—প্রতীকী চিত্র।
দু’বছর আগে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যার যন্ত্রণা যেন আর এক বার মূর্ত হয়ে উঠল কলকাতার নেতাজি ভবনে। রবিবার সন্ধ্যায় যখন এ বছরের শরৎচন্দ্র বসু স্মারক বক্তৃতা দিতে মঞ্চে উঠলেন দীর্ঘ সময় আবের মন্ত্রিসভার বিশেষ উপদেষ্টা, অধ্যাপক তোমোহিকো তানিগুচি।
সুভাষচন্দ্রের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে বরাবরের ভারতবন্ধু এবং সুভাষ-অনুরাগী আবেকে নেতাজি পুরস্কারে ভূষিত করে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো। তখন অতিমারি-আবহে তিনি আসতে পারেননি, কিন্তু আবের লেখা বক্তৃতা পড়া হয়। তাতে ২০০৭ সালে অধ্যাপিকা কৃষ্ণা বসুর সঙ্গে ঘুরে ঘুরে নেতাজি ভবনের সংগ্রহালয় দেখার কথা বলেন জাপানের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী। তানিগুচি এ দিন আবেগ ভরা কণ্ঠে বলছিলেন, “আজ হয়তো আবের নিজেরই এই অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল। ভারত-জাপান সম্পর্কের ব্যাপারে আবে ছিলেন অদম্য আশাবাদী। আজ থাকলে তিনি নিজেই গেয়ে শোনাতেন কদম কদম বঢ়ায়ে যা…!” আজ়াদ হিন্দ ফৌজের গানের দু’কলি দৃপ্ত স্বরে গেয়ে সভাকে মুগ্ধ করেন তানিগুচি।
আবের বহু বক্তৃতাই তানিগুচির লেখা। জাপানি জাতির প্রাণের মানুষ আবের হৃদয়তন্ত্রীর ঠিকানাই এ দিন উজাড় করে দেন তানিগুচি। আবেকে যখন হত্যা করা হয়, তখনও নিজের পড়ার ঘরে ২০০৭ সালে দিল্লির সংসদ কক্ষে আবের বক্তৃতা নিয়েই একটি প্রবন্ধ লিখছিলেন তানিগুচি। ‘কনফ্লুয়েন্স অব দ্য টু সিজ’ বা ‘দুই সাগরের মোহনা’-শীর্ষক সেই বক্তৃতায় ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতির যে রূপরেখা আবে তুলে ধরেন তা আজও প্রাসঙ্গিক। তানিগুচি এ দিন বলেন, “আবে বিশ্বাস করতেন, গণতন্ত্রের কাঠামোই সব থেকে মজবুত। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের পুবে জাপান, পশ্চিমে ভারতই আস্থাস্থল। চিনে পরিস্থিতি টলমল করতে পারে, কিন্তু ভারত এবং জাপান ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা থাকবে। ভূ-রাজনীতির কৌশল নিয়ে আবের বোধ ছিল সহজাত।” কার্যত আবের সুরে সুর মিলিয়েই তানিগুচি আরও বলেন, “ভারত এবং জাপানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতে বিশ্বাস রাখাটাই সময়ের দাবি।”
স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিষয়ে আবের আগ্রহের কথাও তুলে ধরেন তানিগুচি বলেন, “ভারত ও জাপান গণতন্ত্র, স্বাধীনতা বা মানবাধিকার রক্ষায় শরিক। কিন্তু বাংলার সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক গভীর ভাবে আত্মিক, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না।” নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর চেয়ারপার্সন সুগত বসুও এ দিন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র এবং তাঁর মেজদাদা শরৎচন্দ্র বসুর ‘এশীয় ফেডারেশন’-এর আদর্শে প্রত্যয়ের কথা তুলে ধরেন। জাপান ভারতের দুঃখের দিনের বন্ধু। ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে সুভাষচন্দ্রের অজ্ঞাতবাস কালে এলগিন রোডের বসুবাড়িরও পরম বন্ধু জাপান। তাও বলছিলেন সুগত। এ দিনই হর্ষ ভি পন্ত এবং মধুছন্দা ঘোষের সম্পাদনায় ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড জাপান: আ ন্যাচারাল পার্টনারশিপ ইন দ্য ইন্দো-প্যাসিফিক’ বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হয়।
‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের দিন (৯ অগস্ট) সুভাষ স্মৃতি-বিজড়িত কিছু অমূল্য সামগ্রীও নেতাজি ভবনে প্রদর্শনের জন্য রাখা থাকবে বলে জানান নেতাজি রিসার্চ ব্যুরোর অধিকর্তা সুমন্ত্র বসু। এর মধ্যে তরুণ সুভাষের চশমা, স্কুল-কলেজের কৃতিত্বের মেডেল এবং সিঙ্গাপুরে প্রবাসী ভারতীয়দের দেওয়া ভালবাসার উপহার সোনার রোলেক্স ঘড়িটিও থাকবে বলে জানান সুমন্ত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy