—প্রতীকী ছবি
অমর্ত্য সেন। নাসিরুদ্দিন শাহ। অমিতাভ বচ্চন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দিয়েগো মারাদোনা। কিংবা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। নামের তালিকা অনায়াসে লম্বা হতে পারে। ভূগোলের বেড়া ডিঙিয়ে সবার কপালেই যেন তারকা হওয়ার অভিশাপ। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আচমকা অসুস্থতা, বিশ্ব জুড়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের উৎকণ্ঠা, প্রার্থনার পটভূমিতেও কিছু বেসুরো প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই ক্ষুব্ধ।
কয়েক মাস আগে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অসুস্থতা, মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের সময়েও নেটরাজ্যে তাঁর পরিজনেদের নিয়ে বিচিত্র জল্পনা শালীনতার গন্ডি ছাড়িয়েছিল বলে অনেকের অভিমত। অমর্ত্য সেনের ঘটনা তো এখনও টাটকা। এ দেশের সব থেকে শক্তিশালী রাজনৈতিক শিবিরের বিরুদ্ধে বার বার প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়ার মাসুল হিসেবেই তাঁর পারিবারিক বাসভবন নিয়ে অপ্রমাণিত অভিযোগ হাওয়ায় ভাসানো হয়েছে। রাজ্যের বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। আবার বিজেপির রাজ্য নেতাকেও তাঁর বিরুদ্ধে খোঁচা দিতে দেখা গিয়েছে। নেটরাজ্যে নিগ্রহ বা ট্রোল-সংস্কৃতির আওতায় নতুন সংযোজন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন কি না, জল্পনার আবহেই ২০২১এর সূচনায় প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়কের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। তার পরেও প্রতিক্রিয়ার ফুলঝুরি ট্রোল-সর্বস্ব সমাজের মনটাকেই যেন বেআব্রু করছে।
তাঁর নতুন রাজনৈতিক-সংসর্গের চাপেই কি সৌরভের এমন অবস্থা হল? প্রশ্ন তুলে চলছে তির্যক খোঁচা। এক জন বিশিষ্ট চিকিৎসকও সৌরভকে মডেল করে ভোজ্য তেলের ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন নিয়ে মিম ‘শেয়ার’ করেছেন। তাতে লেখা, এই তেল খাবেন না।
বাস্তবে অবশ্য অনেকেরই প্রশ্ন, সেই তেলের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের মডেলের শারীরিক দুর্গতির কত দূর সম্পর্ক কিংবা সেই তেলের কত দূর খাদ্যগুণ, কে তার বিচার করে! দলমত-নির্বিশেষে রসিকতার প্রবণতা ‘শিষ্টাচারহীনতা’ বলে ফেসবুকেই এর সমালোচনা করেছেন বাংলা সাহিত্যর তরুণ কলেজশিক্ষক অনুনয় চট্টোপাধ্যায়। তিনি মনে করিয়েছেন, এর আগে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর অসুস্থতার সময়েও এমন অভব্যতা দেখা গিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও এ প্রবণতা আগে দেখা গিয়েছে। অমিত শাহের করোনার সময়েও অনেকেই উচ্ছ্বাসে মুখর হয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর সোমবারের বাইক র্যালিতে অনুমতি নয়, জানাল লালবাজার
“শত্রুর মৃত্যুকামনা কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিতে আগেও ছিল। হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় তা আর একটু প্রকট ভাবে দেখা যাচ্ছে। তবে এই হাবভাবের মধ্যে ভদ্রতার খামতি আছে। তাতে সামগ্রিক ভাবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ভাল হচ্ছে না।”, বলছেন কলকাতার অন্য একটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যর শিক্ষিকা স্বাতী মৈত্র। তবে চারপাশে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব থেকেও নানা মহলে ক্ষোভ জমছে বলে মনে করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর চোখের মণি বলে চিহ্নিত একটি শিল্প-গোষ্ঠীর ব্র্যান্ড ভোজ্য তেলকেও তাই এখন অনেকে নিশানা করেছেন। অনেকেই আবার মনে করেন, করোনা তাড়াতে থালা বাজানোর প্রশস্তির পরে অমিতাভ বচ্চন করোনাক্রান্ত হলে বা অতিমারি সামলানোয় দেশের সরকারের কৃতিত্বে মুখর অমিত শাহের করোনা হলে কিছু হাসিঠাট্টা অনিবার্য ছিল। কিন্তু এর বাইরেও রাজনৈতিক মদতপুষ্ট ট্রোল-বাহিনী অনেক তারকার বিরুদ্ধেই আসরে নেমেছে।
আরও পড়ুন: বাংলায় কত ভোট পাবে তৃণমূল? অভ্যন্তরীণ হিসেবে স্বস্তিতে ঘাসফুল
তারকা বা নেতারাও যে মানুষ, তাঁদেরও পরিবার-পরিজন আছে, এটা অনেক সময়ে আমরা ভুল যাই! সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের ঠিক পরে রুচিহীন কিছু প্রতিক্রিয়ায় ব্যথিত তাঁর ঘনিষ্ঠেরা সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়ে গিয়েছিলেন। সমাজতত্ত্বের প্রবীণ শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র দেখছেন, “সামাজিক পরিসরে অন্তরঙ্গ আর প্রকাশ্যের সীমারেখাই সোশ্যাল মিডিয়ায় গুলিয়ে যাচ্ছে। একটি দুঃসংবাদে সবাই হয়তো সমান কষ্ট পাবেন না। কিন্তু কোন কথাটা কখন বলতে নেই, সেই বোধটা আমরা হারিয়ে ফেলছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy