বঙ্গে একদা হানা দিত ভিন্ রাজ্যের বর্গি। এ বার সেই ভূমিকায় দূষণকণা। অন্য রাজ্যের দূষণকণা দুষ্কৃতীদের মতো হামলে পড়ছে নিরন্তর! তাতেই রূপলাবণ্য নষ্ট হচ্ছে পাহাড়ের রানির।
দার্জিলিঙের পরিবেশ নিয়ে গবেষণায় এমনই তথ্য পেয়েছেন বোস ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, দিনে দিনে বিষিয়ে যাচ্ছে পাহাড়রানির বায়ু। বাড়ছে ‘এরোসল’ বা ভাসমান কণার মাত্রা। উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের কার্বনকণা এবং অন্য নানা ধরনের দূষিত কণা পাহাড়ের দূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
দার্জিলিঙে বাতাসের মোট দূষিত কণার ৪৭ শতাংশই বাইরে থেকে আসে বলে জানাচ্ছেন বোস ইনস্টিটিউটের অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, জলবায়ুর দিক থেকে দার্জিলিঙের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জীববৈচিত্রের নিরিখেও গুরুত্বপূর্ণ দার্জিলিং-সহ পূর্ব হিমালয়। ফলে দূষণে পরিবেশের ক্ষতি হতে থাকলে তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
এই দূষণ কতটা, তা-ও মেপে বার করেছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, দার্জিলিঙে প্রতি ঘনমিটারে পোড়া কার্বনের মাত্রা ১০-১২ মাইক্রোগ্রাম। যা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি। এই ধরনের দূষণের ক্ষেত্রে বেঙ্গালুরু, আমদাবাদের মতো শিল্পশহরও পাহাড়ের রানির পিছনে পড়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পাহাড়ি এলাকায় দূষণ এমনিতে কম হওয়ারই কথা। কিন্তু মহাবলেশ্বর, মাউন্ট আবুর তুলনায় দার্জিলিঙের দূষণ কখনও কখনও পাঁচ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি হয়ে যাচ্ছে।
দার্জিলিঙের এই দূষণের প্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন পর্যটকেরাও। এপ্রিলেও আচমকা হানা দিচ্ছে কালো রঙের মেঘ, ধোঁয়াশা। ফলে দিনভর প্রকৃতির শোভা সে-ভাবে চোখেই পড়ছে না। গাড়ি চালাতে গিয়েও নাজেহাল হচ্ছেন চালকেরা। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেই দুপুরে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং রওনা দিয়েছিলেন এক দম্পতি। কার্শিয়াং পেরোতেই কালো মেঘ-ধোঁয়াশায় চার পাশ প্রায় ঢেকে গিয়েছিল! গ্রীষ্মের দুপুরেও হে়ডলাইট জ্বালিয়ে ঢিমেতালে চলছিল গাড়ি। বিজ্ঞানীরা এই ঝঞ্ঝাটের পিছনে দায়ী করছেন ভিন্ রাজ্য থেকে লাগাতার ভেসে আসতে থাকা দূষিত কণাকেই।
কী ভাবে আসছে দূষিত কণা?
বোস ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, অক্টোবর-নভেম্বর এবং এপ্রিল-মে মাসে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে বর্জ্য এবং চাষের খেতে গাছপালা পো়ড়ানো হয়। তা থেকে যে-সব সূক্ষ্ম কালো কার্বনকণা তৈরি হয়, তা হাওয়ায় ভেসে নেপাল হয়ে চলে আসছে দার্জিলিঙে। সেখানে মেঘের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে এই কণা। তার ফলে মেঘ ও কুয়াশা বেশি ক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে। সেই কালো কার্বনকণা মেঘের মধ্যে মিশে তাপ শোষণ করতে থাকে। ফলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে মেঘের ভিতরেও। তাই মেঘের জলীয় বাষ্পকে তারা ঘনীভূত হতে দিচ্ছে না। তাই বৃষ্টি তো হচ্ছেই না। আবার মেঘও কাটছে না।
দেশি ও বিদেশি পাহাড়প্রেমী পর্যটকদের কাছে দার্জিলিং আজও অন্যতম সেরা গন্তব্য। কিন্তু এই হারে দূষণ বাড়তে থাকলে রানি কি টিকতে পারবেন, বিজ্ঞানীরা সন্দিহান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy