কলকাতায় সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি। নিজস্ব চিত্র।
আসন সমঝোতা করতে গিয়ে ত্রিপুরায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টানাপড়েন চলছে কংগ্রেসের সঙ্গে। সাম্প্রতিক অতীতে বাংলার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে জট কাটানোর চেষ্টা করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু তারই সঙ্গে সঙ্গে লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের অন্যান্য রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রে একই রণকৌশলের জন্য সলতে পাকানো শুরু করল সিপিএম।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের বৈঠক শনিবার শুরু হয়েছিল কলকাতায়। কিন্তু ত্রিপুরা-জনিত পরিস্থিতির কারণে সে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তপন চক্রবর্তী রবিবার বিকালেই ফিরে গিয়েছেন আগরতলায়। মানিকবাবুরা আগরতলায় ফিরে রাত পর্যন্ত যখন জরুরি ভিত্তিতে দলীয় বৈঠক চালাচ্ছেন, সেই সময়ে কলকাতায় দ্বিতীয় দিনের শেষে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকেও ইতি টেনে দেওয়া হয়েছে। বাজেট অধিবেশনের কারণে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও কলকাতায় আসেননি। কেরলের মন্ত্রীরা রাতেই ফিরতি উড়ান ধরে নিলেও কেন্দ্রীয় কমিটির বাকি অনেক সদস্য রয়ে গিয়েছেন। তাঁদের আজ, সোমবার রানি রাসমণি আ্যাভিনিউয়ে সিপিএমের সমাবেশে অংশগ্রহণ করে নিজেদের রাজ্যে ফেরার কথা।
দলীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটির জবাবি বৈঠকে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ফের ত্রিপুরার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য সব রাজ্যেই বিজেপিকে ধাক্কা দিতে হবে। তার জন্য গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে এক জায়গায় এনে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ার চেষ্টা করতে হবে। এই বছরেই পরের দিকে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগঢ়ের মতো রাজ্যে ভোট রয়েছে। সিপিএম সূত্রের মতে, ইয়েচুরির ইঙ্গিত ছিল ওই সব রাজ্যের রণকৌশলের দিকেই।
ত্রিপুরায় বামফ্রন্ট ১৩টি আসন ছেড়ে রাখলেও কংগ্রেস ১৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সিপিএমের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, কথা বলে মীমাংসার সব রকম চেষ্টা হবে। তবে দুই বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক এবং আরএসপি-র যে একটি করে আসনে লড়ার কথা, তার উপরে কংগ্রেসের দাবি মানা সিপিএমের পক্ষে কঠিন। তারই পাশাপাশি ধর্মনগর ও কমলপুর আসনে প্রার্থী বদল করার জন্যও কংগ্রেসকে অনুরোধ করা হয়েছে সিপিএমের তরফে। আসন নিয়ে টানাপড়েনে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে কংগ্রেসের অন্দরেও। প্রদেশ স্তরের এক নেতার বক্তব্য, রাজ্যের এক শীর্ষ নেতা এবং এআইসিসি-র এক প্রতিনিধির কৌশলের কারণেই এমন জটিলতা তৈরি হয়েছে।
ইয়েচুরি অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত সময় নিতে হবে। কিন্তু আসনের জট কাটাতেই হবে। তিনি নিজেও যাচ্ছেন ত্রিপুরায়। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের বিরতিতে এ দিন ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘এই প্রথম বামফ্রন্ট ত্রিপুরায় ৬০ আসনে লড়ছে না। আসন সমঝোতা আরও দৃঢ় হবে ওই রাজ্যে। আগামী কয়েক দিনে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ তাঁর মতে, ত্রিপুরায় বিজেপির সরকার আইনের শাসন মানে না। গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরানোর লড়াই জরুরি।
নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইয়েচুরির বক্তব্য, ‘‘সারা দেশেই গণতন্ত্রের উপরে সব দিক থেকে মারাত্মক হামলা হচ্ছে বিজেপির শাসনে। নাগরিক অধিকার, সংবিধান, গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে আক্রমণ হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি সেই কারণেই মনে করছে, কেন্দ্রের সরকার থেকে বিজেপি-কে হটানো জরুরি। আমরা সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে আহ্বান জানাতে চাইছি সংবিধান ও মানুষের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা নেওয়ার জন্য।’’ তবে এত কিছুর পরেও রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র শেষে কাশ্মীরে আমন্ত্রণ পেয়েও সিপিএম যাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় কমিটিতেই!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy