প্রতীকী ছবি।
ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি শেখাতে অভিভাবকদের আগ্রহ ক্রমবর্ধমান। সেই চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে কলকাতায় সরকারের অধীন প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ইংরেজি শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন বলে প্রতীচী ট্রাস্টের সমীক্ষা-রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ওই সব স্কুলে সম্প্রতি সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত উন্নয়নও জরুরি। ছাত্রস্বার্থেই তাদের আরও বেশি সময় স্কুলে রাখা, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি-সহ আরও কিছু বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সমীক্ষার রিপোর্টে।
কলকাতা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অধীন ৫৯টি, কলকাতা পুরসভার অধীন ১৬টি স্কুল এবং পাঁচটি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে সমীক্ষা চালানো হয়েছে। সমীক্ষকেরা মোট ৮০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ৩১৮ জন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছেন। সমীক্ষায় উঠে এসেছে: ওই সব স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা চান, সন্তান ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত হোক, ইংরেজি বলতে পারুক। বেশ কিছু শিক্ষক পড়ুয়াদের ইংরেজি শেখানোর জন্য যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে চেষ্টা চালিয়েও যাচ্ছেন। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।
স্কুলগুলির পরিকাঠামো নিয়ে সবিস্তার সমীক্ষার পরে জানানো হয়েছে: প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের অধীন স্কুলগুলির মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশের শ্রেণিকক্ষের অবস্থা ভাল। কিছু পুর স্কুল ও শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শ্রেণিকক্ষের অবস্থা বেশ খারাপ। বহু শিশু শিক্ষা কেন্দ্রে পঠনপাঠন চলে মাত্র একটি ঘরে, কোথাও বা বারান্দায় ক্লাস বসে! শৌচাগারের দশা কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভাল নয়। সেগুলির মেরামতি বা পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন। ছাত্রছাত্রী অনুপাতে আরও শৌচাগার দরকার। পড়ুয়াদের জন্য বেঞ্চ-সহ আসবাবপত্র লাগবে অনেক স্কুলে। প্রতিটি স্কুলেই পানীয় জলের ব্যবস্থা করা দরকার। কিছু ক্ষেত্রে স্কুল-কর্তৃপক্ষের আরও সচেতনতা ও সদিচ্ছা প্রয়োজন। শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী এখন ভর্তির সময় জন্মের শংসাপত্র লাগে না। কিন্তু কিছু স্কুলে এখনও তা চাওয়া হচ্ছে।
সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের ভোটের কাজে লাগানোয় স্কুলের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংশ্লিষ্ট দফতরের দেখা উচিত, শিক্ষকদের দিয়ে এই ধরনের কাজ করাতে গিয়ে পাঠদিবস যেন কমে না-যায়, পড়ুয়ারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না-হয়। পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কিছু শিক্ষকের সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণাই নেই। পড়ুয়াদের আরও ভাল করে বোঝার এবং পড়ানোর জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ‘ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম’ দরকার। শিশু-মনস্তত্ত্ব, শিশুর আচরণ বিষয়ে শিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের আলোচনামূলক অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা করা উচিত।
রিপোর্ট বলছে: ওই সব স্কুলে পড়ে মূলত দিনমজুর, আনাজ বিক্রেতা, রিকশাচালকদের সন্তানেরা। তাদের অধিকাংশের বাড়ির পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এমনই যে, ওই সব ছেলেমেয়েকে আরও একটু বেশি সময় স্কুলে রাখতে পারলে তাদের উপকার হবে। অনেক বাচ্চার বাড়ির আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ এতটাই শোচনীয় যে, তাতে তাদের পড়াশোনার ইচ্ছেটাই নষ্ট হয়ে যায়। হয়তো বাড়িতে তাদের ছোট ভাইবোনকে দেখতে হয়। অথবা কাজ করতে হয় শিশু শ্রমিক হিসেবে। স্কুলে যে-সব পড়ুয়ার পড়াশোনায় কিছুটা বাড়তি সাহায্য প্রয়োজন, অতিরিক্ত সময় স্কুলে রেখে তাদের সেই সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। তাদের উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে খেলাধুলায়, সৃজনমূলক কাজে। ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়মিত যাওয়াটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিয়মিত পড়ুয়াদের বাড়ি গেলে তাদের দিকে যথাযথ নজর রাখার কাজটা সহজেই হয়ে যায়।
সমীক্ষকেরা দেখেছেন, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকের অনুপাত সন্তোষজনক। সেখানে ছাত্র ও ছাত্রী ভর্তির হার প্রায় সমান। কিন্তু ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর ভর্তির হার খুবই কম, মাত্র ১.৭%। এই ধরনের শিশুদের পড়ানোর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রয়োজন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সচেতনতার অভাবে অনেক অভিভাবকই এসসি-এসটি বা তফসিলি জাতি, জনজাতির শংসাপত্রটুকুও সংগ্রহ করেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy