ফাইল চিত্র।
দলত্যাগ-বিরোধী আইনে এ বার বর্ধমানের (পূর্ব) সাংসদ সুনীল মণ্ডলের পদ খারিজের দাবি জানাল তৃণমূল। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে এই দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। লোকসভার দলত্যাগী সাংসদের ক্ষেত্রে সুদীপবাবুরা এই চিঠি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া বিধায়কদের বেলায় একই প্রক্রিয়া কার্যকর হবে না কেন? বাম ও কংগ্রেস থেকে যে বিধায়কদের তৃণমূল দলে নিয়েছে, তাঁরাই বা বিধায়ক-পদ ছাড়েননি কেন? এই প্রশ্নে সরব হয়েছেন বিরোধী নেতারা। দলত্যাগী বিধায়কদের ‘মীরজাফর’ বলে আক্রমণ করলেও তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে পারছে না শাসক দল।
লোকসভার স্পিকারকে দেওয়া সুদীপবাবুর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি-র পক্ষ থেকে বারবার চেষ্টা করা হচ্ছে দুর্নীতি, ঘুষ, অন্যায় প্রভাব এবং অন্যান্য বেআইনি উপায়ে তৃণমূল সদস্যদের বার করে আনার’। এর পরেই ১৯ ডিসেম্বরের অমিত শাহের জনসভার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘সেখানে নিজের থেকেই তৃণমূলের সদস্যপদ ছেড়ে সুনীল মণ্ডল বিজেপি যোগ দেন এবং একতরফা তৃণমূল-বিরোধী যে সব মন্তব্য করেন, তার রিপোর্ট চিঠির সঙ্গে দেওয়া হল’।
তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার পরেই পুরনো দলের বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করেছিলেন সুনীলবাবু। কাঁকসায় রবিবারও তিনি দাবি করেছেন, আগামী দিনে জোড়াফুল শিবির ১৬ জন সাংসদ বিজেপি-তে যোগ দেবেন এবং বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল তিন নম্বরে নেমে যাবে! এর পরেই তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে উদ্যত হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সুনীলবাবুর দলত্যাগ অবশ্য এই প্রথম নয়। ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক থাকাকালীন রাজ্যসভার ভোটে তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন তিনি, পরে যোগ দেন তৃণমূলে। বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্র থেকে ২০১৪ সালে তৃণমূলের সাংসদ হন। এখন আবার তৃণমূলে ‘বেসুরো’ হয়ে শেষ পর্যন্ত শাহের উপস্থিতিতে মেদিনীপুরে বিজেপি-তে যোগ দেন।
সুদীপবাবু চিঠিতে সুনীলবাবুর সাংসদ-পদ খারিজের যে দাবি তুলছেন, তাকে স্বাগত জানিয়েই বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগ এনেছেন। সুজনববাবুর বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল ছেড়ে যে বিধায়কেরা বিজেপিতে গিয়েছেন, তাঁদের তা হলে কী হবে? অন্য দল থেকে তৃণমূল যাঁদের দলে নিয়েছে, তাঁদের পদ-খারিজের প্রক্রিয়ারই বা কী হল? এক এক জায়গায় এক এক রকম নিয়ম!’’ মান্নান বলেন, ‘‘সৎসাহস থাকলে তৃণমূল নেত্রী এখানে কংগ্রেস ও বাম দল ছেড়ে যাওয়া বিধায়কদের পদত্যাগ করতে বলতেন!’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, দলত্যাগী সুনীলবাবুর সাংসদ-পদ খারিজের জন্য লোকসভায় আবেদন জানালেও ‘মীরজাফার বিধায়ক’দের বিষয়টি নিয়ে পরিষদীয় আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না শাসক দল। সাম্প্রতিক অতীতে তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচিত ৬ বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একমাত্র শুভেন্দু অধিকারীই নিজের সব পদ ছেড়েছেন। কিন্তু দলত্যাগ-বিরোধী আইনে বাকিদের বিধায়ক-পদ খারিজের আবেদন নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে তৃণমূল। আইনি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে দলের এক শীর্ষ নেতা অবশ্য বলেন, ‘‘এ নিয়ে দলে কোনও আলোচনা হয়নি। তা ছাড়া, চলতি বিধানসভার মেয়াদ প্রায় শেষ। ক’মাস পরে তাঁদের বিচার মানুষ করবেন।’’ চলতি বিধানসভা তো বটেই, তার আগেও অন্য দল থেকে বিধায়কদের দলে নিয়ে সাংগঠনিক পদও দিয়েছে তৃণমূল। শুভেন্দুর আগে অজয় দে এবং আরও আগে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরুণাভ ঘোষের মতো কয়েক জন দলত্যাগের সঙ্গে বিধায়ক-পদও ছেড়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy