ছবি: সংগৃহীত।
সারদা, রোজভ্যালি, নারদ তদন্তের গতি এনেছে সিবিআই। এ বার মেট্রো ডেয়ারির শেয়ার হস্তান্তরের প্রশ্নে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর তলব পেলেন রাজ্যের দুই আমলা। ডাকা হয়েছে রাজ্যের মিল্ক ফেডারেশেনের চেয়ারম্যান তৃণমূল বিধায়ক পরশ দত্তকেও। শেয়ার হস্তান্তরের সময় তিনি মেট্রো ডেয়ারির চেয়ারম্যান ছিলেন। ইডি সূত্রে এ খবর পাওয়া গিয়েছে। অনেকের ধারণা, সিবিআইয়ের পর ইডি-ও নবান্নের দরজায় কড়া নাড়া শুরু করে দিল।
ইডি সূত্রের খবর, ১৪ অক্টোবর মিল্ক ফেডারেশনের ম্যানেজার (কোয়ালিটি অ্যাসিয়োরেন্স) তাপস কর, ১৫ অক্টোবর ফেডারেশনের তৎকালীন ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবব্রত চক্রবর্তীকে তাদের সল্টলেকের অফিসে ডেকে পাঠায় ইডি। তাঁর আমলেই মেট্রোর শেয়ার বিক্রি হয়। দেবব্রতবাবু এখন প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের বিশেষ সচিব। ১৬ অক্টোবর ডাকা হয়েছে পরশবাবুকে। প্রত্যেককেই ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট (ফেমা)-এ তদন্তের প্রয়োজনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হচ্ছে বলে ইডি নোটিস দিয়েছে।
এ ব্যাপারে পরশবাবু বলেন, ‘‘ফেমা-তে কেন ডাকা হল বোধগম্য হচ্ছে না। আমি যাব, যে প্রক্রিয়া মেনে শেয়ার বিক্রি হয়েছে, তা জানাব। সরকার কেভেন্টার্সকে শেয়ার বিক্রি করেছিল। পরে তারা কাকে সেই শেয়ার বিক্রি করেছে, তার দায় সরকারের নয়। সেটা ইডি-কে বুঝিয়ে বলব।’’ পরশবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের কাগজপত্র সব তৈরি এবং কোনও ভুলভ্রান্তি নেই। আমলারা ইডি-কে তা বুঝিয়ে দেবেন।’’
মেট্রো ডেয়ারির ৪৭% শেয়ার ছিল মিল্ক ফেডারেশনের হাতে। এর পর প্রক্রিয়া মেনে ৮৫ কোটি টাকায় শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয় কেভেন্টার্সকে। তার কিছু দিনের মধ্যেই মেট্রোর ১৫% শেয়ার ১৭০ কোটি টাকায় কেনে সিঙ্গাপুরের একটি সংস্থা। এর ফলে সরকারের অন্তত ৫০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে দাবি করে হাইকোর্টে মামলা করেছেন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী। পরশবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘মেট্রো ডেয়ারির সম্প্রসারণের জন্য কেভেন্টার্স ২০০ কোটি টাকা ঢালার প্রস্তাব দিয়েছিল। ১০০ কোটি টাকা দিতে হত ফেডারেশনকে। সেই টাকা না থাকাতেই শেয়ার বিক্রি করতে হয়েছে।’’ ইডি এখন দেখতে চায়, বাস্তবেও কি লেনদেন এমনই ‘স্বচ্ছ’। নাকি সিঙ্গাপুরের সংস্থার হাত ঘুরে কোনও প্রভাবশালীর টাকা ঢুকেছে মেট্রো ডেয়ারিতে।
ফেডারেশন সূত্রের খবর, যে দুই আমলাকে ডাকা হয়েছে, তাঁরা ইডির নানা প্রশ্নের লিখিত জবাব দিয়েছিলেন। এর আগে ইডি মিল্ক ফেডারেশনের কাছে এ সংক্রান্ত ফাইল ও তথ্য চেয়েছিল। তৎকালীন প্রাণিসম্পদ বিকাশ সচিব অনিল বর্মা সে সবের দায়িত্ব নিতে চাননি। তিনি অর্থ দফতরকে ইডির কাছে জবাবদিহি করতে বলেছিলেন। কিন্তু পর পর দু’বার অর্থ দফতর সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। এর মধ্যেই অনিলবাবুকে বদলি করে বিপি গোপালিকাকে প্রাণিসম্পদে নিয়ে যাওয়া হয়। গোপালিকা ইডি-কে মেট্রো সংক্রান্ত জবাব দেন। কিন্তু সন্তুষ্ট হয়নি ইডি। তাই ফের তলব করা হচ্ছে আমলা ও তৃণমূল বিধায়ককে।
ইডি’র এক কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘২০১৭ সালে বারাসতের যাত্রা উৎসবে এক ‘প্রভাবশালী’ পরশ দত্তকে মেট্রো ডেয়ারির শেয়ার কেভেন্টার্সকে বিক্রি করে দিতে বলেছিলেন। তার পরই অতি দ্রুত সেই কাজ সেরে ফেলা হয়। সদ্য বিদায়ী মুখ্যসচিব মলয় দে দায়িত্ব নেওয়ার পর মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই প্রস্তাবটি পাশ করিয়ে নিয়েছিল অর্থ দফতর।’’ তাঁর মতে, আমলারা নিজেদের উদ্যোগে মেট্রো ডেয়ারি বিক্রি করতে এগিয়েছিলেন, নাকি প্রশাসনের শীর্ষমহলের চাপ ছিল, তা জানা দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy