গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে কড়া বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: পিটিআই
নদিয়া জেলা সফরে গিয়ে জেলা নেতৃত্বকে সতর্ক করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরের প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে এমনই বার্তা দিলেন তিনি। ‘ইগো’ নিয়ে দলে যে কাজ করা যাবে না তা বুধবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রী। এমনকি, যিনি ঝগড়া করবেন তাঁর সঙ্গে তিনি সম্পর্ক রাখবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।
বুধবার মমতা জেলা শহরে থাকাকালীন করিমপুরের লক্ষ্মীপুরে মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খানের অনুগামীদের গাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে দলেরই অন্য একটি অংশের বিরুদ্ধে। দলনেত্রী ওই ঘটনা নিয়ে জনসভা থেকে নির্দিষ্ট কোনও বার্তা দেন কি না, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল। মমতা দলীয় নেতা-কর্মীদের জনসভা থেকে বার্তা দেন, ‘‘নদিয়া জেলার সংগঠন ভাল করে করতে হবে। একটা কথা বলে যাই, আমাদের বিধায়করা নিজেদের মধ্যে কোনও ঝগড়াঝাঁটি করবেন না। যিনি ঝগড়াঝাঁটি করবেন তাঁকে আমি দলে রাখব না।’’ এর পরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘কে বড়? আমি না মানুষ? মানুষ না থাকলে আমি শূন্য। প্রতীক না থাকলে আমি শূন্য। যাঁর ইগো থাকবে তিনি বাড়িতে বসে যান। কাজ করার দরকার নেই। যাঁর স্বতঃস্ফূর্ততা আছে তিনি এগিয়ে আসুন। কলকাতার সঙ্গে কার যোগাযোগ আছে তা জানার দরকার নেই। আমরা খুঁজে নেব।’’
নদিয়া জেলায় সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে একটি কো-অর্ডিনেশন কমিটিও গড়ে দিয়েছেন দলনেত্রী। সেই কমিটিতে রয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু এবং জেলার সব বিধায়ক। ওই কমিটির সদস্যদের প্রতি মমতার বার্তা, ‘‘আপনারা একসঙ্গে কাজ করবেন। আপনারা যখন যে ব্লকে যাবেন তখন সেই ব্লকের সকলকে ডেকে নেবেন। এটা তৃণমূল পরিবার। তা ভাঙা যাবে না।’’
প্রবীণ এবং নবীন প্রজন্মকে মিশিয়ে নতুন তৃণমূল তৈরি করার ঘোষণা করেছেন মমতা। দলীয় নেতৃত্বের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘আপনারা মনটাকে বড় করুন। হৃদয়ের দরজা খুলে দিন। খোলা হাওয়ায় কাজ করুন।’’ দলীয় কোন্দল মেটাতে তাঁর কড়া ঘোষণা, ‘‘যিনি ঝগড়া করবেন, আমি সোজা বলছি, তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক নেই। সে তিনি যত বড়ই হন। তৃণমূল এক হলে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস কিছুই করতে পারবে না।’’ তৃণমূলের সংগঠনের ছত্রছায়ায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে সব অংশের মানুষকে আনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
নদিয়া জেলায় ১৭টি বিধানসভা আসন। তার মধ্যে ৯টি বিজেপির দখলে এবং ৮টি এসেছে তৃণমূলের ঝুলিতে। জেলার দু’টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১টি বিজেপির। পিছিয়ে থাকা প্রতিটি জায়গায় সংগঠনে জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। দলীয় নেতৃত্বের প্রতি জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা মানুষের কাছে যান। কে সুযোগ পায়নি তা দেখুন। এখনই তো পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে না। কিন্তু এখন কাজ করার সময়। বাকি থাকা কাজ শেষ করুন।’’
মমতা তৃণমূলকে ‘মাটির কংগ্রেস’ বলেও মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘একটা-দুটো লোক ভুল করতে পারে। সকলে ভুল করে না। মা-বোনেরা বলুন, আপনাদের পাঁচটা ছেলে সমান? একটা ছেলে একটু এ দিক-ও দিক হতেই পারে। তাকে শাসন করে ভাল করতে হয়। সংশোধন করে নেওয়াটা আমাদের ধর্ম। নেতাজি বলেছিলেন, ভুল করার অধিকারও একটা অধিকার। আমি চাই তৃণমূল কর্মীরা মাথা উঁচু করে চলবে। কোনও লোভ যেন তাদের না গ্রাস করে।’’
একই সঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েও দলকে সতর্ক করে দিয়েছেন মমতা। দলনেত্রীর স্পষ্ট বার্তা, তৃণমূল কর্মীদের যেন লোভ না গ্রাস করে। তাঁর বার্তা, ‘‘লোভ করে অর্থ করা মানে সমাজে বদনাম হওয়া।’’ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের তাঁর বাঁতা, ‘‘যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকুন।’’ এই সূত্র ধরেই দুর্নীতির তিরে বিজেপিকে বিদ্ধ করেছেন তিনি। তুলেছেন মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির অভিযোগ। গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, এজেন্সিকে দিয়ে ভয় দেখালেও তিনি রাজনৈতিক ভাবে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। অর্থ যে অনর্থের মূল, পুরনো প্রবাদও বুধবার মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করে যদি একই বাড়িতে থাকতে পারি, যদি একই খাবার খেতে পারি, একই রকম জিনিস পরতে পারি, তা হলে আপনারা কেন পারবেন না! সোনার মুক্তোর মালা আমরা খাব না। আমি ৭-৮ বছর ধরে বলেছি, ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই। অর্থের মূলই হচ্ছে অনর্থ। লোভ করে অর্থ করা মানে যাঁর কাছে টাকা রাখছেন তিনিই মেরে দিচ্ছেন। সমাজে বদনাম হচ্ছে। এটা সবচেয়ে বেশি বিজেপি করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy