Advertisement
E-Paper

দলের প্রবীণ সাংসদের আচরণে মর্মাহত! হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ ছাড়লেন তৃণমূলের মহিলা সাংসদ, চিঠি লিখছেন মমতাকে

তৃণমূলের সংসদীয় দল সূত্রের খবর, ওই মহিলা সাংসদ নয়াদিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় সংশ্লিষ্ট প্রবীণ সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কয়েক জন মিলে তা তখনকার মতো সামাল দিয়েছেন।

TMC Woman MP lefts Lok Sabha WhatsApp group after senior TMC MP\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s behavior

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৫
Share
Save

লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলের অন্দরে নতুন বিতর্ক। দলের এক প্রবীণ সাংসদের আচরণে হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন এক মহিলা সাংসদ। বস্তুত, ওই প্রবীণ সাংসদের আচরণে মর্মাহত মহিলা সাংসদ গোটা বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মমতা তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন। ঘটনাচক্রে, দলের অন্দরে ওই প্রবীণ সাংসদ মমতার ‘ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন’ বলেই পরিচিত। সংশ্লিষ্ট মহিলা সাংসদ মমতাকে লেখা চিঠির প্রতিলিপি দলের সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠাচ্ছেন বলেও খবর।

ঘটনাটি নিয়ে তৃণমূল সংসদীয় দলের অন্দরে আলোড়ন পড়েছে। সেই আলোড়ন এতটাই যে, কেউই প্রকাশ্যে তা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। সংশ্লিষ্ট মহিলা সাংসদও কোনও কথা বলতে চাননি। তিনি ফোন তোলেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি।

ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার। ওই দিন নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তৃণমূলের সংসদীয় দল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্মারকলিপিতে প্রতিনিধিদের সইয়ের জায়গায় ওই মহিলা সাংসদের নাম ছিল না, যা নিয়ে তিনি তীব্র আপত্তি তোলেন। কারণ, তিনি অন্য সাংসদ প্রতিনিধিদের কাছে জানতে পারেন, তাঁদের দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই স্মারকলিপিতে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে সই করানো না-হলেও তাঁকে শুক্রবার প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসাবে কমিশনে যেতে বলা হয়েছে। তখনকার মতো ওই মহিলা সাংসদকে বলা হয়, তাঁর নাম হাতে লিখে দেওয়া হচ্ছে। তখনই ওই প্রবীণ সাংসদ মহিলা সাংসদের উদ্দেশে কটূক্তি করতে শুরু করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয় যে, কমিশনের ফুটপাথে প্রহরারত বিএসএফ এবং সিআইএসএফ জওয়ানদের ওই মহিলা সাংসদ প্রবীণ সাংসদকে গ্রেফতার করতে বলেন। কারণ, তিনি মহিলা সাংসদের সঙ্গে ‘দুর্ব্যবহার’ (অ্যাবিউসিভ বিহেভিয়র) করেছেন। তখন তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের বাকি সাংসদেরাও সেখান হাজির। তাঁরাও খানিকটা হতবাক হয়ে যান। এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘প্রবীণ সাংসদকে বুঝিয়েসুঝিয়ে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজ্যসভার এক সাংসদ তাঁকে নিরস্ত হতে বলেন। কিন্তু প্রবীণ সাংসদ থামতে রাজি হচ্ছিলেন না। কমিশনের ভিতরে ঢুকেও তিনি বলতে থাকেন, তিনি কোনও কোটায় সাংসদ হননি বা অন্য কোনও দল থেকে এসে তৃণমূলে যোগ দেননি!’’

তৃণমূল সংসদীয় দল সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট মহিলা সাংসদ নয়াদিল্লির পার্লামেন্ট স্ট্রিট থানায় ওই প্রবীণ সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কয়েক জন মিলে তা সামাল দেন। তবে দু’-এক জন সাংসদ মহিলা সাংসদকে জানিয়েছেন, তিনি পুলিশে অভিযোগ করলে এবং পুলিশ তাঁদের কাছে ঘটনার কথা জানতে চাইলে তাঁরা যা ঘটেছে, তা-ই বলবেন। যদিও এখনও পর্যন্ত বিষয়টি থানাপুলিশে গড়ায়নি।

এতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রবীণ সাংসদ। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, সিপিএম বা বিজেপি কোনওদিন তাঁকে গ্রেফতার করানোর হুমকি দিতে পারেনি! সেখানে তাঁরই দলের এক মহিলা সাংসদ তাঁকে বিএসএফের হাতে গ্রেফতার করানোর হুমকি দিচ্ছেন! এই অপমান ‘নজিরবিহীন’। প্রবীণ সাংসদের হিতৈষীরা জানাচ্ছেন, গোটা ঘটনাটি তিনি দলনেত্রীকে আগেই জানিয়েছেন। ওই সাংসদের ক্ষোভ, যাঁরা তাঁর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা সকলে তৃণমূলের ‘সুসময়ে’ দল করতে এসেছেন। তাঁর মতো সিপিএমের সঙ্গে লড়াইয়ের ‘দীর্ঘমেয়াদী ইতিহাস’ সকলের নেই। কিন্তু সেই সিপিএমও তাঁকে গ্রেফতার করানোর ‘হুমকি’ দেয়নি।

তবে তার পর থেকেই ওই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের সাংসদদের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপে বাগ্‌যুদ্ধ শুরু হয়। ওই প্রবীণ সাংসদ মহিলা সাংসদের উদ্দেশে নাম না করে লেখেন, তিনি ‘অপ্রয়োজনীয় নাটক তৈরি করেছেন’। ওই মহিলা সাংসদকে তিনি ‘ভার্সেটাইল ইন্টারন্যাশনাল লেডি’ বলেও বর্ণনা করেন। সঙ্গে নিজেকে ‘ফুলিশ ম্যান’ বলে বর্ণনা করে লেখেন, তিনি সঙ্কটের সময়ে ওই মহিলা সাংসদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যিনি এখন তাঁকে বিএসএফ-কে দিয়ে গ্রেফতার করাতে চাইছেন! এর পরেই প্রবীণ সাংসদের সঙ্গে প্রকাশ্য গ্রুপে এক নতুন সাংসদের বাদানুবাদ শুরু হয়। সেই বাদানুবাদের কিছু ‘স্ক্রিনশট’ পড়ে মনে হয়েছে, ঘটনা যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে দলনেত্রী মমতার হস্তক্ষেপ কার্যত অবধারিত হয়ে পড়তে পারে।

প্রবীণ সাংসদ নতুন সাংসদের উদ্দেশে লেখেন, তিনি যেন তাঁকে পরামর্শ দিতে না-আসেন। নতুন সাংসদ তাঁর চেয়ে বয়সে ছোট। ‘দলের অন্দরে রাজনাীতি’ করতে নতুন সাংসদ ‘ক্যাপ্টেন’। সেই কারণেই তাঁকে তাঁর আগের দল থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল। একটি স্বশাসিত সংস্থার নির্বাচনে নতুন সাংসদের পরাজয় নিয়েও কটাক্ষ করেছেন ওই প্রবীণ সাংসদ। নতুন সাংসদকে চ্যালেঞ্জ করে প্রবীণ সাংসদ লিখেছেন, তিনি দেখতে চান নতুন সাংসদের কত ক্ষমতা যে, তিনি তাঁর বন্ধুর (মহিলা সাংসদ) জন্য তাঁকে (প্রবীণ সাংসদকে) গ্রেফতার করাতে পারেন। নতুন সাংসদের লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে তিনি তাঁর (নতুন সাংসদের) মুখোশ খুলে দেবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন প্রবীণ সাংসদ।

জবাবে নতুন সাংসদ লিখেছেন, প্রবীণ সাংসদ যেন ‘কিশোর অপরাধীসুলভ’ কাজকর্ম না করেন। তাঁকে দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) যে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন, তা বলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে। প্রবীণ সাংসদ যেন ঠান্ডা মাথায় বিষয়টি ভেবে দেখেন। যেন ‘শিশুসুলভ এবং অসংযত’ আচরণ না করে ‘প্রাপ্তবয়স্কসুলভ’ ব্যবহার করেন। নতুন সাংসদ প্রবীণকে আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, প্রবীণ তাঁর চেয়ে বয়সে বড় হতে পারেন, কিন্তু রাজনীতিতে নয়। পাশাপাশিই জানিয়েছেন, প্রবীণের সঙ্গে তাঁর কোনও শত্রুতা নেই।

প্রবীণ সাংসদ কখনও সাংসদদের গ্রুপে লিখেছেন, তিনি দিল্লিতে আছেন। কিন্তু ‘ইন্টারন্যাশনাল ব্রেভ লেডি’ তাঁকে গ্রেফতার করাতে পারেননি। তার পর আবার লিখেছেন, তিনি কলকাতায় পৌঁছেছেন। সংশ্লিষ্ট মহিলা সাংসদের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘যোগাযোগ’ ব্যবহার করে যেন তাঁকে গ্রেফতার করতে কলকাতায় বিএসএফ এবং দিল্লি পুলিশকে পাঠানো হয়।

যাঁদের নিয়ে তৃণমূলের সংসদীয় দলের অন্দরে ওই বিতর্ক, তাঁরা দু’জনেই একাধিক বার ভোটে জিতেছেন। নানা কারণে অতীতেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। তৃণমূলের সংসদীয় দলের অভ্যন্তরে অতীতে নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সে সব নিয়ে দলের মধ্যে নানা সমীকরণও তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু এ-হেন ঘটনা এই প্রথম বলেই দাবি নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াকিবহালদের। গত শুক্রবার যখন নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরের সামনের রাস্তায় ওই ঘটনা ঘটছে, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন কয়েক জন রাজ্যসভার সাংসদও। তাঁদেরই এক জন ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম ঠাট্টা-মশকরা। কিন্তু সেটা যে ওই জায়গায় যাবে, তা ভাবতে পারিনি।’’ উল্লেখ্য, রাজ্যসভার ওই সাংসদের সংসদীয় রাজনীতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নেই। প্রত্যাশিত ভাবেই তিনি ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গিয়েছেন।

তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, বিষয়টি আগেই দলনেত্রী তথা সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন মমতার গোচরে পৌঁছেছে। এখন দেখার, মহিলা সাংসদ তাঁকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানালে তিনি কী বিহিত করেন।

CM Mamata Banerjee TMC TMC MP Whatsapp Group

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।