খুশি। পুলিশ জেলা হওয়ায় লাড্ডু বিতরণ। ফরাক্কায়। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
পুলিশ জেলা হিসেবে মুর্শিদাবাদকে দু’টুকরো করার পিছনে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ‘ভোট রাজনীতি’র ইশারা খুঁজছেন বিরোধীরা।
কংগ্রেস এবং বিজেপি’র অভিযোগ, জেলার সদ্য প্রাক্তন পুলিশ সুপারকে মুর্শিদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি পদে নিয়োগ এবং তাঁর দফতর রাতারাতি নদিয়ার কল্যাণী থেকে বহরমপুরে সরিয়ে এনে ফের পঞ্চায়েত ভোটেরই পুনরাবৃত্তি করতে চাইছে তৃণমূল। জেলা জুড়ে অপেক্ষা করছে একাধিক পুর নির্বাচন। কংগ্রেসের এক তাবড় জেলা নেতার দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে ভাবে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধীদের বুথে ঘেঁষতে দেয়নি তৃণমূল, পুর-ভোটেও সে খেলারই পুনরাবৃত্তি ঘটাতে ডিআইজি পদে রেখে দেওয়া হয়েছে মুকেশ কুমারকে। তাঁর দফতরও সরিয়ে আনা হয়েছে বহরমপুরে।’’
এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনে জেলার মানুষের পাশে থেকে মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। দিল্লি থেকে মুর্শিদাবাদেই এখন বেশি সময় দিচ্ছেন কংগ্রেসের বিরোধী দলনেতা তথা স্থানীয় সাংসদ অধীর চৌধুরী। জেলার আনাচকানাচে তাঁর ডজনখানেক সভায় উপচে পড়া ভিড় সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। কংগ্রেসের পায়ের নীচে হারানো জমির ফিরছে দেখেই তড়িঘড়ি এই পুলিশ-জেলা ভাগ করা হল বলে মনে করছেন তাঁরা।
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস কোনও আড়াল না রেখেই তাই এই পুলিশ জেলা বিভাজনের সমালোচনা করছেন, “ভোট-রাজনীতির কুটিল চিন্তা থেকেই এই পুলিশ জেলা ভাগ। না হলে, একটি মহকুমা নিয়ে কখনও পুলিশ জেলা ভাগ করা হয়! শুধু তাই নয়, বিভাজনের পরে ডিআইজি করে ফিরিয়ে আনা হল সেই মুকেশ কুমারকে, যাঁর প্রচ্ছন্ন মদতের পূর্ণ সুযোগ নিয়েই গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীদের কোণঠাসা করেছিল তৃণমূল।’’ ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল হক বলেন, “পুলিশ জেলা ভাগ করে সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হবে বলে মনে হয় না। লাভ যদি হয় তা হবে শাসক দলের। মুর্শিদাবাদের ২৭টি থানার মধ্যে মাত্র ৫টি থানা নিয়ে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা তৈরির অর্থ তা থেকেই স্পষ্ট!’’
বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি মাফুজা খাতুন গত লোকসভায় প্রার্থী ছিলেন জঙ্গিপুরে। তাঁর ব্যাখ্যা, “মুকেশ কুমারকে জেলায় রাখতে জেলা ভাগ একটা পরিকল্পিত ছক। পঞ্চায়েত ভোটের সাফল্যের উপহার বলতে পারেন এটা! একই কায়দায় জেলায় ২টি লোকসভাও দখল করা হয়েছে। এই ভোটে পুরসভায় সব কটাতেই প্রায় পিছিয়ে জেলায় শাসক দল। তাই সেগুলি দখল করতে এ ভাবে পুলিশ জেলা ভাগ করা হয়েছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আবুল হাসনাত খান বলছেন, ‘‘সুশাসনই যদি জেলা ভাগের উদ্দেশ্য হয়, তবে এতটুকু এলাকা নিয়ে কেন! আসলে পঞ্চায়েতের সাফল্যের পুরস্কার হিসেবেই এই রদবদল। একই কায়দায় এবার পুর নির্বাচে সাফল্য চায় তৃণমূল।’’
তৃণমূলের এক পরিচিত নেতাও। বলছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। একদা অধীরের গড় হিসেবে পরিচিত মুর্শিদাবাদে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক সংখ্যালঘুরা। হালে তা অনেকটাই নড়বড়ে করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র উত্থান এবং এনআরসি’র জুজুকে হাতিয়ার করে অধীরের পুনরুত্থান যে তৃণমূলের কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ ফেলেছে, অস্বীকার করার উপায় নেই। হয়ত সে কারণেই এমন তড়িঘড়ি পুলিশ জেলা ভাগ।’’
সে কথা অবশ্য মানছেন না দলের জেলা সভাপতি আবু তাহের খান, বলছেন, ‘‘এ সব বিরোধীদের নিছক অলীক কল্পনা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy