বিজেতা: ফল প্রকাশের পরে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও দিব্যেন্দু অধিকারী। দক্ষিণ কাঁথিতে। —নিজস্ব চিত্র
বাম ভোটে ধ্বস নামিয়ে কাঁথি দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল বিজেপি। এক বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোটের তরফে সিপিআই প্রার্থী প্রায় ৩৫% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন। সেখানে তৃতীয় স্থানাধিকারী বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন প্রায় ৯% ভোট। আর বৃহস্পতিবার উপনির্বাচনের ফলে দেখা গেল, বিজেপি প্রায় ৩১% ভোট পেয়েছে। সিপিআই এবং কংগ্রেস এই উপনির্বাচনে আলাদা প্রার্থী দিয়েছিল। তারা যথাক্রমে ১০% এবং ১% ভোট পেয়ে জামানত খুইয়েছে।
উপনির্বাচনের ফল থেকে গোটা রাজ্যের জনরায়ের ধারা আন্দাজ করা যায় না ঠিকই। কিন্তু এ দিনের ফল দেখে অনেক পর্যবেক্ষকেরই মত, বাংলায় এই মুহূর্তে বিজেপি-ই হয়ে উঠেছে প্রধান বিরোধী শক্তি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী তো আমাদের সারা ক্ষণ আক্রমণ করে দ্বিতীয় স্থানে এনেই দিয়েছিলেন। কাঁথি দক্ষিণে সেটা মানুষও প্রমাণ করে দিলেন।’’
কাঁথি দক্ষিণে বিজেপির সংগঠন মোটেই শক্তিশালী নয়।সে কথা মেনে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, দলের এই উত্থান বাম কর্মী ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত রায়ের ফসল। কারণ, বাম কর্মীরা এবং সাধারণ মানুষ তৃণমূলের সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ। কিন্তু তাঁরা দেখছেন, বাম দলগুলি তৃণমূলের মোকাবিলায় বা সন্ত্রাসে ঘরছাড়াদের আশ্রয় দিতে অপারগ। তাই কেন্দ্রের শাসক দলের কাছে ভরসা খুঁজছেন তাঁরা। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, কাঁথি দক্ষিণে বেশির ভাগ বুথেই পোলিং এজেন্ট দেওয়ার শক্তি তাদের ছিল না। কিন্তু বহু বাম কর্মী স্বেচ্ছায় বুথে বুথে পোলিং এজেন্ট হয়ে বসেছেন। ফলে গ্রামের দিকে গোটা ১৫ বুথ ছাড়া আর সব বুথেই এজেন্ট দেওয়া গিয়েছে। শহরেরও প্রায় ৬০% বুথে এজেন্ট ছিলেন।
রং বদলাচ্ছে কাঁথিতে
২০১৭ শতাংশে ২০১৬ শতাংশে
• টিএমসি ৯৫,৩৬৯ ৫৫.৮৯ ৯৩,৩৫৯ ৫৩.৭১
• বিজেপি ৫২,৮৪৩ ৩০.৯৭ ১৫,২২৩ ৮.৭৫
• সিপিআই ১৭,৪২৩ ১০.২১ ৫৯,৪৬৯ ৩৪.২১
রাজ্য বিজেপির দাবি, তৃণমূলের সংখ্যালঘু তোষণের ফলে করায় ধর্মীয় মেরুকরণ হয়েছে। সম্প্রতি হইহই করে গেরুয়া শিবিরের রামনবমী পালন তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে। মেরুকরণের সুফল মিলেছে ভোটবাক্সে।
কিন্তু এমন সুদিন রাজ্যে বিজেপির আগেও এসেছে। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে বসিরহাট দক্ষিণে ধূমকেতুর মতো উত্থান হয়েছিল শমীক ভট্টাচার্যের। পরে ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জিতেওছিলেন তিনি। কিন্তু তার পরে সারদা নিয়ে সিবিআই তদন্তের গতি ঢিমে হয়ে যাওয়ায় তৃণমূল-বিজেপি সখ্য নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ মান্যতা পায়। ফলে সেই হাওয়া বিজেপি ধরে রাখতে পারেনি। এ বার তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ— বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখা এবং কাছে আসা বাম কর্মীদের সংগঠনের কর্মীতে পরিণত করা।
আরও পড়ুন:নতুন বছরে রদবদল সংগঠনে, মন্ত্রিসভাতেও
তৃণমূল অবশ্য দেখাতে চাইছে, বিজেপির উত্থানে তারা মোটেই চিন্তিত নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘বামের ভোট রামে।’’ আর অস্তাচলের মুখে দাঁড়িয়ে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে এক জোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র এবং অধীর চৌধুরী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy