ফাইল ছবি
চলতি মাসে রামধনু গরিমার (প্রাইড মান্থ) আঁচে দুনিয়া উত্তাল। কিন্তু ‘ট্রান্সজেন্ডার শংসাপত্র’ পেতে দিশাহারা এ রাজ্যের রূপান্তরকামীরা।
কেন্দ্রের ট্রান্সজেন্ডার অধিকার রক্ষা আইনে দেশ জুড়ে বিভিন্ন রাজ্যেই এখন মসৃণ ভাবে শংসাপত্র পাচ্ছেন রূপান্তরকামী নারী বা পুরুষেরা। পশ্চিমবঙ্গেও এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু নিয়ম মতো অনলাইনে আবেদন করলেও ‘শংসাপত্র দেওয়া বন্ধ আছে’ বলে জানিয়ে দিচ্ছেন এ রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ, এর ফলে এই টানাপড়েনে রূপান্তরকামীদের স্বীকৃতির প্রশ্নে ক্রমশ পিছোচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। মাত্র ১৪ জন শংসাপত্র পেয়েছেন। সব থেকে এগিয়ে ওড়িশা (১৬৯৬ জন)। এগোচ্ছে অন্ধ্র, মহারাষ্ট্র, কেরল, গুজরাত। মণিপুর, জম্মু-কাশ্মীরও এ রাজ্যকে লজ্জায় ফেলছে। মে মাসেও মালদহ, দুই ২৪ পরগনার রূপান্তরকামী নারী, পুরুষের শংসাপত্র জুটেছে। কিন্তু সমকামী, রূপান্তরকামীদের আন্দোলনের গর্বের মাসে এসেই সব বন্ধ। নিয়ম অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের পোর্টালে হলফনামার কপি, পুরনো আধার কার্ড জমা দিয়ে আবেদনকারীকে শংসাপত্র চাইতে হয়। এর পরে কিন্তু শংসাপত্র দেয় ওই ব্যক্তি যেখানে থাকেন সেই জেলা প্রশাসন। জেলার কালেক্টর বা জেলাশাসকের সই থাকে শংসাপত্রে। কোনওরকম শারীরিক পরীক্ষা না-করে আইনত, আবেদনকারীকে এক মাসের মধ্যে শংসাপত্র দেওয়ার কথা।
এ রাজ্যে ট্রান্স অধিকার নিয়ে সক্রিয় সমাজকর্মী তথা রূপান্তরিত নারী তিস্তা দাস কিন্তু বলছেন, “আমার জানা শতাধিক রূপান্তরকামীর আবেদন আটকে রয়েছে।” পেশায় স্কুলশিক্ষক দক্ষিণ ২৪ পরগনার জনৈক রূপান্তরকামী পুরুষ অপেক্ষা করে ক্লান্ত! কলকাতায় ঘরছাড়া রূপান্তরকামীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের হোম গরিমা গৃহের আবাসিকেরাও শংসাপত্র পাচ্ছেন না। হোমটির কর্ণধার, রূপান্তরকামী নারী রঞ্জিতা সিংহের কথায়, “শংসাপত্র থাকলে রূপান্তরকামী নারী, পুরুষের আইনি লড়াই থেকে শুরু করে নানা ধরনের অধিকারের লড়াইয়ে সুবিধা হবে। দেশে রূপান্তরকামীদের সংখ্যাও কিছুটা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যেত।’’
তিস্তার কথায়, “দুই ২৪ পরগনা, নদিয়ার আধিকারিকেরা স্পষ্ট বলছেন, রাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ড (টিজি বোর্ড) তাদের এগোতে বারণ করেছে।” রাজ্যের শিশু ও নারীকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা নিজে টিজি বোর্ডের চেয়ারপার্সন। তিনি বলছেন, “২০২০-র কেন্দ্রীয় আইনটি এ রাজ্যে কার্যকর করার জন্য বিধি মেনে কিছু রুলস (নির্দেশ) তৈরি করা হচ্ছে। রাজ্যের আইন বিভাগ ছাড়পত্র দিলেই গেজেট নির্দেশিকা বেরোবে। তখনই জেলাশাসক শংসাপত্র দিতে পারবেন।” মন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যে টিজি বোর্ড দেশে অন্যতম পথিকৃৎ। বিলে তাদের কথাও অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অতীতে এ রাজ্যে কিছু প্রকল্পের কৃতিত্ব নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যে টানাপড়েন দেখা গিয়েছে। তবে শশী স্পষ্ট বলছেন, “এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় আইন মেনে জেলা প্রশাসনই শংসাপত্র দেবে।” ইতিমধ্যেই যাঁরা শংসাপত্র পেয়েছেন, তাঁদের কী হবে? সদুত্তর নেই কারও কাছেই।
কেন্দ্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল ডিফেন্সের প্রধান আর গিরিরাজ বলছেন, “ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জেলার আধিকারিকদের শংসাপত্র দেওয়ার তালিম হয়ে গিয়েছে। রাজ্য চাইলে কেন্দ্রীয় আইনে কিছু নির্দেশিকা জুড়তে পারে। কিন্তু শংসাপত্র দিতে দেরি ঠিক নয়।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy