ঢাঙিকুসুমের বনপথে পর্যটকেরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
মাওবাদী সক্রিয়তার অভিযোগ ঘিরে হঠাৎই শিরোনামে গ্রামের নাম। ২৪ ঘণ্টা আগে ঘুরে গিয়েছেন খোদ রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ শীর্ষ পুলিশ কর্তারা। কিন্তু রবিবার বেলপাহাড়ির ঢাঙিকুসুম গ্রামের আনাচ-কানাচ ঘুরেও ছন্দপতনের আঁচ মিলল না। গ্রামের জীবনযাত্রা পুরোদস্তুর স্বাভাবিক। পাহাড়ি বনপথ উজিয়ে হদহদি ঝর্না চত্বরে পর্যটকদেরও নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল।
সিআরপি-র ‘দত্তক গ্রাম’ ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া ঢাঙিকুসুম। এখানে বেড়াতে এসেই খড়্গপুরের এক যুবক মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যদের মুখোমুখি হন বলে রটেছিল। তারপরই শুরু হয় পুলিশের তৎপরতা। ঝাড়গ্রামের জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর জানিয়ে দেন, ওই যুবক মাওবাদীদের গল্প ফেঁদেছিলেন। তবে শনিবার ঝাড়গ্রামে বৈঠক সেরে ডিজি নিজে ঢাঙিকুসুম ঘুরে যান। চড়াই-উতরাই বনপথ পেরিয়ে ঝর্নার কাছে গিয়ে তিনিও দেখেছেন, পর্যটকেরা নিশ্চিন্তেই বেড়াচ্ছেন।
ছবিটা বদলায়নি রবিবারও। ঝর্নার কাছেই দেখা মিলল কলকাতার উর্মি লাহিড়ি, হুগলির জীবন দাস ঘোষের মতো বেশ কয়েকজন পর্যটকের। এসেছিলেন ঝাড়গ্রামের ব্যবসায়ী অসীম সামন্ত ও তাঁর বন্ধু তপন করণ। সকলেই জানালেন, কোথাও ভয়ের লেশমাত্র নেই। তবে দুর্গম বনপথে রেলিং দিলে ঝর্না-দর্শন নিরাপদ হবে। এ দিন এলাকায় দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁরা পর্যটকদের গাড়ি, বাইকের নম্বর, নাম, ফোন নম্বর লিখে রাখছেন। এক সিভিক ভলান্টিয়ার জানালেন, সকালেও কয়েক দফায় কিছু পর্যটক ঘুরে গিয়েছেন। এসেছিলেন পর্যটন দফতর স্বীকৃত ‘ঝাড়গ্রাম ট্যুরিজম’-এর অধিকর্তা সুমিত দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘অপপ্রচারে পর্যটকেরা যে ভয় পাননি বোঝা যাচ্ছে। তবে অগ্রিম বুকিং করেছেন, এমন কিছু পর্যটক চিন্তিত। তাই নিজে এলাকায় ঘুরে ভিডিয়ো তুলে তাঁদের পাঠিয়েছি।’’
ঢাঙিকুসুম গ্রামটি আগে আরও দুর্গম ছিল। বছর চারেক হল চিড়াকুটি মোড় থেকে ঢাঙিকুসুম পর্যন্ত পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে চকচকে পিচ রাস্তা। তা ধরে ঢাঙিকুসুমে পৌঁছনোর পরে অবশ্য ঝর্না যাওয়ার মোরাম পথ অবশ্য বেহাল। আর কিছুটা যাওয়ার পরে রাস্তাই নেই। দু’পাশে ঘন জঙ্গলের মাঝে উঁচু-নিচু টিলার চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এগোতে হবে। তবে প্রায় চারশো মিটার গেলেই নয়নাভিরাম পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝর্না। নাম ‘হদহদি’।
এই গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দাই পাথরের বাসন তৈরি করেন। ২০১৮ সালে সিআরপি এই গ্রামকে দত্তক নিয়ে টেলারিং, ওয়েল্ডিং, রাজমিস্ত্রির কাজ, শালপাতার থালা-বাটি তৈরি, উন্নত পদ্ধতিতে বাবুই দড়ি তৈরির মতো প্রশিক্ষণ দিয়েছে গ্রামের মানুষকে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও দেওয়া হয়েছে। এ দিন গ্রামের কেউ ব্যস্ত ছিলেন পাথর কেটে থালা-বাটি তৈরির কাজে, কেউ ঘরোয়া যন্ত্রে সে সব মসৃণ করছিলেন। মাঠে গরু-ছাগল চরাতেও দেখা গেল কাউকে কাউকে।
স্থানীয়রা জানালেন, হদহদিয়ে জল পড়ে। সেই জন্যই ঝর্নার নাম হদহদি। আগে বাইরের লোকে ঝর্নার কথা জানত না। পিচ রাস্তা হওয়ার পরে গাড়ি নিয়ে অনেকেই আসেন। ঝর্নার আশপাশে মদের বোতল, থার্মোকলের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিকের গ্লাস পড়ে থাকতে দেখা গেল। গ্রামবাসীর ক্ষোভ, ছেলেছোকরারা ঝর্না চত্বরে মদ্যপান করে। পর্যটকেরাও খাওয়াদাওয়া সেরে উচ্ছিষ্ট ফেলে দিয়ে চলে যান। এতে তো পরিবেশ নষ্ট হয়!
মাওবাদীদের সঙ্গে জুড়ে যাওয়ায় গ্রামের নাম নষ্ট হয়েছে বলেও ক্ষোভ জানালেন অনেকে। গ্রামবাসী কাজল সিংহ, মতিলাল সিংহরা বললেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগে গ্রামের বড্ড দুর্নাম হয়েছে। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। শান্তিটাই ধরে রাখতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy