Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kunal Ghosh

Kunal Ghosh: বহু তরুণ-তরুণী বিপদে, এসএসসিকে কেন্দ্র করে ‘গভীর সঙ্কট’ কাটিয়ে উঠবে তৃণমূল: কুণাল

দুর্নীতির অভিযোগে দলের নেতা-মন্ত্রীদের জড়িয়ে পড়ে গ্রেফতার হওয়ায় যে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা তৃণমূলের কাছে অচেনা নয় বলে জানালেন কুণাল।

‘সঙ্কট’ কাটিয়ে উঠবে তৃণমূল, মনে করেন কুণাল।

‘সঙ্কট’ কাটিয়ে উঠবে তৃণমূল, মনে করেন কুণাল। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ১২:২২
Share: Save:

শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ ঘিরে শাসকদলের অন্দরে যে ‘অস্বস্তিকর’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা মেনে নিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। দলের একটি অংশের ‘বিচ্যুতি’ এবং তাঁদের ভুলের কারণে বহু তরুণ-তরুণী যে বিপদে পড়েছেন, তা আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ অনুষ্ঠান ‘অ-জানাকথা’য় স্বীকার করে নিলেন কুণাল। তিনি জানালেন, যত দ্রুত সম্ভব আইনি পথে এই জটিলতার সমাধান করা যায়, তারই চেষ্টা চলছে। সরকার নিজের মতো করে সেই ভুল সংশোধন করছে। দলও চেষ্টা করছে দায়বদ্ধতার সঙ্গে পাশে দাঁড়ানোর। তবে প্রত্যয়ী কুণাল বলেন, এসএসসি-সহ একাধিক ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগের কারণে দলে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা শীঘ্রই কাটিয়ে উঠবে তৃণমূল।

শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘কেলেঙ্কারি’, গরু ও কয়লা পাচারের ‘দুর্নীতি’র অভিযোগে বর্তমানে জেরবার তৃণমূল। সেই সব মামলায় শাসকদলের একাধিক নেতার নাম জড়িয়েছে। এসএসসি-কাণ্ডে গ্রেফতার হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে হয়েছে তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে। নিয়োগ মামলাতেই কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে যিনি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ খুইয়েছেন। বেআইনি ভাবে নিয়োগের অভিযোগে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর মেয়ে। অন্য দিকে, গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন শাসকদল তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের সান্ধ্য আড্ডায় কুণাল বলেন, ‘‘একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। যা যা হয়েছে, তা ঠিক হয়নি। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে।’’

যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আশ্বস্ত করে তাঁর সংযোজন, ‘‘দলের একটি ক্ষুদ্র অংশের বিচ্যুতি এবং তাঁদের ঘিরে থাকা চক্রের কারণে বেশ কিছু তরুণ-তরুণী বিপদে পড়েছেন। ভুল সংশোধন করে কী ভাবে আইনি উপায়ে তার মোকাবিলা করা যায়, যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা যাতে ন্যায্য অধিকার পান, এখন সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি নিজেও তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ওঁদের সঙ্গে বসার পর আমারও খুব খারাপ লেগেছে। এক জন দিনের পর দিন ধর্নামঞ্চে বসে রয়েছেন। বাড়ি ফিরতে পারছেন না। অথচ তিনি দেখছেন, তাঁর জায়গায় অন্য এক জন বেতন পেয়ে যাচ্ছেন। আমি এই যন্ত্রণার কথাই বলতে চাইছি। ভুল হয়েছে।’’ গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে রয়েছে বলে জানালেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার যা যা পদক্ষেপ করার করছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বৈঠক করেছেন চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে। শিক্ষমন্ত্রী ব্রাত্য বসুও বৈঠক করছেন। গোটা বিষয়টি দেখছেন তিনি। গৌতম পাল (সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি হয়েছেন, মানিকের স্থলাভিষিক্ত)-ও দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ করা যায়, সংবেদনশীল মন নিয়ে তার চেষ্টা চলছে। পার্টিও অত্যন্ত দায়বদ্ধতার সঙ্গে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।’’

শিক্ষা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলে শাসকদলকে লাগাতার বিঁধে চলেছেন বিরোধীরা। লাইভ-আড্ডায় তাদেরও পাল্টা কটাক্ষ করেছেন কুণাল। তাঁর মত, ভুল স্বীকার করেই মানুষের দরবারে যেতে হবে তৃণমূল কর্মীদের। তবে পাশাপাশি, বাম-বিজেপির দুর্নীতির কথাও জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। তৃণমূল মুখপাত্রের কথায়, ‘‘আমি কোথাও নিজেদের ডিফেন্ড করছি না। কিন্তু বাম জমানার কথাও তো বলতে হবে। পাড়ার এক জন হোলটাইমারকে দেখানো হোক, যাঁর বাড়িতে সরকারি চাকরি নেই। বিজেপিও সুযোগ পেয়ে কল্যাণী এমসে চাকরি দিয়েছে। বিজেপি বিধায়কের মেয়ে ও পুত্রবধূ চাকরি করছেন। মানুষকে মনে করিয়ে দিতে হবে, অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে। তবে এ কথা ঠিক যে, আমাদের ভুলটা মেনে নিতেই হবে জনসাধারণের কাছে। বোঝাতে হবে, ভুল কোনও ব্যক্তি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তার অনুমোদন দেননি। সরকারও অনুমোদন দেয়নি।’’

দুর্নীতির অভিযোগে দলের নেতা-মন্ত্রীদের জড়িয়ে পড়ে গ্রেফতার হওয়ায় যে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তা তৃণমূলের কাছে অচেনা নয় বলেই জানালেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘অতীতেও এই ধরনের রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে তৃণমূল। ২০০৪ সালে, ২০০৬ সালেও এমন রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ২০০৬ সালে বিধানসভায় পর্যুদস্ত হয়েছে দল। পুরসভা চলে গিয়েছে। লোকসভায় মাত্র একটা আসন। সেখান থেকে ২০০৮ সালে পঞ্চায়েতে দু’টি জেলা পরিষদ, ২০০৯ সালের লোকসভা, ২০১০ সালের পুরসভা এবং ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসা। এ তো রূপকথার মতো ছিল। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কিছু অন্যায় হয়েছে। বেশ কিছু তরুণ-তরুণীর চোখের জল পড়েছে। বাস্তব স্বীকার করে সবিনয়ে সংশোধনে নেমেছে তৃণমূল। সাধারণ মানুষকে তাঁদের আস্থার জায়গাটা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটা ক্ষুদ্র অংশ ভুল করেছে। কিন্তু গোটা তৃণমূলই‌ যে তাঁদের বন্ধু, তা-ই বোঝানোর চেষ্টা করছি আমরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেনাপতিত্বে তৃণমূল আত্মবিশ্বাসী, এই গভীর সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।’’

কথা প্রসঙ্গে ‘নতুন তৃণমূল’ পোস্টার বিতর্কের কথাও টেনে এনেছেন কুণাল। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির দিন থেকেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের ছবি-সহ বড় বড় হোর্ডিং দেখা গিয়েছে। তাতে লেখা, ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে সামনে আসবে নতুন তৃণমূল।’ স্বাভাবিক ভাবেই যা রাজ্য রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস। প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগে অভিষেকও ‘ছয় মাসের মধ্যে নতুন তৃণমূল’-এর কথা নিজমুখে বলেছেন। সেই প্রসঙ্গে কুণাল বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন, এই তৃণমূলকে ২০১১ সালের তৃণমূলে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। যারা মানুষের আশা-ভরসা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতায় থাকলে যে মেদ জমে, সেই মেদ ঝরিয়ে ২০১১ সালের তৃণমূলে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এটাকেই নতুন তৃণমূল বলা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kunal Ghosh trinamool
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy