকারি চিকিৎসককে ছাড়া যাবে, এই নিয়ে বিরোধের জেরে এখন খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায়।
শুরুটা হয়েছিল জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য-অধিকর্তাদের থেকে সাপ্তাহিক কাজের খতিয়ান আদায় নিয়ে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তখনই নতুন স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা ও সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে তিক্ততার সূত্রপাত। সম্প্রতি ৬২ জন সরকারি চিকিৎসককে স্নাতকোত্তরে পড়ার জন্য ‘রিলিজ’ দিতে অস্বীকার করায় সেই তিক্ততা চরমে পৌঁছেছে।
এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, স্বাস্থ্যসচিব তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল নন। এতে সুষ্ঠু পরিষেবা চালাতে সমস্যা হচ্ছে।’’
চলতি বছরে এমডি-এমএস-এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে ৫ লক্ষ টাকার বন্ড সই করে সরকারি অনুমতি নিয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন ২৯৩ জন সরকারি চিকিৎসক। এর মধ্যে স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের চিকিৎসক ৪১ জন। বাকি ২৫২ জন স্বাস্থ্য পরিষেবা (হেলথ সার্ভিস) বিভাগের। স্বাস্থ্য দফতর প্রত্যেককে সরকারি ‘স্পনসরশিপ’-এর শংসাপত্রও দিয়েছিল। ২৩১ জন রিলিজ পেয়ে গেলেও সমস্যা বাধে হেলথ সার্ভিসের ৬২ জনকে নিয়ে। অভিযোগ, মে মাস থেকে তাঁদের ঝুলিয়ে রাখার পরে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্যসচিব জানিয়ে দেন, ওই ৬২ জনকে ‘রিলিজ’ দেওয়া হবে না।
ওই চিকিৎসকদের আবেদনে সাড়া দিয়ে খোদ স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যসচিবের কাছে। কিন্তু স্বাস্থ্যসচিব তাঁকে জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্য দফতরের গত ২৪ মার্চের বিজ্ঞপ্তিতেই বলা হয়েছিল, হেলথ সার্ভিস থেকে ১৮৯ জনের বেশি চিকিৎসককে স্নাতকোত্তর পড়তে দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যে ১৯০ জনকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। ফলে বাকি ৬২ জনকে ছাড়া যাবে না। তখন চিকিৎসকদের অনুরোধে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা তাঁদের ‘স্টাডি লিভ’ দিয়ে স্নাতকোত্তর পড়তে দেওয়ার অনুরোধ সংক্রান্ত ফাইল স্বাস্থ্যসচিবের কাছে পাঠান। তাতেও অনুমতি মেলেনি। অন্য ডাক্তাররা তাঁর সঙ্গে আলোচনা করতে চাইলে, তাঁদের সঙ্গে কথাই বলেননি অনিলবাবু। উঠছে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও। ফলে সচিবের বিরুদ্ধে বেজায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে চিকিৎসক মহলে।
বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য-অধিকর্তা বলেছেন, ‘‘আমি স্টাডি লিভ সংক্রান্ত ফাইল পাঠিয়েছিলাম। তা অনুমতি পায়নি।’’ আর স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মার বক্তব্য, ‘‘আমি আইন মেনেই চলব। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আমার কোনও ব্যক্তিগত রাগ নেই।’’ তিনি কেন ‘স্টাডি লিভ’-ও নিতে দিচ্ছেন না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি বিচার করে দেখা গিয়েছে, ওই ৬২ জনকে ছাড়া যাবে না।’’
এর পরে ৬২ জনের পক্ষ থেকে এক চিকিৎসক মন্তব্য করেন, ‘‘স্বাস্থ্য-অধিকর্তা জানেন, রাজ্যে এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দরকার। অসংখ্য সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ইন্ডোর খোলা যাচ্ছে না বিশেষজ্ঞের অভাবে। আমরা পড়ার অনুমতি না পেলে ৬২টি মহার্ঘ্য আসন নষ্ট হবে। স্বাস্থ্যসচিব বুঝতে পারছেন না যে, যত জন ডাক্তার সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তাঁদের অধিকাংশই আসেন স্নাতকোত্তরে পড়ার সুযোগ পাওয়ার আশা নিয়ে। চলতি বছরের অভিজ্ঞতার পরে আরও কম ডাক্তার সরকারি চাকরিতে আগ্রহ দেখাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy