শিলিগুড়িতে সবুজ ঝড়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন বামেরা। —নিজস্ব চিত্র।
দীর্ঘ ৪০ বছরের বাম দুর্গ ভেঙে চুরমার! বামেদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবেই বরাবরই পরিচিত ছিল শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ। রাজ্যে বামেদের ভরাডুবির সময়ও এই মহকুমা পরিষদের দখল তাঁদের হাতে ছিল। তবে এ বার সবুজ ঝড়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল লাল দুর্গ।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে ৯টি আসন রয়েছে। ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতিতে রয়েছে ৬৬টি আসন। ২২টি পঞ্চায়েতে রয়েছে ৪৬২টি আসন। বুধবার গণনানর পর দেখা গেল, সবেতেই তৃণমূলের জয়জয়কার।
মহকুমার ৯টি আসনের মধ্যে ৮টির দখল নিয়েছে তৃণমূল। বাকিটিতে জয়ী হয়েছে বিজেপি। তবে জোড়াফুল শিবিরের এই জয়েও হেরে গিয়েছেন মহকুমা পরিষদের বিদায়ী বিরোধী দলনেতা তথা তৃণমূলের প্রভাবশালী নেতা কাজল ঘোষ। খড়িবাড়ি আসনে বিজেপি প্রার্থী অজয় ওঁরাওয়ের কাছে পরাজিত হন তিনি।
মহকুমা পরিষদের ৪টি পঞ্চায়েত সমিতির সবক’টির দখল নিয়েছে তৃণমূল। ৪টি পঞ্চায়েত সমিতির ৬৬টির মধ্যে ৫৫টি আসন তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে। অন্য দিকে, বিজেপি ৯টি আসনের দখল নিয়েছে। ২টি আসনে নির্দল।
পঞ্চায়েতের আসনগুলিতেও সবুজ ঝড় দেখা গিয়েছে। ২২টি পঞ্চায়েতে ১৯টি আসনে জয়ী তৃণমূল। বাকি ৩টি আসন ত্রিশঙ্কু হয়েছে। সেগুলি হল, ফাঁসিদেওয়া ব্লকের জালাস নিজাম তারা এবং চটহাট, মাটিগাড়া ব্লকের পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত। ২২ টি পঞ্চায়েতের ৪৬২টি আসনে তৃণমূলের ঝুলিতে এসেছে ৩২০ আসন। বিজেপি জিতেছে ৮৬টি আসন। বামেদের ১৫, কংগ্রেসের ২১টি আসন জয় এসেছে। নির্দলদের দখলে রয়েছে ২০টি আসন।
মহকুমা পরিষদের জয়ের পর দার্জিলিং জেলা তৃণমূলের সভাপতি (সমতল) পাপিয়া ঘোষ বলেন, ‘‘এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি একাই একশো। এ লড়াই মোটেই কঠিন ছিল না। তবে আমাদের মাথার উপর ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই জয় জনমুখী প্রকল্পের জয়। খেটেখাওয়া মানুষের জয়। বুথ থেকে বুথস্তরের সমস্ত কর্মীদের ধন্যবাদ জানাই।’’ ভোটের সময় টিকিট না পেয়ে যাঁরা নির্দল হয়ে লড়াই করেছেন, তাঁদের দলে ফেরানো হবে কি না, সেটি রাজ্য নেতৃত্বের বিবেচ্য বলেও জানিয়েছেন তিনি। বাম দুর্গ ভেঙে চুরমার করার পর পাপিয়ার দাবি, ‘‘বামেরা বার বার মানুষকে ভুল বুঝিয়েছেন। মানুষের আশীর্বাদ নিয়েও তাদের কিছুই দিতে পারেনি।’’
এই পরাজয়ের পর নিজেদের দুর্বলতা পর্যালোচনা করার কথা বলেছে বামেরা। দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচনে আমাদের ফল যে ভাল হবে না, তা আগেই অনুমান করছিলাম আমরা। যে ভাবে তৃণমূল এবং বিজেপি ক্ষমতা ব্যবহার করে অর্থ ঢেলেছে, তাতে আমাদের ফল ভাল হবে না, সে অনুমান ছিল। কিন্তু এতটা খারাপ হবে তা-ও ভাবিনি। এটা একটা বিপর্যয়। কোথায় কী সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিল, তা আমরা পর্যালোচনা করব।’’
তৃণমূলের জয়ের পিছনে ‘ছাপ্পা ভোটের অবদান’ রয়েছে বলে দাবি বিজেপির। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা মাটিগাড়া নকশালবাড়ি বিধায়ক আনন্দময় বর্মণের কথায়, ‘‘ভোট শান্তিপূর্ণ বা অবাধ হয়নি। ছাপ্পা ভোট পড়েছে। রিগিং হওয়ার পরেও যেখানে শান্তিতে ভোট হয়েছে, সেখানে ভাল ফলাফল করেছে বিজেপি। প্রধান বিরোধী দল হিসেবে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদেও প্রবেশ করলাম আমরা। গঠনমূলক ভূমিকা পালন করব। ভোট শান্তিপূর্ণ হলে আরও ভাল ফলাফল করতাম। ওরা মদ, মাংস, ভয়, প্রলোভন দেখিয়ে ভোট করিয়েছে। তবে মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy