Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Mamata Banerjee

‘ব্যক্তিবিশেষ’ নন, সংসদে দলীয় অবস্থান ঠিক করবেন দলের সংসদীয় নেতৃত্ব, বলে দিলেন ‘চেয়ারপার্সন’ মমতা

শীতকালীন অধিবেশনে সংসদীয় দলকে মমতা যে অনুশাসনে বাঁধতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল গত সোমবার জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেই। সেখানেই সংসদ বিষয়ক শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন তিনি।

TMC\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s stand in Parliament will be decided by the leadership of the parliamentary party, said Mamata Banerjee

(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:২৮
Share: Save:

সংসদে দলের অবস্থান কোনও ‘ব্যক্তিবিশেষ’-এর বিষয় নয়! জানিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার মমতা বলেন, ‘‘পার্লামেন্টে স্ট্যান্ডটা আমাদের কারও ইন্ডিভিজুয়্যাল ম্যাটার নয়।’’ অর্থাৎ, সংসদে অবস্থান কোনও ব্যক্তিবিশেষের বিষয় নয়। তার পরেই মমতা জানিয়ে দেন, ওই বিষয়ে অবস্থান নেবে তৃণমূলের সংসদীয় দল। সেই সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন যে তিনিই, তা-ও ঘোষণা করেন মমতা। পাশাপাশিই তিনি দলের অবস্থান ঠিক করার বিষয়ে লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে পাঁচ সাংসদের নামও ঘোষণা করে দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পদে হেমন্ত সোরেনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাঁচী গিয়েছিলেন মমতা। সন্ধ্যায় কলকাতায় ফিরে ওই ঘোষণা করেছেন। বিষয়ভিত্তিক দলের অবস্থান নির্ধারণ করার বিষয়ে তৃণমূলনেত্রী প্রাথমিক ভাবে যে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করেছেন, তাঁরা হলেন লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, উপ দলনেতা সাগরিকা ঘোষ এবং মুখ্য সচেতক নাদিমুল হক। মমতা বলেন, ‘‘ওঁরা আগে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার পর আমায় জানালে আমি পরামর্শ দেব।’’

মমতার ওই ঘোষণার পরে তৃণমূলে আলোড়ন শুরু হয়েছে। কারণ, ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বুধবার দিল্লিতে দলীয় সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি বলেছিলেন, তৃণমূলের কেউ ‘ব্যক্তিগত’ উদ্যোগে যেন সংসদে কোনও বিষয়ে মুলতুবি প্রস্তাব না আনেন। পাশাপাশিই তিনি ওই বৈঠকে সংসদে তোলার জন্য ‘মানুষের সঙ্গে জড়িত’ বিষয়গুলি চিহ্নিত করেছিলেন। সাংসদদের প্রতি তাঁর নির্দেশ ছিল, আগামী ২০ ডিসেম্বর (শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন) পর্যন্ত ওই বিষয়গুলিতেই নোটিস দিয়ে সেগুলি আলোচনা করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যে বিষয়গুলি নিয়ে সংসদে সরব হওয়ার কথা অভিষেক বলেছিলেন, সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে আগে ছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রতি কেন্দ্রের ‘আর্থিক বঞ্চনা’। ছিল মূল্যবৃদ্ধি, কৃষকদের জন্য সারে ভর্তুকি, মণিপুরের হিংসার মতো বিষয়ও।

তার পরেই বৃহস্পতিবার মমতার বক্তব্য দলের একটি অংশের কাছে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ মনে হয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, কোনও ‘ব্যক্তি’ সংসদে দলের অবস্থান ঠিক করবেন না। এবং পাশাপাশিই আরও এক বার জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিই সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন। যে পাঁচ জনের নাম তিনি বলেছেন, তাঁরা ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মমতা তাঁদের পরামর্শ দেবেন। দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর এই বক্তব্য শোনার পরে শাসক শিবিরের একাংশের অভিমত, মমতার বক্তব্যের লক্ষ্য ছিল অভিষেকের বুধবারের বৈঠক। তিনি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, সংসদে দলের অবস্থান অভিষেকের (ব্যক্তিবিশেষ) বিষয় নয়। তিনি যাঁদের ঠিক করে দিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরাই।

বস্তুত, ওই ঘটনাকে তাঁরা সোমবারের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চাইছেন। যেমন, ওই বৈঠকের পরে মন্ত্রী তথা দলের নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অভিষেককে ‘দিল্লির মুখপাত্র’ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। ওই তালিকায় আরও পাঁচ জনের সঙ্গে অভিষেকের নাম ছিল। বাকিরা ছিলেন ডেরেক, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, কীর্তি আজাদ, সুস্মিতা দেব এবং সাগরিকা। বিষয়টি জানাজানি হতেই অভিষেকের ঘনিষ্ঠমহল থেকে জানানো হয়, তাঁকে ‘দিল্লির মুখপাত্র’ করা হয়নি। তাঁকে বলা হয়েছে, জাতীয় রাজনীতি এবং সংসদে যা যা হবে, তা দেখতে। দাবি করা হয়, মমতা বৈঠকে ‘মুখপাত্র’ শব্দটি অভিষেক সম্পর্কে বলেননি। চন্দ্রিমার বক্তব্যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ তৈরি হয়েছে। সেই বক্তব্য অনুযায়ীই অভিষেক বুধবার ওই বৈঠক করেছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি।

তবে দলের অন্য একাংশের আবার বক্তব্য, বুধবারের বৈঠকে অভিষেক বলেছিলেন, দলের কেউ যেন ‘ব্যক্তিগত’ উদ্যোগে সংসদে কোনও মুলতুবি প্রস্তাব না আনেন। যা হওয়ার, তা দলগত ভাবেই করা হবে। দলনেত্রী মমতাও সেই কথাই বলতে চেয়েছেন। তিনিও বলতে চেয়েছেন, সংসদে দলীয় অবস্থান ‘ব্যক্তিগত’ হতে পারে না। সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু থেকেই আদানিকাণ্ড নিয়ে উত্তাল। ক্ষোভ-বিক্ষোভে প্রায় রোজই পুরো অধিবেশন বানচাল হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল চাইছে, সংসদ যাতে সচল থাকে। হট্টগোল করে মুলতুবি করে দেওয়ার পক্ষে নয় বাংলার শাসকদল। বরং সংসদে বাংলার দাবি-দাওয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলিই বেশি বেশি করে তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল। কংগ্রেস-সহ বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা যে ভাবে হট্টগোল করছে, দফায় দফায় সংসদ মুলতুবি হয়ে যাচ্ছে, তৃণমূল তা চাইছে না বলেই বার্তা দেওয়া হয়েছিল সংসদীয় দলের বৈঠকে। অনেকের মতে, সেই কারণেই কক্ষ সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গেও ‘কৌশলী দূরত্ব’ রাখছে তৃণমূল। সেই সমস্ত দিকের কথা বিবেচনা করেই মমতা ‘দলগত’ অবস্থানের উপর জোর দিতে চেয়েছেন বলে মত তৃণমূলের ওই অংশের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy