পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে খুনের কথা কবুল করেছেন ট্রলি-কাণ্ডের মা ও মেয়ে। পুলিশ সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে।
জেরার মুখে অভিযুক্ত মা আরতি ঘোষ এবং মেয়ে ফাল্গুনী ঘোষ জানিয়েছেন, সোমবার বিকেল ৪টে নাগাদ বছর পঞ্চান্নের প্রৌঢ়া সুমিতা ঘোষের সঙ্গে ঝগড়া হয় তাঁদের। সম্পর্কে সুমিতা ফাল্গুনীর পিসিশাশুড়ি। ঝগড়ার সময় ফাল্গুনী পিসিশাশুড়িকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। দেওয়ালে মাথা ঠুকে যাওয়ার পর জ্ঞান হারান সুমিতা। তাঁর জ্ঞান ফিরলে আর একপ্রস্ত ঝগড়া হয়। ঝগড়ার সময় ইট দিয়ে পিসিশাশুড়ির মুখে এবং ঘাড়ে আঘাত করেন ফাল্গুনী। তার পরেই জ্ঞান হারান ওই প্রৌঢ়া। এই ঘটনার সময় মা আরতি বাড়িতে ছিলেন বলে জানিয়েছেন ফাল্গুনী। তবে তাঁর এই দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জানতে পেরেছে ট্রলি ব্যাগে প্রৌঢ়ার দেহ ভরে মধ্যমগ্রামের ভাড়াবাড়ি থেকে ভ্যানে চেপে প্রথমে দোলতলা মোড়ে আসেন মা ও মেয়ে। সেখান থেকে নীল-সাদা ট্যাক্সিতে চেপে যান কুমোরটুলি ঘাটের কাছে। তার আগে প্রিন্সেপ ঘাটেও তাঁরা যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি করেছেন ট্যাক্সির চালক।
প্রৌঢ়ার পায়ের একাংশ কাটা ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মা-মেয়ে জানিয়েছেন, ট্রলি ব্যাগে ঢোকানোর জন্য মৃতের পায়ের পাতা দুটো কেটে দেন তাঁরা। তবে এই দাবির সত্যাসত্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, মধ্যমগ্রামের যে ভাড়াবাড়িতে মা-মেয়ে থাকতেন, সেখানে গত ১১ ফেব্রুয়ারি যান ওই প্রৌঢ়া। প্রৌঢ়ার বাড়ি অসমের যোরহাটে। শ্বশুরবাড়ি বর্ধমানের নন্দঘাটে। তবে দীর্ঘ দিন তাঁর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
অন্য দিকে, ফাল্গুনীর সঙ্গেও তাঁর শ্বশুরবাড়ির তেমন কোনও সম্পর্ক ছিল না। তার পরেও পিসিশাশুড়ি কেন ফাল্গুনীর বাড়িতে গেলেন, সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ থেকেই এই খুন কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ইতিমধ্যেই অসম এবং কলকাতায় প্রৌঢ়ার বেশ কিছু সম্পত্তি থাকার খবর পেয়েছেন তদন্তকারীরা। খুনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই মা ও মেয়েকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জনের দাবি খতিয়ে দেখতে তদন্তে চালাচ্ছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজও। মৃত প্রৌঢ়ার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
আরও পড়ুন:
এই ঘটনা প্রসঙ্গে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, “সকালে নর্থ পোর্ট থানায় খবর আসে। ঘটনাটি যে হেতু মধ্যমগ্রামে ঘটেছে, তাই সেখানকার পুলিশ বিষয়টি দেখছে। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে নেব। খুনের কারণ এখন স্পষ্ট নয়।” মধ্যমগ্রামে কলকাতা পুলিশের একটি দল যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।