ছবি: পিটিআই।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের হাওয়া গরম হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল-বিতর্ক নিয়ে। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সামনে সর্বদলীয় বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দাবি, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কার্যকলাপে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ধ্বংস হচ্ছে। অবিলম্বে নয়াদিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর আচরণের কৈফিয়ৎ চাওয়া হোক।
কেন্দ্রই বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপাল নিয়োগ করে থাকে। সে ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা থাকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। আজ তাই খোদ অমিত শাহের সামনে রাজ্যপালকে নিয়ে অভিযোগ জানানোর বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। সংসদীয় অধিবেশন শুরুর আগের দিন প্রথামাফিক প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকে আগাগোড়া উপস্থিত ছিলেন অমিত। পরে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তৃণমূলের সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।
বৈঠকের পরে ডেরেক বলেছেন, ‘‘স্পষ্ট ভাষায় আজ জানানো হয়েছে যে, রাজ্যপালের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহযোগিতা করতে অনিচ্ছুক নয়। কিন্তু রাজ্যপাল একের পর এক কাজকর্ম করে চলেছেন রাজ্য সরকারকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে। তাঁর কাজ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মূল সুরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সংবিধান অনুযায়ী যে কাজকর্ম চলার কথা, তা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে সুদীপবাবুর আবেদন, কেন্দ্র ডেকে পাঠিয়ে জবাবদিহি চাক রাজ্যপালের কাছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যপালের কল্যাণ তহবিলের টাকা চিকিৎসার জন্য নয়, এ বার বললেন ধনখড়
আরও পড়ুন: কেন্দ্রকে বুলবুলে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব দিল রাজ্য, কাটমানি নেবে তৃণমূল, খোঁচা দিলীপের
সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ (বাঁ দিকে) এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। রবিবার সংসদে। ছবি: পিটিআই।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, তৃণমূলের এই অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও গোটা বিষয়টি মন দিয়ে শুনেছেন অমিত। যে-হেতু প্রধানমন্ত্রী পরে ঢুকেছেন, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী বিরোধীদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে তা মোদীর হাতে তুলে দেন। বৈঠকেই মোদী বিরোধীদের জানিয়েছেন যে, তিনি এই নোটটি পড়ে দেখবেন। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, সংসদের দু’টি কক্ষেই রাজ্যপাল প্রসঙ্গ তোলা হবে। কী ভাবে এবং কোন ধারায় তা তোলা হবে সে ব্যাপারে কৌশল স্থির করা হচ্ছে। ডেরেকের কথায়, ‘‘আজকের বৈঠকে আমরাই একমাত্র বিরোধী দল, যারা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি বেকারত্ব, দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা, এবং কৃষকদের সঙ্কট নিয়ে সংসদে বিতর্কের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’’
সম্প্রতি সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম নিয়ে রাজ্যপালের কিছু মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় তৃণমূলে। যার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কেউ কেউ আছেন, যাঁরা বিজেপির মুখপাত্রের মতো আচরণ করছেন। আমাদের রাজ্যেও এক জন রয়েছেন। তাঁরা সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন।’’ তার পর নাম না-করে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ‘‘কোনও কোনও সময়ে কেউ (রাজ্যপাল) কেন্দ্রকেও ছাপিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এটা দেখা উচিত।’’ প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকার সম্পর্কে আগেও একাধিক মন্তব্য নিয়ে রাজ্যপালকে ‘বিজেপির লোক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন মমতা।
আগামিকাল লোকসভায় এবং রাজ্যসভায় রয়েছে বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক। সেখানেই সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হবে, কোন কোন বিল আগামী সপ্তাহে আসছে এবং তা নিয়ে আলোচনার জন্য কত সময় ধার্য করা হচ্ছে। তবে যে বিলটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক এবং বাদানুবাদের সম্ভাবনা, তা হল নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিল। গত লোকসভায় বিলটি পাশ হলেও রাজ্যসভায় সরকার পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকায় বিলটি পেশই করা হয়নি। কিন্তু এ বার রাজ্যসভাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা জোগাড়ের পক্ষে আশাবাদী সরকার পক্ষ। অন্য দিকে, এই বিলটি আনার প্রতিবাদে সোমবার থেকে গুয়াহাটি-সহ উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যের রাজধানীতে শুরু হচ্ছে বিক্ষোভ কর্মসূচি। সংসদে এই নিয়ে বিরোধীরা কী ভাবে প্রতিবাদ জানাবে, তা এখনই প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আগামী তিন দিন এই নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করবে না সরকার। মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক গতিবিধির দিকেই নজর থাকবে বিজেপি নেতৃত্বের। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে নিজেদের কৌশল আপাতত আস্তিনের মধ্যেই রাখতে চাইছেন বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy