Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
দুই জেলাতেই বন্‌ধ প্রায় সর্বাত্মক

বিক্ষিপ্ত গোলমাল, দিন কাটল ছুটির মেজাজেই

বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া বুধবার হুগলিতে বনধ্ ছিল প্রায় সর্বাত্মক। বনধে্র পক্ষে এবং বিপক্ষের ডাকাবুকোরা এ দিন সেইভাবে রাস্তায় না নামায় অশান্তি এড়ানো গিয়েছে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন। তবে জেলার কোথাও কোথাও অশান্তি এড়াতে পুলিশকে এ দিন সাময়িক বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে।

পান্ডুয়ায় সুনসান জিটি রোড। ছবি: সুশান্ত সরকার।

পান্ডুয়ায় সুনসান জিটি রোড। ছবি: সুশান্ত সরকার।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও পীযূষ নন্দী
হুগলি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৩৫
Share: Save:

বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া বুধবার হুগলিতে বনধ্ ছিল প্রায় সর্বাত্মক। বনধে্র পক্ষে এবং বিপক্ষের ডাকাবুকোরা এ দিন সেইভাবে রাস্তায় না নামায় অশান্তি এড়ানো গিয়েছে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন। তবে জেলার কোথাও কোথাও অশান্তি এড়াতে পুলিশকে এ দিন সাময়িক বলপ্রয়োগ করতে হয়েছে।

কোন্নগরের ক্রাইপার রোড়ে এদিন তৃণমূল এবং সিপিএম সমর্থকদের একপ্রস্থ সংঘর্ষ হয়। দু’দলের সমর্থকদের বিরুদ্ধেই মারপিটে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে পার্টি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ তোলে। দু’দলের মারপিটে কয়েক জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে চার জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয় চিকিৎসার জন্য।

সকালে কয়েকটি জায়গায় রেল এবং সড়ক অবরোধ করেন বন্‌ধ সমর্থনকারীরা। সকাল ৬টা নাগাদ সিপিএম সমর্থকরা হাওড়া-বর্ধমান মেন শাখার তালান্ডু স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করেন। খবর পেয়ে জিআরপি এবং মগরা থানার পুলিশ সেখানে গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেয়। ঘণ্টাখানেক অবরোধ চলে। হাওড়া-কাটোয়া শাখার গুপ্তিপাড়া স্টেশনেও অবরোধ করেন ধর্মঘটীরা। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে।

সকাল ৮টা নাগাদ মগরার গঞ্জের বাজারে জিটি রোড অবরোধ হয়। পুলিশ অবরোধ তোলে। চণ্ডীতলার গঙ্গাধরপুরে ৩১ নম্বর রুটে সকাল সা়ড়ে ৬টা নাগাদ ধর্মঘটের সমর্থনকারী সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা অবরোধ করেন। চণ্ডীতলা থানার পুলিশ অবরোধ তুলতে ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের বচসা হয়। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠতে সকাল ৯টা বেজে যায়। শিয়াখালা বাজারে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ অবরোধ করেন বন্‌ধ সমর্থনকারীরা। একদল তৃণমূল কর্মী-সমর্থক সেখানে গিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে। দু’দলের স্লোগান-পাল্টা স্লোগানে গোলমালের পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সেখানে পুলিশ সিপিএমের মিছিল বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূল মিছিল করে। মগরার বিভিন্ন জায়গাতেও পুলিশ তাদের মিছিল বন্ধ করে দেয় বলে সিপিএমের অভিযোগ।

চন্দননগরের খালিসানি কলেজে কেন ক্লাস হল না, সেই অভিযোগ তুলে ছাত্রেরা কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করেন। জনাইয়ের ভগবানদেবী গোয়েঙ্কা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে অনেক পড়ুয়া উপস্থিত হলেও শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মীদের দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ।

প্রধান শিক্ষিকা শিবানি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রতি ধর্মঘটেই অটো ভাড়া করে স্কুলে যাই। পায়ে চোট থাকায় বুধবার যেতে পারিনি। তাই, স্কুলের বিষয়টি বলতে পারব না।’’

বুধবারের বন্‌ধে আরামবাগে খোলা ছিল সবই। কিন্তু মানুষের ভিড় সেই ভাবে চোখে পড়েনি। শাসক দলের কড়া নজরদারিতে দোকানপাট, সরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক, ডাকঘর খোলা ছিল। ছিলেন সিংহভাগ কর্মী। কিন্তু কোথাও কোনও খদ্দের ছিল না। সর্বত্রই ছিল সুনসান। দিনের শেষে তাই শাসকদল চেষ্টা করলেও, বন্‌ধের ছোঁয়াচ আরামবাগ মহকুমা এ দিন এড়াতে পারেনি। বামেদের ডাকা ধর্মঘটের স্পষ্ট প্রভাব ছিল এই মহকুমায়।

এ দিন সকালে হুমকি এবং দু-একজনকে চড়-থাপ্পড় দেওয়ার পর বর্ধমান, আরামবাগ রাস্তায় গুটিকয়েক বাস চলাচল করেছে। বাসস্ট্যান্ডে যে সব বাস চালানো হয়নি সেগুলিতে লাঠির বাড়ি দিয়ে ক্ষতি করার চেষ্টা হয়। অন্যান্য স্থানীয় রুটেও গাড়ি কম চলেছে। বিকেলের পর গাড়ির সংখ্যা আরও কমে যায়। হলদিয়া থেকে বর্ধমান বা তারকেশ্বর কিংবা খড়গপুর থেকে বর্ধমান বা তারকেশ্বর— দূরপাল্লার বাস ছিল না।

আরামবাগ মহকুমা হাসপাতলের বহির্বিভাগেও অন্য দিনের তুলনায় ভিড় ছিল অনেক কম। আদালত খোলা থাকলেও গুটি কয়েক সরকারি আইনজীবী হাজির ছিলেন। ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে কোথাও কোনও অশান্তির খবর নেই জানিয়ে মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসুর দাবি, ‘‘সরকারি অফিগুলির সর্বত্রই প্রায় ১০০ শতাংশ হাজিরা ছিল।’’

ছবি: তাপস ঘোষ, প্রকাশ পাল, মোহন দাস, দীপঙ্কর দে ও সুব্রত জানা।

অন্য বিষয়গুলি:

Hooghly Trade Union strike Chanditala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE